অনেক সময় জমিতে পচে নষ্ট হয়। কখনও বা জ্বালানির জন্য কুড়িয়ে নিয়ে যান কেউ। কিন্তু এ বছর জলঙ্গির গ্রামে শুকনো পাটের কদর ছিল নজরকাড়া। জলঙ্গির গৌরীপুরে শুকনো পাট দিয়ে এ বছর তৈরি হচ্ছে দুর্গামণ্ডপ। নিজেদের ভাবনায় আঁকা মন্দিরের আদলে পাড়ার তরুণ-তরুণীদের হাতে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। শুকনো পাটের গায়ে পড়বে বার্নিশ। চোখধাঁধানো নকশা হবে বেতের। ডাকের সাজের একচালির প্রতিমা। এলাকার অর্থকরী ফসলকে মণ্ডপে তুলে এনে চমক দিতে চলেছে গৌরীপুর সর্বজনীন। কর্তাদের কথায়, টানা এক মাস ধরে চলেছে মাঠ থেকে শুকনো পাট তোলার কাজ। ৫৫ জন সদস্য নিজেদের গ্রাম ছাড়াও পাশের গ্রামে গিয়ে সকাল থেকে সন্ধে সংগ্রহ করেছেন ওই পাট। তাঁদের দাবি, বাহারি আলোয় বার্নিশ করা শুকনো পাটের মন্দির নজর কাড়বেই কাড়বে। তা ছাড়াও মন্দিরের সামনে থাকবে বাহারি ফুলের সাজানো বাগান ও ফোয়ারা। |
ইসলাম ও সাইদুল শেখদের পাটের জমিতে মরে যাওয়া পাট ফেলে দেওয়ার রেওয়াজ। এ বছর পাড়ার ছেলেরা একদিন সকালে হাজির পাটের জমির আলে। সবিনয় আবেদন, চাচা, মরা পাটগুলো আমাদের দেবেন! ইসলামের কথায়, “প্রথমে এক দল শিক্ষিত ভদ্র পরিবারের ছেলেকে মাঠে দেখে চমকে গিয়েছিলাম। পরে ওদের কাছ থেকে শুনলাম এ বার পুজোয় শুকনো পাটের মণ্ডপ হবে। ওদের বলেছিলাম কাঁচা পাট বাঁচিয়ে শুকনো পাট তুলে নিতে।”
শুকনো পাট দিয়ে সাজানো দুর্গামণ্ডপ কেমন হবে?
প্রথমে চমকে গেলেও এলাকার চাষি সাইদুল শেখ বলেন, “ছেলেরা বলতেই বুঝলাম, আমার পাট জাতে উঠবে। তা ছাড়া পুজোর শরিক হওয়া যাবে। এখন দেখার, আমাদের পাটের তৈরি মণ্ডপ কতটা নজর কাড়ে।”
চোদ্দো বছরের পুজোয় কখনও উঠে এসেছে কচি ধানগাছ, চা-পাতা, মাদুর বা থার্মোকল। পাড়ার তরুণদের কঠোর পরিশ্রমে তৈরি হয় মণ্ডপ। প্রতিমা ছাড়া অন্য সবেতেই নিজেদের ভাবনার ছাপ রাখে গৌরীপুর সর্বজনীন। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক পুলক মণ্ডল বলেন, “নিজেদের হাতে মণ্ডপ তৈরি করাই আমাদের বৈশিষ্ট্য। কেবল তাই নয়, থিমের ভাবনাও আমাদের ছেলেদের। পুজোর মাসতিনেক আগে থেকে শুরু হয় আমাদের কাজ। নিজেদের কাজ সামলে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে কাজ।”
কেবল ছেলেরা নয়, পাড়ার মহিলারাও হাত লাগান মণ্ডপ তৈরিতে। নকশা থেকে শুরু করে জোগানের কাজে সমানে হাত চালান মানসী, শ্যামলী হালদাররা। মানসীর কথায়, “এটা আমাদের পাড়ার সম্মানের লড়াই। আমাদের পুজো দেখতে মুর্শিদাবাদ ছাড়াও নদিয়ার অনেক দর্শনার্থী ভিড় জমায়। বছর-বছর তাদের সামনে একটা ভাল থিম তুলে ধরতে পেরে আমরা গর্বিত।” |