|
|
|
|
করজোড়, তবু ভোট-দরজা বন্ধ এক দশক
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
সংসদ তো বটেই, এক দশকের জন্য পরিষদীয় রাজনীতি থেকেও নির্বাসিত হলেন লালু প্রসাদ। আজ সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের জেল দিতেই নির্ধারিত হয়ে গেল তাঁর ভাগ্য। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমেই তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যাবে। মামলা চলাকালীন বছর দেড়েক জেল খেটে ফেলেছেন লালু। ফলে তাঁর সাজা কার্যত হবে সাড়ে তিন বছরের। সেই সময় তো বটেই, সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও ওই রায়ের প্রেক্ষিতেই ছ’বছর তিনি সংসদ, বিধানসভা বা বিধান পরিষদের ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না।
আজ দুপুর দু’টোয় ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে রাঁচির বিরসা মুন্ডা কেন্দ্রীয় কারাগারে বসেই নিজের সাজা শোনেন অবিভক্ত বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত আইনজীবীদের কাছ থেকে পরে জানা যায়, এর পরেই কার্যত ভেঙে পড়েন লালু। জোড় হাতে বিচারক প্রবাসকুমার সিংহের উদ্দেশে বলেন হুজুর আমি নির্দোষ। এত করে আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। উত্তরে বিচারক তাঁকে বলেন, “আপনি উচ্চ আদালতে যান।” লালু বলেন হুজুর, এই কেলেঙ্কারির তদন্তের নির্দেশ আমিই দিয়েছিলাম। বিচারক তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “বলছি তো, আপনি উচ্চ আদালতে যা বলার বলুন।” |
|
গত প্রায় আড়াই দশক ধরে ভারতীয় রাজনীতির এই দুঁদে নেতা আর কথা বাড়াননি। জেলের কনফারেন্স রুমের নির্দিষ্ট চেয়ারে
ছেড়ে দিয়েছেন শরীর। উচ্চ আদালতে তিনি যাবেন। আরজেডি মুখপাত্র রামকৃপাল যাদব বলেন, “লালুজি নির্দোষ। তিনি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।” তবে আপাতত নবরাত্রি এবং দুর্গাপুজোয় আদালত বন্ধ থাকায় আবেদন জানাতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আরও এক পক্ষ কাল।
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির ঘটনায় চাইবাসা ট্রেজারি মামলার রায় বেরিয়েছিল গত সোমবার। বিচারে লালু ছাড়াও বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র, জেহানাবাদের জেডিইউ সাংসদ জগদীশ শর্মা-সহ ৪৫ জন সিবিআই আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। তিন জন সে দিন শারীরিক অসুস্থতার জন্য আদালতে উপস্থিত হননি। এঁদের মধ্যে আট জনের তিন বছরের কম সাজা হয়। তাঁদের সাজা শুনিয়ে জামিনও মঞ্জুর করে দেয় আদালত। বাকিদের সাজা শোনানো হল আজ। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি বিহারের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র। তাঁর তরফে আইনজীবী আদালতে উপস্থিত থেকে মক্কেলের সাজা শোনেন।
‘স্পর্শকাতর’ চাইবাসা ট্রেজারি মামলার রায় ঘোষণার আগে, আজ সকাল থেকেই আদালত চত্বর কড়া নিরাপত্তায়
|
লালু প্রসাদ নায়ক
আছেন,
নায়কই
থাকবেন।
রাবড়ী দেবী |
মুড়ে দেওয়া হয়। ভিডিও কনফারেন্স রুমের চৌহদ্দির মধ্যে সংবাদমাধ্যম তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। সাজা শোনানোর আগে আজ সকালে সব পক্ষের আইনজীবীর মতামত শোনেন বিচারক। আদালত সূত্রের খবর, দোষী প্রমাণিত সাঁইত্রিশ জনের প্রত্যেকের তরফ থেকেই আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সকলেই নিজেদের মক্কেলের শাস্তি যথাসম্ভব কম করার আবেদন জানান।
লালুপ্রসাদের আইনজীবী শৈলেন্দ্রপ্রসাদ সিংহও বিচারকের কাছে একই আর্জি জানান। তিনি জানতেন, দু’বছরের বেশি সাজা হলেই খারিজ হবে লালুর সাংসদ পদ। নির্বাসন হবে ছ’বছরের। আইনজীবীদের বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি বলেন, “প্রবীণ এই আরজেডি নেতা এক সময় দেশের রেলমন্ত্রী ছিলেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। জনহিতে তিনি রেলের প্রচুর প্রকল্প রূপায়ণ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছে। তিনি অসুস্থ। নিয়মিত ওষুধ খান। এই মামলার সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে লালু প্রসাদ মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত।” সিবিআইয়ের আইনজীবী বিএমপি সিংহ বিচারককে এই সময় বলেন, “এত বড় কেলেঙ্কারির তদন্ত শেষ হতে সময় লেগেছে। এই ধরনের অপরাধীরা সহজে নাগালের মধ্যে আসেন না। এ ক্ষেত্রে এসেছেন। দেশের স্বার্থেই এঁদের জন্য খুব কঠিন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন আছে।”
শেষে সেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই দিলেন বিচারক।
|
পুরনো খবর: সাজা ঘোষণার আগে জেলে গীতাই ভরসা লালুর |
|
|
|
|
|