রাজ্যের দাবি মেনে বাগডোগরা বিমানবন্দরের প্রশাসনিক সমস্ত কাজকর্ম এ বার কলকাতা থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এত দিন এই কাজ গুয়াহাটি থেকে করা হত। রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাগডোগরার সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। এই সিদ্ধান্তে সুবিধা হবে রাজ্যের।”
বাগডোগরা বিমানবন্দরটি আদতে বায়ুসেনার অধীনে হলেও যাত্রী পরিষেবা সংক্রান্ত কিছু কাজকর্ম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষই দেখে। এত দিন বাগডোগরা ছিল উত্তর-পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক অধিকর্তার অধীনে, গুয়াহাটি যাঁর সদর দফতর। সম্প্রতি বিমান মন্ত্রকের নির্দেশে বলা হয়েছে, এ বার থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরের পরিচালনার ভার তুলে দেওয়া হচ্ছে পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক অধিকর্তার হাতে, যাঁর সদর দফতর কলকাতা। অর্থাৎ বাগডোগরার যাবতীয় প্রশাসনিক কাজকর্ম এ বার এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হবে।
পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক অধিকর্তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পোর্ট-ব্লেয়ার, রাঁচি, পটনা, ভুবনেশ্বর-সহ পূর্ব ভারতের সব বিমানবন্দর। এ বার বাগডোগরাও এর সঙ্গে যুক্ত হল। শুধুমাত্র কলকাতা বিমানবন্দরের জন্য আলাদা ডিরেক্টর পদ মর্যাদার এক অফিসার রয়েছেন।
মহাকরণ সূত্রের খবর, বাগডোগরা নিয়ে যে কোনও প্রয়োজনে যে গুয়াহাটির মুখাপেক্ষী হতে হয়, সম্প্রতি তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে যায়। গত মাসে জ্বালানি কর মকুবের বৈঠকে মহাকরণে উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবাল। এই সমস্যার কথা তাঁঁকে বলেন মমতা। তার পরই দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে।
পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক অধিকর্তা শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ী বলেন, “বাগডোগরা থেকে উড়ান বাড়ানোর চেষ্টা করছে রাজ্য। সে ক্ষেত্রে রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজন। তা গুয়াহাটি থেকে করতে সমস্যা হচ্ছিল।”
সম্প্রতি মহাকরণের সঙ্গে যোগাযোগ বেড়েছে বাগডোগরা বিমানবন্দরের। সেখান থেকে দু’তিন মাসের মধ্যে বাড়তে চলেছে উড়ান সংখ্যা। পাহাড়ের অস্থির পরিস্থিতির কথা ভেবে বাগডোগরা থেকে বিমান চালানো নিয়ে দ্বিধায় ছিল ইন্ডিগো। এখন বাগডোগরা থেকে দ্রুত উড়ান চালু করতে ওই সংস্থার এক সমীক্ষক দল কয়েক দিনের মধ্যেই বাগডোগরা যাচ্ছে। বাগডোগরায় মঙ্গলবার থেকে রাতের উড়ান শুরু করছে স্পাইসজেট। অক্টোবর থেকে ভোরে আরও একটি কলকাতা-বাগডোগরা উড়ান শুরু করছে তারা। বাগডোগরা-কাঠমান্ডু উড়ানও চালাতে চায় স্পাইসজেট।
বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কল্যাণকিশোর ভৌমিকের কথায়, “বিমানের জ্বালানির উপর থেকে রাজ্য কর মকুবের পরে বাগডোগরা থেকে উড়ান চালানোয় উৎসাহ দেখা দিয়েছে। কলকাতায় বসে সেই উৎসাহ যে ভাবে অনুভব করা সম্ভব, গুয়াহাটি থেকে ততটা নয়।”
বাগডোগরার সঙ্গে সিকিমের প্যাকইয়ং বিমানবন্দরের পরিচালনার ভারও চলে এসেছে কলকাতার হাতে। গ্যাংটক থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্যাকইয়ং-এ পাহাড় কেটে নতুন এই বিমানবন্দরটি তৈরি হচ্ছে। ২০১৫ সালে এই বিমানবন্দরটি তৈরির কাজ শেষ হলে সেখানে ছোট এটিআর বিমান ওঠানামা করতে পারবে। পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য সিকিমে এত দিন বিমানবন্দর ছিল না। বাগডোগরা-প্যাকইয়ং বিমান পরিষেবা চালু করতে উৎসাহী দুই রাজ্যই। সিকিমের নতুন বিমানবন্দর পর্যটনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, মনে করেন শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তা বিশ্বজিৎ দাস।
ফেডারেশন অফ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্থ বেঙ্গল (ফোসিন)-এর এই কর্তার কথায়, “শিলিগুড়ির রেল পরিষেবা কাটিহার বিভাগের অধীনে হওয়ায় যেমন অসুবিধা হয়, তেমনই বাগডোগরা গুয়াহাটির অধীনে থাকলেও অসুবিধা হত। বিমান পরিষেবার মতো রেল পরিষেবার নিয়ন্ত্রণও কলকাতা থেকে করলে সুবিধা হয়।”
|