বিড়ি শ্রমিকদের ন্যূনতম সরকারি মজুরি দেওয়ার দাবিতে সিটু ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবি তুলছে। কিন্তু শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেছেন, “ন্যূনতম সরকারি মজুরি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলোই সবথেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” শ্রমিকদের সরকারি মজুরির দাবিতে বৃহস্পতিবার বিড়ি শিল্পে ধর্মঘটের পর এবার মুর্শিদাবাদের বিড়ি শিল্পাঞ্চল, জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়ে বন্ধ ডাকার হুমকি দিল সিটু। সিটুর জেলা সম্পাদক তুষার দে বলেন, “রাজ্য সরকার দু’বছর আগে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে কলকাতায়। তখন শ্রমমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন শ্রমিকরা যাতে ন্যূনতম সরকারি মজুরি পান সে বিষয়ে তিনি যা করার করবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি কিছুই করেননি। কোনও ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও ডাকা হচ্ছে না। বিড়ি শ্রমিকদের সরকারি মজুরি ১৬৯ টাকা হলেও বাস্তবে তাঁরা হাতে পাচ্ছেন মাত্র ৭৫ টাকা। এমনটা চলতে থাকলে খুব শীঘ্র জঙ্গিপুর মহকুমা জুড়ে বন্ধ ও রাস্তা অবরোধ করা হবে।” |
শ্রমমন্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “বিড়ি শ্রমিক নেতারা বিড়ি মালিকদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে নিজেদের মতো করে বোঝাপড়া করে নেন। সেটা যতক্ষণ না বন্ধ হচ্ছে, রাজ্য সরকার বিড়ি নিয়ে কোনও বৈঠক ডাকবে না।” কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী? পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “২০১১ সালে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে মহাকরণে বৈঠক করে রাজ্য সরকার ন্যূনতম সরকারি মজুরি চালুর কথা ঘোষণা করে। কিন্তু সাত দিনের মধ্যেই ধুলিয়ানে ফিরে তৃণমূল ছাড়া অন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বিড়ি মালিকদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে বোঝাপড়া করে নিয়েছিলেন। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে বিড়ি নিয়ে বৈঠক ডাকার প্রশ্নই ওঠে না।”
রাজ্যের কুড়ি লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের অর্ধেকই রয়েছে জঙ্গিপুর সহ মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু এলাকায়। রাজ্য সরকার শিল্প ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ন্যূনতম ১৬৯ টাকা মজুরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও জঙ্গিপুরের বিড়ি শ্রমিকরা হাতে পান মাত্র ৭৫ টাকা। সিটুর পক্ষ থেকে অন্য বিড়ি শ্রমিক সংগঠনগুলোর কাছে যৌথভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। আইএনটিইউসি’র রাজ্য কমিটির সদস্য বাদশার আলি বলেন, “আমাদেরও দাবি এটাই যে বিড়ি শ্রমিকদের ন্যূনতম সরকারি মজুরি দেওয়া হোক। কিন্তু তাই বলে ধর্মঘট করে, কর্মদিবস নষ্ট করে কোনও আন্দোলনে আমরা নেই। তবে মজুরির বিষয়ে রাজ্য সরকারের অবিলম্বে বৈঠক ডাকা উচিত।”
শ্রমমন্ত্রী বলেন, “৩৪ বছরের বাম জমানায় শ্রমিক সংগঠনগুলো এভাবেই বিড়ি মালিকদের সঙ্গে সমঝোতা করে বিড়ি শ্রমিকদের কম মজুরি নিতে বাধ্য করেছেন। সংগঠনগুলো ভবিষ্যতে আর কখনও মালিকদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে বোঝাপড়া করবেন না এমন লিখিত প্রতিশ্রুতি পেলে তবেই রাজ্য সরকার বিড়ি মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকবে। তার আগে রাজ্য সরকার তো বটেই প্রশাসনের কোনও কর্তাও এই নিয়ে বৈঠক করবেন না। এটাই রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত।” পুজোর মুখে সরকার, সংগঠন ও মালিক পক্ষের এমন চাপানউতোরে রীতিমত হতাশ বিড়ি শ্রমিক মহল্লাগুলো। |