জ্বরে আতঙ্ক বাড়ছে শিলিগুড়িতে
ডেঙ্গি-মশার বংশবিস্তার নির্মীয়মাণ বহুতলের জমা জলে, উদ্বেগ
হু গ্যারেজ, একাধিক নির্মীয়মাণ বহুতলের জমা জল থেকেই কয়েকটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গির মশার প্রকোপ মারাত্মক আকার নিয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিলিগুড়ি পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রকাশ নগর, লিম্বু বস্তি এলাকায় তাই এখন আতঙ্কের পরিবেশ। ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে শালুগাড়া এলাকায়। ওই সব জায়গায় নির্মীয়মান বহুতলের সংখ্যাও হু হু করে বেড়ে চলেছে। অভিযোগ, ইঁট ভেজানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে নানা মাপের জল বোঝাই চৌবাচ্চা। কাজের জন্য জল রাখা হচ্ছে বড় বড় টিন এবং ফাইবারের ড্রামে। ছাদে থাকছে মুখ খোলা জলাধার। শুধু তাই নয়, ছাদ ঢালাই-র পর বালি সিমেন্টের ঘেরা দিয়ে জল ঢেলে ফেলে রাখা হচ্ছে কয়েক সপ্তাহ। ওই জলে বংশবিস্তার করছে ডেঙ্গির বাহক মশা। এলাকাবাসীদের অনেকেই জানান, পুরসভা থেকে ব্লিচিং, তেল ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন কোন কাজ হয়নি। এলাকায় গ্যারেজ থাকায় জল জমে রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি নতুন বিল্ডিং এর কাজ চলছে এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। সেখানেই জমা রয়েছে জল। তা থেকে মশা বাড়ছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়ে কাউন্সিলর দিলীপ সিংহ এ দিন বলেন, “আমরা লিম্বুবস্তি, সারুগারা এলাকায় ক্যাম্প করেছি। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।” এখনও এলাকায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রয়েছেন অনেকেই।
শিলিগুড়ি শহরের সেবক রোড, স্টেশন ফিডার রোড, বর্ধমান রোডের দুই ধারে, কিছুটা হিলকার্ট রোড এবং মাটিগাড়া নানা প্রান্তে বহুতল আবাসন ও বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের কাজ চলছে। একই অবস্থা জাতীয় সড়কের দুই পাশে মাটিগাড়া এলাকায়। সেখান থেকে ডেঙ্গির বাহক মশা বিস্তার ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকেরা। ইতিমধ্যে শহরের ৫-৭ নম্বর ওয়ার্ড, ৪১-৪৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং কিছুটা ৪৫, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এলাকাগুলিতে নির্মীয়মাণ বহুতলের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে বলে বাসিন্দারা জানাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাধারণ পরিষ্কার জলেই ডেঙ্গি বাহক মশার জন্ম। নির্মীয়মাণ বহুতলে নানা কারণে রাখা জলে মশার জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ডেঙ্গি নিয়ে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে স্বাস্থ্য দফতরকে ‘নোডাল এজেন্সি’ করে রাজ্যে একটি বিশেষ কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “ডেঙ্গির প্রকোপ শহুরে এলাকায় বেশি দেখা যায়। আমরা সরকারে থাকার সময় দেখেছি, কেবল নর্দমা, ডোবা, টায়ার বা জমা পরিষ্কার জলে নয়, নির্মীয়মাণ বহুতলে নানা কাজ মজুত করে রাখা জলেও ওই মশার জন্ম হয়। এই দিকটা না দেখা থেকে যায়। যা মারাত্মক। শিলিগুড়ির যা অবস্থা তাতে এখনই নজর দেওয়া দরকার।” অশোকবাবু জানান, স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা-প্রশাসনের উচিত নির্মীয়মাণ তো বটেই, সমস্ত বহুতলেই বিশেষ নজরদারি চালানো। সেই সঙ্গে শহর জুড়ে মাইকিং, পোস্টার, ব্যানার, ফ্লেক্স-এর মাধ্যমে প্রচার, সচেতনতা অভিযান চালানো দরকার। যা এখনও শিলিগুড়িতে কার্যত চোখেই পড়ছে না। এই ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার ডেঙ্গি নিয়ে কাজ করা দক্ষ অফিসার, কর্মী রয়েছেন। তাঁদের শিলিগুড়িতে এনে কাজে লাগানো যেতে পারে। এর পাশাপাশি, প্রচারের জন্য শহরের স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের কাজে লাগানো যেতে পারে।
আশঙ্কার কথা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক। তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে পুরসভাকে নির্মীয়মাণ বহুতল, গ্যারাজের ব্যাপারে বলেছি। কাজটা পুরসভাকেই করতে হবে। প্রয়োজনে এ জন্য জরিমানাও করা যেতে পারে।” একই মত প্রকাশ করে প্রচার অভিযানের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান শিলিগুড়ির মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন, “ডেঙ্গির বাহক মশার উৎপত্তির সম্ভাব্য কারণ, এলাকা ধরে ধরে আলোচনা হয়েছে। বহুতলের বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদার, প্রোমোটারদের এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। জল কোনও ভাবেই জমিয়ে রাখা যাবে না। পাশাপাশি, আমরাও প্রচার শুরু করেছি। বাসিন্দাদেরও আরও সতর্ক হতে হবে।” কনফেডারেশন অব রিয়াল এস্টেট ডেভলপার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গ মুখপাত্র জিতেন্দ্র মিত্তলকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে ডেঙ্গি ও বহুতল নিয়ে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। কোথাও নির্মীয়মাণ বহুতলে জল যাতে না জমে না দেখতে বলা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.