|
|
|
|
মা বলেছে, কড়া কথা বলা ঠিক হয়নি, আসলে বয়স কম তো...
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ভাষায় ভুল ছিল, ভাবনায় নয়।
দাগি জনপ্রতিনিধিদের আসন বাঁচানোর অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহারের পরের দিন এ ভাবেই আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। তাঁর কথায়, “মা (কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী) বলেছেন, আমি যে ভাষা ব্যবহার করেছি সেটা উচিত হয়নি। আমারও পরে মনে হয়েছে, একটু কড়া কথাই বলে ফেলেছি। কিন্তু আমার আবেগটা ভুল ছিল না। আসলে বয়সটা তো কম...”
রাহুলের প্রকাশ্য বিরোধিতার জেরেই গত কাল অর্ডিন্যান্স এবং সংশ্লিষ্ট বিলটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কিন্তু তিনি যে ভাবে ওই অর্ডিন্যান্সকে ‘একেবারে ফালতু’ এবং ‘ওটা ছিঁড়ে ছুড়ে ফেলে দেওয়া উচিত’ বলে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে জলঘোলা চলছেই। রাহুলের মন্তব্যে তিনি যে ক্ষুণ্ণ তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মনমোহন সিংহ। তিনি নিজেও অর্ডিন্যান্সের বিরোধী ছিলেন। কিন্তু সনিয়ার নির্দেশেই যখন অর্ডিন্যান্স আনা হয়, তখন আর আপত্তি করেননি। তার পরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ সফরে বিদেশে থাকাকালীন রাহুল প্রকাশ্যে যে ভাবে অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করেছেন, তাতেই অসন্তুষ্ট হন প্রধানমন্ত্রী। রাহুলের ওই মন্তব্যের সূত্র ধরে বিরোধীরাও প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র কটাক্ষ করেন। তাঁরা বলেন, কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতাই যখন প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান করেন না, তখন তাঁর ইস্তফা দেওয়াই উচিত। সেটাও মনমোহনের বিড়ম্বনার আর একটা বড় কারণ হয়ে ওঠে।
রাহুলের মন্তব্য বিতর্ক ডেকে এনেছে বুঝে তৎক্ষণাৎ আসরে নেমেছিলেন সনিয়া। একাধিক বার প্রকাশ্য সভায় মনমোহনের প্রশংসা করেন তিনি। স্পষ্টই বলেন দল প্রধানমন্ত্রীর পাশে রয়েছে। পাশাপাশি, ছেলেকেও যে তিনি বুঝিয়েছেন, সেটাও বোঝা যাচ্ছিল। ২৭ সেপ্টেম্বরের ওই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরেই আমেরিকায় মনমোহনকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেন রাহুল। মনমোহন দেশে ফেরার পরে গত কাল তাঁর বাসভবনে গিয়ে কড়া মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চেয়ে এসেছেন। আর এ সবই যে মায়ের পরামর্শে, সেটা আজ নিজেই স্পষ্ট করে দিলেন তিনি। |
|
ভরসার হাত। সাবরমতী আশ্রমে স্বাধীনতা
সংগ্রামীদের সঙ্গে রাহুল। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই। |
তবে কড়া মন্তব্যের জন্য অনুতপ্ত হলেও অর্ডিন্যান্স সম্পর্কে নিজের মূল অবস্থান থেকে যে এক চুলও সরেননি, সেটাও আজ একই সঙ্গে বুঝিয়ে দিয়েছেন রাহুল। লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি দেখতে দু’দিনের সফরে গুজরাতে যাওয়া রাহুল এক ঘণ্টা আমদাবাদের সাবরমতী আশ্রম ঘুরে দেখেন। দর্শনার্থীদের খাতায় লেখেন, “এই আশ্রমে আসতে পারাটা আমার পক্ষে সব সময়ই সম্মানের। আমি গাঁধী এবং তাঁর মতাদর্শের অনুগামী।” এর পরই সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া কথাবার্তায় অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় কড়া ভাষা ব্যবহারের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে রাহুল বলেন, “আমার মত আমাকে প্রকাশ করতেই হত। সেই অধিকারও আমার রয়েছে। কংগ্রেসের একটা বড় অংশ ওটাই চাইছিল।”
শুধু বিরোধীরা নন, রাহুল যে ভাবে অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করেছেন, তাতে ইউপিএ শরিকরাও ক্ষুব্ধ। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস কোর গ্রুপের সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহারের জন্য ডাকা মন্ত্রিসভার বৈঠকে গত কাল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শরিক নেতারা। শরদ পওয়ারের এনসিপি-র তরফে বলা হয়েছে, “কংগ্রেস নেতারা রাহুলকে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা ভেবে তাঁর পিছনে পিছনে চলতে পারেন। কিন্তু আমরা তাঁর অনুগামী নই, শরিক।” অর্ডিন্যান্স প্রত্যাহার নিয়ে অসন্তোষ গোপন করেননি ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাও।
আজ সরাসরি শরিকদের সেই সমালোচনার জবাব না-দিলেও রাহুল বলেন, “আমি আমার মনের কথা বলেছি। কিন্তু তার যা প্রতিক্রিয়া হল, সেটা দেখে আমি স্তম্ভিত। যেটা ভুল তার বিরুদ্ধে বলার জন্য আমার শাস্তি হবে কেন!” তবে তাঁর অবস্থান শরিক রাজনীতির পক্ষে যে ক্ষতিকারক হয়েছে, সেটা আজ অস্বীকার করেননি তিনি। রাহুলকে আজ বলা হয়, অর্ডিন্যান্স নিয়ে তাঁর অবস্থানে জেলবন্দি লালু প্রসাদ (যাঁর দল আরজেডি বাইরে থেকে ইউপিএ-কে সমর্থন করছে) সব চেয়ে ক্ষুব্ধ হবেন। এই লালুই সনিয়ার কাছে অর্ডিন্যান্স আনার জন্য মিনতি করেছিলেন। রাহুল জবাব দেন, “হ্যাঁ আমার বক্তব্য শরিকদের সামনে বাধা তৈরি করবে।”
তবে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, এ ভাবে ভুল স্বীকারে আখেরে রাহুলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলই হল। কারণ, ভারতীয় রাজনীতিতে ঔদ্ধত্যের কোনও স্থান নেই। ভুল করলে তা স্বীকার করে নেওয়াটাই প্রশংসিত হয়। রাহুলের এ দিনের মন্তব্যের পরে কংগ্রেস এবং ইউপিএ-র মধ্যে তাঁর মর্যাদা বাড়বে বলেই দাবি করছেন ওই নেতারা। বিজেপি অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। দলীয় মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মুখ যা পোড়ার ছিল, তা তো পুড়েই গিয়েছে। এখন আর ভুল স্বীকার করে কী হবে!”
এই সব অপ্রীতিকর প্রশ্ন ধামাচাপা দিতে কংগ্রেস নেতারা এখন অর্ডিন্যান্স ও বিল নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের উপরেই দায় চাপানোর চেষ্টা করছেন। কপিল সিব্বল, কমল নাথদের অভিযোগ, এই বিল আনার আগে সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির মতো বিজেপি-র শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। সর্বদল বৈঠকেও বিজেপি বিলের পক্ষে সায় দিয়েছিল। অথচ অর্ডিন্যান্স জারির পরে তারা নীতিগত প্রশ্ন তোলার রাজনৈতিক কৌশল নেয়। বিজেপি-র অন্দরেও যে এ নিয়ে একেবারে বিতর্ক নেই, তা নয়। বিজেপি সূত্র বলছে, জেটলি মনে করেন সুষমা এই বিলের সমর্থক। সুষমা ও জেটলির মধ্যে বিবাদকে উস্কে দিতে কংগ্রেস নেতা সত্যব্রত চতুর্বেদী এ দিন মন্তব্য করেন, “লোকসভায় সুষমা স্বরাজরা এই বিল সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু রাজ্যসভায় বিজেপি ভিন্ন অবস্থান নেয়।”
আসলে রাহুলের মন্তব্যের পরে বিতর্ক যে ভাবে দানা বেঁধেছে, মনমোহন-রাহুল মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে, তাতে কংগ্রেসের ফাটলকে কাজে লাগানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি। আজ সুষমা ও জেটলি দু’জনেই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, বিল নিয়ে তাঁদের অবস্থান আসলে একই। সুষমা টুইট করে এবং জেটলি নিবন্ধ লিখে দাবি করেছেন, সরকার পক্ষের সঙ্গে যত বারই বিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তত বারই তাঁরা এর বিরোধিতা করেছেন। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই বিলটি অসাংবিধানিক। তাঁদের আরও দাবি সর্বদল বৈঠকে বিল নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি, কিছু প্রস্তাব নিয়ে কথা হয়েছিল। আর বিলটি কখনওই লোকসভায় আসেনি। ফলে সেখানে একে সমর্থনের প্রশ্নও উঠছে না।
|
পুরনো খবর: রাহুলের দাবি মেনে অর্ডিন্যান্স ‘ছিঁড়ল’ কেন্দ্র, খারিজ বিলও |
|
|
|
|
|