|
|
|
|
ভোটের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিরোধে না সনিয়ার
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
লোকসভা ভোট আসছে। এই সাত-আট মাসে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরামর্শ না করে অর্ডিন্যান্স জাতীয় কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে না মনমোহন সিংহ সরকার। সনিয়া গাঁধী কাল দলের কোর গ্রুপের বৈঠকে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাদের এই নির্দেশ দিয়েছেন।
দাগি জনপ্রতিনিধি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে নিষ্ক্রিয় করতে তড়িঘড়ি যে অর্ডিন্যান্স আনতে চেয়েছিল সরকার, তা নিয়ে অসন্তুষ্ট হন রাষ্ট্রপতি। তিনি ইচ্ছে করলে সেটিকে ফেরত পাঠাতে পারতেন। কিন্তু তা না করে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। নিজের বক্তব্যও জানিয়ে দেন। পরে রাহুল গাঁধী সাংবাদিক সম্মেলনে অর্ডিন্যান্স নিয়ে নিজের উষ্মা প্রকাশ করেন। শেষ পর্যন্ত গত কাল অর্ডিন্যান্স এবং বিল, দু’টিকেই প্রত্যাহার করে নেয় সরকার।
এই ঘটনাপর্বের পরিপ্রেক্ষিতেই সনিয়া কাল দলের শীর্ষ নেতাদের এই নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও কাল রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আগাম আলোচনা করেই অর্ডিন্যান্সের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
ভোট এগিয়ে আসছে। এই অবস্থায় সনিয়া মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যাতে কোনও বিষয়ে মতান্তরের আবহ তৈরি না হয়, তা দেখাটা বিশেষ জরুরি। এ বার অর্ডিন্যান্সের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি যে অবস্থান নিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি প্রতিভা পাটিলের মতো রাষ্ট্রপতি হতে চান না। পাঁচ বছরের মেয়াদে সরকার যখন যে নোট পাঠিয়েছে, কোনও প্রশ্ন না তুলে তাতে সই করে দিয়েছেন প্রতিভা। প্রণব সেটা যেমন করতে চান না, তেমনই সরকারের সঙ্গে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করাও তাঁর লক্ষ্য নয়। তিনি সংবিধান মেনে চলার পক্ষপাতী।
এ বারে অর্ডিন্যান্স সই করার ব্যাপারে দু’টি যুক্তিতে প্রণববাবুর আপত্তি ছিল। প্রথমত, নৈতিক কারণেই সংসদকে এড়িয়ে এ ধরনের অর্ডিন্যান্স না আনা বাঞ্ছনীয়। দ্বিতীয়ত, সংসদে যখন এ বিষয়ে একটি বিল পেশ করা হয়েছে, সেটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তখন সরকার একই বিষয়ে অর্ডিন্যান্স আনতে পারে না। রাষ্ট্রপতির এই আপত্তি নতুন নয়।
রাষ্ট্রপতির আপত্তির কথা জানতে পেরে সনিয়া-মনমোহন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে কপিল সিব্বল এবং সুশীলকুমার শিন্দেকে পাঠান। প্রণববাবু তাঁদের বলে দিয়েছিলেন, সংবিধানের প্রেক্ষিত মাথায় রাখলে এই অর্ডিন্যান্সে সই করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তিনি এ-ও জানিয়ে দেন, মন্ত্রিসভা যে নোট পাঠিয়েছে, তা নিয়ে তাঁর আপত্তির কথা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হোক এমনটা তিনি চান না। এখানেই প্রণববাবুর বক্তব্য ছিল: মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত লিখিত নোট হিসেবে পাঠানোর আগে যদি এক বার আমার সঙ্গে আলোচনা করে নিতেন, তা হলে এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হত না।
অর্ডিন্যান্স বা বিল পছন্দ না হলে রাষ্ট্রপতি কি সেটিকে ফেরত পাঠাতে পারতেন? সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। সেই অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রথম বার বিল ফেরত পাঠাতে পারেন। কিন্তু একই বিল সংসদ দ্বিতীয় বারের জন্য পাঠালে তখন আর সই না করে তাঁর পথ নেই। তবে কত দিনের মধ্যে বিলটি
তাঁকে সই করতে হবে, তা নিয়ে সংবিধানে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। দিল্লির রাজনীতিতে কেউ কেউ বলছেন, সেটা প্রণববাবু করতেই পারতেন। কিন্তু তাতে সমস্যা মিটত না। তিনি তাই সরকারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোরই চেষ্টা করেছেন বলে রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে খবর।
সরকারের সঙ্গে তাঁর মতভেদের কথা সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হোক, তা-ও চাননি প্রণববাবু। তিনি দৃঢ় থেকে যদি অর্ডিন্যান্সটি ফেরত পাঠাতেন, তাতে প্রচারিত হত: রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তীব্র সংঘাত চলছে সরকারের। এই ভাবে সরকারের পাঠানো নোট, অর্ডিন্যান্স বা বিল ফেরত পাঠিয়ে একাধিক বার সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম। তাতে প্রচার হয়েছে, তিনি স্বাধীনচেতা রাষ্ট্রপতি।
কিন্তু অনেকেই বলেন, সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে তিনি আসলে নিজের প্রো-অ্যাকটিভ ভাবমূর্তি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। প্রণব যে এমনটা করতে চান না, সেটা এ বারের ঘটনায় স্পষ্ট। তিনি সরকারকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরকারের বিরোধ চলছে এমন কোনও বার্তা তিনি দিতে চাননি। তাতে সরকারের অস্বস্তি আরও বেশি হত। সনিয়া-মনমোহনকে প্রণববাবু আরও জানিয়েছেন যে, তিনি কখনওই এক জন বিক্ষুব্ধ রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রতিপন্ন হতে চান না। বরং কোনও বিল পাঠানোর আগে সরকার যদি তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে নেয়, তা হলে কোনও ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে না। সংবিধান অনুসারে, রাষ্ট্রপতির কাছে কোনও নোট বা অর্ডিন্যান্স পাঠানোর আগে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু প্রণববাবুর ক্ষেত্রে সনিয়া-মনমোহন এ বার আলাপ আলোচনা করেই এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। |
|
|
|
|
|