সরকারের কাছ থেকে ধান নিয়েছে। কিন্তু খাদ্য দফতরকে তাদের প্রাপ্য চাল সরবরাহ করেনি। এই অভিযোগে রাজ্যের তিনটি চালকলের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য দফতর। এই তদন্তের আওতায় আসছে অত্যাবশ্যক পণ্য নিগমও। আরও ছ’টি চালকল একই কারণে অভিযুক্ত হলেও সরকারের প্রাপ্য চাল মেটাতে তাদের ২১ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বর্ধমানের জয়দুর্গা রাইস মিল, বাঁকুড়ার শিবশঙ্কর রাইস মিল এবং মেদিনীপুরের মডার্ন রাইস মিলের বিরুদ্ধে। অন্য অভিযুক্তদের বলা হয়েছে, হয় খাদ্য দফতরের প্রাপ্য চাল দাও, নইলে চালের মূল্য নগদে জমা দাও। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দু’টোর একটা না-করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গত দু’টি কৃষিবর্ষে সরকারের কাছ থেকে ধান নিয়েও সময়মতো চাল তৈরি করে তা খাদ্য দফতরকে সরবরাহ করেনি ন’টি চালকল। খাদ্যমন্ত্রী জানান, চালের দাম হিসেবে ওই চালকলগুলির কাছে প্রায় ন’কোটি টাকা পাওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের।
অভাবী বিক্রি রুখতে প্রতি বছরই বিভিন্ন সমবায় সংস্থা ও অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিগমের মাধ্যমে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনে খাদ্য দফতর। চাল তৈরির জন্য সেই ধান দেওয়া হয় চালকলগুলিকে। সেই চালই রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। খাদ্য দফতরের কর্তারা জানান, প্রতি বারেই দেখা যায়, এক বা একাধিক চালকল সরকারের কাছ থেকে ধান নিয়েও সময়মতো চাল সরবরাহ করেনি।
খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি মেদিনীপুরের মডার্ন রাইস মিলে অভিযান চালিয়ে সরকারের দেওয়া ধান বা তা থেকে তৈরি চাল পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজখবর নিতে গিয়ে অন্য তথ্যও উঠে আসে কর্তাদের কাছে। তাঁরা দেখেন, সরকারি সংস্থা অত্যাবশ্যক পণ্য নিগম চাষিদের কাছ থেকে যে-পরিমাণ ধান কেনার হিসেব দিয়েছে, তা ঠিক নয়। দফতরের এক কর্তার কথায়, “ওই ঘটনায় সরকারি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলেই আমাদের ধারণা। তাই নিগমকেও সিআইডি তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে।”
এর পরিপ্রেক্ষিতে তিন জেলার তিন চালকলের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার নতুন নির্দেশিকাও ঘোষণা করেছেন মন্ত্রী। তিনি জানান, আসন্ন কৃষি মরসুমে কোনও একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় একাধিক সমবায় ধান কিনতে পারবে না। প্রতিদিন কোথায় কত ধান কেনা হচ্ছে, তার হিসেব এসএমএস করে খাদ্য দফতরের ‘সার্ভার’-এ জানিয়ে দিতে হবে। মন্ত্রীর কথায়, “কোথাও কোনও অস্বাভাবিকতা থাকলে এতে সেটা ধরা পড়ে যাবে। এই কাজের জন্য রাজ্যের ৩৪১টি ব্লকের এক জন করে খাদ্য পরির্দশকে মোবাইল ফোন দেওয়া হবে।”
চলতি কৃষিবর্ষে চাষিদের কাছ তিন হাজার কোটি টাকা ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে। সেই জন্য রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে খাদ্য দফতর। যে-সব সমবায় সংস্থা ধান কিনবে, বাকি টাকার সংস্থান করতে হবে তাদেরই। |