|
|
|
|
হলদিয়ার নতুন পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
প্রত্যাশা মতোই শুক্রবার হলদিয়ার নতুন পুরপ্রধান হিসাবে নির্বাচিত হলেন তৃণমূলের দেবপ্রসাদ মণ্ডল।
এত দিন বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় থাকা দেবপ্রসাদবাবুকে এ দিন পুরপ্রধান পদে সমর্থন করেন তিন সিপিএম ও এক সিপিআই কাউন্সিলর। পুরপ্রধান হিসাবে দেবপ্রসাদবাবুর নাম ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খোশমেজাজে পুরভবনে ঢোকেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। সভাকক্ষের পাশের ঘরে তখন জড়সড় ভাবে বসেছিলেন উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের নারায়ণচন্দ্র প্রামাণিক। দলীয় হুইপ এমনকী রাজ্য কমিটির নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে পুরসভায় এসেছিলেন সভার আহ্বায়ক নারায়ণবাবু। ধন্যবাদ জানাতে ঘরে ঢুকেই তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়ে জড়িয়ে ধরেন শুভেন্দু। তারপর ঢুকে যান সভাকক্ষে। নারায়ণবাবু কষ্টের হাসি হেসে বললেন, “এটা নেহাতই সৌজন্য।” এ দিনের সভা তিনি ডেকেছিলেন বলে তাঁর উপস্থিত থাকাটা আবশ্যিক ছিল জানিয়ে নারায়ণবাবু বলেন, “পরিবেশ পরিস্থিতির কাছে হার মেনে দলীয় নির্দেশ অগ্রাহ্য করে আসতে হয়েছে। তবে হলদিয়ার উন্নয়নই যেখানে মুখ্য কথা, সেখানে ওরা উন্নয়ন করলে করুক। আমরা বামেদের শক্তিবৃ্দ্ধি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব।”
এ দিকে, বোর্ড সভাকক্ষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু তৃপ্তির সঙ্গে ঘোষণা করেন, “এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কথা দিচ্ছি রাজনীতি নয়, উন্নয়নই হবে পুরসভার একমাত্র লক্ষ্য। আগামী কয়েক বছর হলদিয়ার মানুষ শুধু উন্নয়নই দেখবেন। যা থেকে বামবোর্ড সরে গিয়েছিল।” |
|
নতুন পুরপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। |
এ দিন পুরপ্রধান নির্বাচন উপলক্ষে পুরসভার সামনের রাস্তায় মঞ্চ বেঁধেছিল তৃণমূল। মঞ্চে তেরঙা উত্তীয় পড়ে বসেছিলেন চার বাম কাউন্সিলর। তাঁদের উদ্দেশ করে শুভেন্দু বলেন, “এঁরা রাজনৈতিক কারণে নয়, উন্নয়নের প্রশ্নেই আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন।” বামেদের আনা সন্ত্রাস এবং হুমকির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে বোর্ড গঠন করেছি।” প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে কটাক্ষ করে বলেন, “আজ বামেরা অনেক অভিযোগ করছে। কিন্তু, মনে করে দেখুন কয়েক বছর আগে এ ভাবেই লক্ষ্মণ শেঠরা তমলুক পুরসভা দখল করেছিলেন।”
সাংসদ শুভেন্দু এ দিন পুরবাসীকে পাশে থাকার আবেদন জানিয়ে বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় হলদিয়ায় বিনিয়োগ নতুন মাত্রা পাবে। পুরসভা, এইচডিএ ও রাজ্য সরকার সম্মিলিত ভাবে এখানকার পরিকাঠামো গড়ে তুলবে। উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হবে সাধারণ মানুষের।” তিনি ইঙ্গিত দেন, গত ১৬ বছরের পুরসভায় ক্ষমতায় থেকে বামেরা যে দুর্নীতি করেছে তার তদন্ত করবে বাম বোর্ড। সোমবারই পুরসভার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন নতুন পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডল। তিনি জানান, পুরসভার পরবর্তী বৈঠকেই অন্য পদগুলি পূরণ করা হবে।
এ দিকে সিপিএম জেলাশাসকের কাছে দলীয় দুই কাউন্সিলরের পুরসভার সদস্যপদ খারিজের ঘোষণা করেছে। সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান বলেন, “আইন ও সমস্ত পদ্ধতি মেনে হুইপ দিয়েছি। দলীয় নিষেধ না মেনে ওই কাউন্সিলররা তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন। আমরা আশাবাদী দলত্যাগ বিরোধী আইনে ওদের সদস্যপদ খারিজ হবে।” তবে এ দিন বিকাশবাবু দাবি করেন, তিনি সিপিএমের তরফে কোনও হুইপ পাননি। সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য তথা কাউন্সিলর বিকাশ জানা বলেন, “শুধুমাত্র উন্নয়নের স্বার্থে আমি বর্তমান সাংসদের সঙ্গে আছি। এ জন্য সিপিএম ব্যবস্থা নিতেই পারে। তবে আমার কিছু যায় আসে না।”
এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “হুইপের কোনও নথি বামেরা মহকুমাশাসককে জমা দেননি। তাই ওঁদের সদস্যপদ খারিজের প্রশ্নই ওঠে না।” হলদিয়ার মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্কর বলেন, “দুই বাম কাউন্সিলরের সদস্যপদ খারিজের আবেদন পেয়েছি। কিন্তু হুইপ সংক্রান্ত কোনও নথি আমাকে দেওয়া হয়নি। গোটা বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতা আছে। আইন খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।”
আইনি তরজা চলবেই। তবে, পুরবাসী চাইছেন উন্নয়ন। নতুন বোর্ড তাতে কতটা সফল হয়, দেখার সেটাই।
|
বিবেকানন্দের ভক্ত দেবুদা
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
|
দেবপ্রসাদ মণ্ডল। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
হলদিয়া পুরসভার নতুন পুরপ্রধান নির্বাচন হয়েছেন দেবপ্রসাদ মণ্ডল। সুবক্তা, পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এই নেতা দুর্দিনে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার জন্যই এই পুরস্কার পেলেন বলে রাজনৈতিক মহলের মত। হলদিয়ার আদি বাসিন্দা জমিদার বাড়ির সন্তান দেবপ্রসাদবাবু বরাবারই বাম বিরোধী। তমলুক কলেজে ছাত্র পরিষদ করতেন। বাড়ির সামনে নয়ের দশক থেকেই তিনি সুধীর ইন্সটিটিউড নামে একটি নিম্ন বুনিয়াদি স্কুল চালিয়ে আসছেন। রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হয় প্রাক্তন বিধায়ক সুকমার দাসের অনুপ্রেরণায়। পুরপ্রধান পদের দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, “সুকুমারদার কথা মনে পড়ছে। উনিই আমাকে গড়ে পিটে মানুষ করেছেন।” স্মৃতি হাতড়ে বলেন, “আজকের এই আনন্দের দিনে মনে পড়ছে গনি খান চৌধুরীকে। উনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন।” বিবেকানন্দের ভক্ত রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুরাগী শ্রোতা দেবপ্রসাদবাবু এলাকায় দেবুদা নামেই পরিচিত। রাজ্যের অন্যতম ধনী পুরসভার দায়িত্ব নিয়ে জানালেন, “আমরা প্রথম কাজ হল সব ওয়ার্ডে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। তা ছাড়া নিকাশি ব্যবস্থারও উন্নতি করতে হবে। সব মিলিয়ে হলদিয়াকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে বিশ্বের কাছে সেরা পরিচ্ছন্ন শহর হিসাবে তুলে ধরতে হবে।”
|
পুরনো খবর: হলদিয়ায় আজ নতুন পুরপ্রধান |
|
|
|
|
|