নিজস্ব সংবাদদাতা • খানাকুল |
এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে খানাকুলের মহিষগোট গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারি বাধে। বোমা-গুলি চলে। দু’জন ছুরির ঘায়ে জখম হয়েছেন। তাঁদের আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গোটা কুড়ি বাড়িতে ভাঙচুর-লুঠপাট চলে।
শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তাদের দাবি, দেরিতে খবর পাওয়া গিয়েছিল। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ৪টি না-ফাটা বোমা, ৫ রাউন্ড পাইপগানের গুলি উদ্ধার হয়েছে। বেশ কিছু গুলির খোল এবং ফেটে যাওয়া বোমার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, দু’পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেছে। তদন্ত চলছে। এলাকায় পুলিশি টহল রয়েছে। খানাকুলের বিধায়ক তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদ বলেন, “দলের কোন্দল কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। কেউ শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করলে পুলিশকে কঠোর ভাবে দমন করতে বলেছি। আমার তরফ থেকে দু’পক্ষকেই চরম সতর্ক করেছি।” এলাকায় আপাতত কোনও উত্তেজনা নেই বলে দাবি করেছেন বিধায়ক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশোরপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের একাধিক গোষ্ঠী নিজেদের ক্ষমতা কায়েমকে কেন্দ্র করে প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব বহু চেষ্টা করেও তা থামাতে পারছেন না। মহিষগোট গ্রামে মাসখানেক আগে একশো দিনের প্রকল্পের একটি কাজ নিয়ে সহমত না হওয়ায় গ্রামের এক নেতা জাফর মল্লিকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় গ্রামের আর এক নেতা তথা হুগলি জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সাধারণ সম্পাদক আলি হোসেনের। জাফর আবার এলাকার প্রভাবশালী নেতা দীপেন মাইতির অনুগামী।
বৃহস্পতিবার খানাকুল ১ পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন নিয়ে দু’পক্ষের মনোমালিন্য বাড়ে। আলি হোসেনের পছন্দের প্রার্থীর বদলে দীপেন মাইতির ঘনিষ্ঠ এক জন একটি নির্দিষ্ট কর্মাধ্যক্ষের পদ পেয়ে যান। তারই জেরে মহিষগোটে সংঘর্ষ হয় বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
আলি হোসেনের দাবি, “পদ না পাওয়া নিয়ে আমার ক্ষোভের প্রশ্নই নেই।” তাঁর অভিযোগ, “রাত ৮টা নাগাদ সিপিএম ও বিজেপির কিছু দুষ্কৃতী আমাদের লোকজনকে মারধর করতে আসে। আমরা প্রতিরোধ করি। ওরা পালায়। কিন্তু রাত ১২টার পরে দীপেন মাইতির জনা ষাটেক লোক এনে পাইপগান, বোমা, কুড়ুল নিয়ে গ্রামে ফের হামলা চালায়। আমাকে খুন করা চক্রান্ত করেছিল।” আলি হোসেনের দাবি, প্রায় ১০টি ঘর ভাঙচুর করে লুঠপাট চালানো হয়েছে। পুলিশকে ফোনে খবর দিলেও তারা সময় মতো আসেনি। সমস্ত বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, দীপেন মাইতি বলেন, “পরিকল্পনা করে মিথ্যা অভিযোগ করছে আলি হোসেন। ওরাই আমাদের দু’জনকে ছুরি মেরেছে। শেখ হাসিফুল মল্লিক ও উত্তম মাজিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আর রাতের যে ঘটনার উল্লেখ করছে, তা ওরই তৈরি করা।” |