|
|
|
|
কংগ্রেস-প্রশ্নে সুর বদলে বিভ্রান্তিই বাড়াচ্ছেন কারাট
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
এক মাসের মধ্যে অন্তত চার বার কংগ্রেস-প্রশ্নে সুর বদল করলেন প্রকাশ কারাট! তাঁর এই ঘন ঘন বার্তা-বদলে লোকসভা ভোটের আগে দলের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে প্রবল বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে সিপিএমের অন্দরে! এমনকী, দলের যৌথ সিদ্ধান্তকে এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠছে কারাটের বিরুদ্ধে।
কংগ্রেসের আর্থিক উদারনীতি, নাকি তার সঙ্গেই বিজেপি-র সাম্প্রদায়িকতাবাদ কোনটা বৃহত্তর বিপদ, সিপিএমের অন্দরের বিতর্ক এই প্রশ্নেই। আর এই প্রেক্ষিতে নির্বাচন-উত্তর পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সম্পর্কে দলের মনোভাব কী হবে, সেই প্রশ্ন এখন বারবার মাথাচাড়া দিচ্ছে। এবং কারাটের কথায় বারেবারেই সেই প্রশ্নে জলঘোলা হচ্ছে! সাধারণ সম্পাদক কখনও বলছেন, কোনও অবস্থাতেই কংগ্রেসের হাত ধরা হবে না। কখনও বলছেন, কংগ্রেসকে তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি বলেই বিবেচনা করছেন। কখনও আবার বলছেন, তৃতীয় বিকল্পই ভাল! দলের একাংশের মতে, কখনও বঙ্গ ব্রিগেড, কখনও কেরল শিবিরের কাছে নতিস্বীকার করতে গিয়েই জেরবার হচ্ছেন কারাট। বেড়ে যাচ্ছে বিভ্রান্তি।
দু’দিন আগেই অর্থনীতি বিষয়ক একটি ইংরেজি দৈনিকে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কারাট বলেছেন, নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখে সঙ্ঘ পরিবার যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এই বিপদকে রুখতে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি-র বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ সব দলকে একজোট হতে হবে। সাম্প্রতিক কালে কারাট তাঁদের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক জোট নিয়ে যে সব কথা বলে আসছিলেন, তার থেকে এই মন্তব্য অনেকটাই ভিন্ন মাত্রার। কারণ, এই অবস্থান নিয়ে চললে ভবিষ্যতে আবার ইউপিএ-১ আমলের মতো কংগ্রেস-বাম সমঝোতার রাস্তা খোলা থাকে। তিনি কি কংগ্রেসকেও এই একজোট করতে-চাওয়া শক্তির মধ্যে ধরছেন? জবাবে কারাট বলেন, এখনও তেমন কিছু বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু মাঝেমধ্যে কিছু বিচ্যুতি সত্ত্বেও কংগ্রেসকে তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি বলেই মনে করেন।
সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্য জানাজানি হওয়ার পরে যথেষ্টই উৎসাহিত হয়েছিলেন সিপিএমের উদারপন্থী অংশ। তাঁরা মনে করছিলেন, বিলম্বে হলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বোধোদয় হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সাম্প্রদায়িকতার বিপদের মোকাবিলায় ভোটের পরে প্রয়োজনে কংগ্রেসের জন্য দরজা কখনওই বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বাস্তবতার কথা মাথায় রাখলে এটা আরও বেশি করে প্রয়োজন।” পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট না হলে তাদের পক্ষে যে কিঞ্চিৎ স্বস্তি মিলতে পারে, বিলক্ষণ জানে আলিমুদ্দিনও।
কিন্তু দলের একাংশের ওই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পরের দিনই একটি ইংরেজি দৈনিকে কারাট ফের জানিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেসকে নিয়ে ভাবনাচিন্তার কোনও অবকাশই নেই! কেরল শিবিরের চাপে পড়েই তড়িঘড়ি কারাটকে বিড়ম্বনা সামলাতে এমন সুর বদলাতে হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। কিন্তু গোটা ঘটনাপ্রবাহে দলের অন্দরে শুধু বিভ্রান্তিই বেড়েছে!
পলিটব্যুরোরই একাংশের বক্তব্য, কারাট কলকাতায় বলেছিলেন তৃতীয় ফ্রন্ট জাতীয় কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই। তার পরে একটি ইংরেজি কাগজের সঙ্গে আলোচনার আসরে বলেছিলেন, বিপক্ষে নরেন্দ্র মোদী বা যে-ই থাকুন, কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার প্রশ্ন নেই! সে বার দলের মধ্যে বিপুল বিতর্ক দেখা দেওয়ায় কলকাতায় এসেই আবার বললেন, ভোটের পরে কী করা হবে, এখনও ঠিক করা হয়নি। এর পরে এক ধাপ এগিয়ে কংগ্রেসের জন্য সম্ভাবনার দরজা খুললেন। এখন আবার পিছিয়ে দরজা বন্ধও করে দিলেন! পলিটব্যুরোতেই প্রশ্ন, এ সব কি দায়িত্বশীল দলের পরিচায়ক?
কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের ক্ষোভ, “গত পার্টি কংগ্রেসে পর্যালোচনা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, আগের বার লোকসভা ভোটে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার প্রয়াসে না ছিল বাস্তবতা, না ছিল বিশ্বাসযোগ্যতা। তার পরেও ঘুরেফিরে সেই তৃতীয় ফ্রন্টের দিকেই যাওয়া হচ্ছে! উপরন্তু কংগ্রেস নিয়ে নানা রকম কথায় কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে যে, দলের কৌশলগত লাইনটা ঠিক কী?”
বারবার ভোলবদলের পর্বের মাঝেই চেন্নাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের পার্টি কংগ্রেসে গিয়ে কারাট সওয়াল করেছিলেন গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জোটের পক্ষেই। ফ ব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস আজ, শুক্রবার জানিয়েছেন, কংগ্রেস এবং বিজেপি-কে সম-বিপদ ধরে বৃহত্তর বাম ঐক্যের পক্ষেই তাঁরা পার্টি কংগ্রেসে প্রস্তাব পাশ করেছেন। প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে এ রাজ্যে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস-রাজে’র বিরুদ্ধে এবং জাতীয় স্তরে ফের রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের দাবিতেও।
|
|
|
|
|
|