নতুন পুরপ্রধান কে হবে জানতে উত্তেজনার পারদ চড়ছে হলদিয়ায়।
আজ, শুক্রবার নির্ধারিত সূচি ও আইন মেনে হলদিয়ায় পুরপ্রধান নির্বাচন হবে। তারপর বর্তমান উপ-পুরপ্রধান সিপিআইয়ের নারায়ণচন্দ্র প্রামাণিককে সরিয়ে নতুন উপ-পুরপ্রধান মনোনয়ন ও নতুন চার জনকে পুর পারিষদের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
২০১২ সালে হলদিয়া পুরভোটে তৃণমূলকে হারায় বামেরা। হারটা আসলে হয়েছিল তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর। বামেরা চতুর্থবার বোর্ড গঠন করলেও তিনি ‘কথা’ দিয়েছিলেন হলদিয়া পুরসভা দখল করবেনই। নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল দিয়ে সেই বোর্ড ইতিমধ্যেই ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি। ফ্রন্টের তিন কাউন্সিলর বিপক্ষে যাওয়ায় ও একজন গরহাজির থাকায় গত শুক্রবার অপসারিত হয়েছেন চার বারের পুরপ্রধান সিপিএমের তমালিকা পণ্ডা শেঠ। কথা দিয়ে কথা রাখার কৃতিত্ব নিতে আজ হলদিয়া পুরসভার সামনে হাজির থাকছেন পুরসভা দখলের অন্যতম প্রধান কারিগর শুভেন্দু অধিকারী। পুরসভার সামনে বাধা হচ্ছে মঞ্চ। সেখানে পুরপ্রধান নির্বাচনের পর বক্তব্য রাখবেন তিনি। দলীয় কর্মী, কাউন্সিলর ও সহায়ক বাম কাউন্সিলরদের সংবর্ধনাও দেবেন। আজ সেই উচ্ছ্বাস বাঁধ ভাঙবে ধরে নিয়ে পুলিশি বন্দোবস্তও থাকছে। রাজনৈতিক মহলের মত পুরসভা দখলের পর শুভেন্দু’র হলদিয়া দখল ষোলো আনা পূর্ণ হল।
কিন্তু নতুন পুরপ্রধান কে হবেন তা নিয়ে শুভেন্দুবাবু প্রকাশ্যে কিছু না বলায়, তা নিয়ে জল্পনা চলছেই। দলীয় সূত্রে খবর, নির্বাচনের আগে এমনিতেই প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। দলকে যার ‘ফল’ ভোগ করতে হয়েছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। এ বার পুর প্রধান নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনও কোন্দল প্রকাশ্যে না আসে সে জন্য গোটা বিষয়টিতে নিজের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আনছেন না শুভেন্দুবাবু। তবে বিরোধী দলনেতা হবার সুবাদে পুরপ্রধান হওয়ার দৌড়ে প্রথমেই নাম উঠে আসছে দেবপ্রসাদ মণ্ডলের। তৃণমূল নেতাদের ধারণা বাম কাউন্সিলরদের ধরে রাখতে তাঁদের দু’একজনকে উপ-পুরপ্রধান বা পুর পারিষদের পদ দিতে পারেন শুভেন্দু অধিকারী। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারেন একদা লক্ষ্মণ শেঠ ঘনিষ্ঠ সিপিএম থেকে কাউন্সিলর হিসাবে নির্বাচিত বিকাশ জানা।
এ দিকে বৃহস্পতিবার বিকালে জেলাশাসকের দফতরের সামনে হলদিয়া পুরসভা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন বাম নেতারা। সেখানে তাঁরা সাংবাদিকদের হলদিয়ার পুরপ্রধান নির্বাচনের সভা বয়কটের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ দিন সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে দলের দুই কাউন্সিলর বিকাশ জানা ও গোপাল দাসের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে সদস্য পদ খারিজের আবেদন জানান। প্রশান্ত প্রধান অভিযোগ করেন, “সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে অনাস্থা এনে পুরপ্রধানকে অপসারণ করেছে তৃণমূল।” তিনি বলেন, “সভায় সন্ত্রাস করে আমাদের কাউন্সিলরদের তৃণমূলকে সমর্থন করতে বাধ্য করেছিল। পুরপ্রধান নির্বাচনের সভায় যোগ দিলে আমাদের কাউন্সিলরদের প্রাণ সংশয় হতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে ওই সভা বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, “পুরপ্রধান নির্বাচনের সভায় নিরাপত্তার জন্য জেলা বামফ্রন্টের তরফে দাবি জানানো হয়েছে। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” সদস্যপদ খারিজ নিয়ে চিঠির বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ দিন পুরসভার বিরোধী দলনেতা দেবপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “তলবিসভার দিন যে তিন বাম কাউন্সিলর আমাদের সমর্থন জানিয়েছিলেন এবং একজন গরহাজির ছিলেন তাঁরা পুরপ্রধান নির্বাচনের দিন আমাদের পক্ষে যোগ দিচ্ছেন।” প্রসঙ্গত, তলবি সভার দিন দেবপ্রসাদবাবু দাবি করেছিলেন, পুরপ্রধান নির্বাচনের দিন ওই চার বাম কাউন্সিলর ছাড়াও আরও কয়েকজন তাদের সমর্থন করবেন।
এখন দ্বিতীয় দফায় বামেরা নিজেদের কাউন্সিলরদের ভাঙন আটকাতে পারে কি না দেখার সেটাই।
|