কে কী বলল ঠেকাব কী করে
রাহুলের কথায় অখুশি, বোঝালেন মনমোহন
(প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান থেকে)
ত ক’দিন নিজে মুখ খোলেননি। আজ আমেরিকা সফর সেরে দেশে ফেরার পথে রাহুল গাঁধীর মন্তব্য নিয়ে নিজের অসন্তোষ বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে মনমোহনের বৈঠকের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই দাগি সাংসদ-বিধায়কদের বাঁচানোর অর্ডিন্যান্স নিয়ে সরব হয়েছিলেন রাহুল। আজ ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে দিল্লি ফেরার বিমানে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “দেশে ফিরে জানার চেষ্টা করব, ওই কথাটা ওই ভাবে কেন বলতে হল।” আগামিকাল সকালেই কংগ্রেস সহ-সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু রাহুল যে ভাবে অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করেছেন, তাকে ‘ফালতু’ আখ্যা দিয়ে ছিঁড়ে ছুড়ে ফেলার কথা বলেছেন, তাতে কি তিনি বিচলিত? মনমোহনের জবাব, “কে কী বললেন, সেটা ঠেকাব কী করে। সেই নিয়ন্ত্রণ তো আমার হাতে নেই।” একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এত সহজে আমি আজকাল আর ‘আপসেট’ (বিচলিত) হই না। অনেক উত্থানপতন দেখেছি। এখন এ সবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, মনমোহন নিজে অর্ডিন্যান্স আনার পক্ষপাতী ছিলেন না, কিন্তু সনিয়া গাঁধীর কাছে গিয়ে লালুপ্রসাদ এক প্রকার কাকুতিমিনতি করার পরে এ ব্যাপারে রাজি হন কংগ্রেস সভানেত্রী। মনমোহন নিজেই এ দিন বলেছেন, “কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরে অর্ডিন্যান্স নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোর গ্রুপ ছাড়পত্র দেওয়ার পরে মন্ত্রিসভায় এক বার নয়, দু’বার কথা হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক কর্তার মতে, অর্ডিন্যান্সের যাবতীয় দায় তাঁর, এমন ধারণা নস্যাৎ করে দিতেই এই তথ্য সামনে এনেছেন মনমোহন। বস্তুত, তাঁর আপত্তি অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা নিয়ে নয়। রাহুলের মন্তব্যের সময় ও ভঙ্গি নিয়ে।
লক্ষ্যণীয়, আজ নিজের সেই অবস্থানটুকুই প্রকাশ্যে জানিয়েছেন মনমোহন। এবং সেটা যথেষ্ট বিনয়ী স্বরে। সরাসরি রাহুলের সঙ্গে কোনও দ্বৈরথে যাননি। রাহুলও অবশ্য অর্ডিন্যান্স বিতর্ক উস্কে দেওয়ার পরেই মনমোহনকে চিঠি লিখে তাঁর নেতৃত্ব এবং প্রজ্ঞার প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন। গত দু’দিন ধরে একাধিক বার মনমোহনের পাশে থাকার কথা বলেছেন সনিয়া। মনমোহনের আজকের সাংবাদিক বৈঠকের আগে তাঁর সঙ্গে বার দুয়েক কথা হয়েছে সনিয়ার। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের দাবি, রাহুলের মুখ খোলার সময় নিয়ে মনমোহন যে প্রশ্ন তুলেছেন, সনিয়া নিজেও তার বিরোধী নন।

দিল্লি ফেরার পথে সাংবাদিকদের মুখোমুখি। ছবি: পিটিআই।
এখন প্রশ্ন হল, অর্ডিন্যান্সের ভবিষ্যৎ কী। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় এখনও তাতে সই করেননি। অর্ডিন্যান্স নিয়ে তাঁর কিছু প্রশ্ন এবং আপত্তি আছে। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। তবে আগামিকালই বিদেশ সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রপতিকে কোনও অর্ডিন্যান্স সই করতে বাধ্য করিয়ে চটিয়ে দেওয়াটা কৌশলগত ভাবে উচিত কাজ নয়। যে হেতু পরের লোকসভা ত্রিশঙ্কু হলে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তবে আগামিকাল সন্ধ্যাতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার যে বৈঠক ডাকা হয়েছে, তার অন্যতম আলোচ্য বিষয় ওই অর্ডিন্যান্স। সরকারি সূত্রে খবর, মন্ত্রিসভার বৈঠকের যে নোট বিলি করা হয়েছে, তাতে অর্ডিন্যান্স নিয়ে ফের আলোচনার মূলত দু’টি কারণ দেখানো হয়েছে। প্রথমত, এই অর্ডিন্যান্স ঘিরে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, দাগি জনপ্রতিনিধিদের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের হাত থেকে রক্ষা করতেই এই অর্ডিন্যান্স আনা হয়েছে। নোটে অবশ্য এ-ও বলা হয়েছে যে, অর্ডিন্যান্সটি ভাল করে পড়লেই বোঝা যাবে যে সেটা তার উদ্দেশ্য নয়।
মনমোহন আজ বলেছেন, “আমরা কোনও স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নেই। দলের এক জন সাধারণ সদস্যেরও আপত্তি তোলার অধিকার আছে। আর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অবকাশ সব সময়ই রয়েছে। দেখা যাক হাওয়া কোন দিকে বয়।”
গত সাত দিন ধরে এই অর্ডিন্যান্স এবং রাহুলের মন্তব্যকে ঘিরে অনেক জলঘোলা দেখেছেন মনমোহন। তার উপরে তাঁকে তাড়া করেছে ‘দেহাতি অওরত’ বিতর্ক। এ দিন সাংবাদিকরা তাঁকে এই দুই বিড়ম্বনা নিয়েই প্রশ্ন করেন। দেহাতি প্রসঙ্গটি প্রথমেই নিষ্পত্তি করে দেন মনমোহন এই বলে যে, “নওয়াজ শরিফ জানিয়েছেন, তিনি ওই ধরনের কোনও কথা বলেননি।” অতএব বাকি থাকল রাহুল-প্রসঙ্গ। এবং এই প্রথম এ নিয়ে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
এমনিতে বরাবর গাঁধী পরিবারের নিবেদিত সৈনিক বলেই পরিচিত মনমোহন। নিজের কর্তৃত্ব জাহির করাটা কোনও দিনই তাঁর স্বভাব নয়। মাঝে অশ্বিনীকুমার এবং পবন বনসলকে নিয়ে বিতর্কের সময়ে সনিয়ার সঙ্গে মনমোহনের মতপাথর্ক্য চলছে বলে সংবাদমাধ্যমে অনেক হইচই হয়েছিল। কিন্তু সে সময়েও সনিয়া বা মনমোহন কখনও প্রকাশ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি। যাবতীয় জল্পনা দূরে ঠেলে দিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই।’ আগের বার মস্কো থেকে ফেরার সময়ও মনমোহন বলেছিলেন, রাহুলের সঙ্গে কাজ করতে তাঁর কোনও অসুবিধা নেই। সেই মনমোহন এ দিন এত স্পষ্ট ভাবে নিজের অবস্থান জানানোয় অনেকেই কিছুটা অবাক।
গত এক সপ্তাহ ধরে সমাজ ও রাজনীতির নানা স্তরে একটা কথাই আলোচনা হয়েছে— রাহুলের মন্তব্যের পরে মনমোহনের কর্তৃত্ব কোন তলানিতে ঠেকল। মনমোহনেরই প্রাক্তন মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বাড়ু বা মনমোহন-ঘনিষ্ঠ যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার ভাই সঞ্জীব অহলুওয়ালিয়া বলেছিলেন, এ অবস্থায় আত্মমর্যাদা নিয়ে ইস্তফা দেওয়ার কথাই ভাবছেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীর ‘অপমান’ নিয়ে সরব বিজেপি-ও। যার জবাবে খোদ সনিয়া বলেন, বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে উপহাস করতে পারেন, কংগ্রেস কিন্তু তাঁর পাশেই আছে। কলকাতায় বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহ পাল্টা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের সম্মান নিয়ে আপনি যদি সত্যিই চিন্তিত হন, তা হলে কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে হয় পদত্যাগ করতে বলুন, না হয় ক্ষমা চাইতে বলুন।” এই চাপানউতোরের প্রধানমন্ত্রী আজ দু’টো বার্তা দিলেন। এক, তাঁর কর্তৃত্ব নিয়ে যে গেল গেল রব উঠেছে, তা তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না। দুই, কিন্তু তাই বলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে একা তাঁর ঘাড়ে বন্দুক রাখা হলে মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার সম্পর্কে ভুল বার্তা যায়। নিজের স্বভাব-বিনয় ছেড়ে বেরিয়ে এসে সেই ভুলটা শুধরে দিলেন মনমোহন।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.