...সময় এল কাছে দুঃখেই আনন্দের রসদ
খুঁজবে উৎসবের শহর

দুপুর গড়িয়ে গেলেও বাড়ি ফেরার নাম নেই অনাদিবাবুর। বাড়ি ফিরতেই স্ত্রীর মুখঝামটা, “বয়সের খেয়াল নেই। কচিকাঁচারগুলোর সঙ্গে সকাল থেকে পাড়াময় দাপাদাপি করছ?” অনাদিবাবুর জবাব, “স্রেফ আনন্দ। দেখবে কী কাণ্ডটাই না করছে ছেলেমেয়েগুলো।”
বছরভর নানা যন্ত্রণার পালা পার করে উৎসবে আনন্দ খুঁজে নেওয়াটাই প্রাপ্তি। অনাদিবাবুর মতো অনেকের মত তা-ই। শহরবাসীও সেই আনন্দ খুঁজে পাবেন ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজোমণ্ডপে। বছরভর লড়াই করে বেঁচে থাকার মধ্যে মাতৃ আরাধনা এক নির্ভেজাল আনন্দের প্রতিচ্ছবি। রট আয়রনের ফ্রেম, নাইলনের কট, রকমারি রঙে সেই ভাবনা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। উদ্যোক্তা কলকাতার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বললেন, “বাংলায় শান্তির বাতাবরণকে তুলে ধরছি আমরা।”
স্কটিশ চার্চ কলেজের পিছনে ডাফ স্ট্রিট সর্বজনীনের ৫১তম বর্ষের ভাবনায় এ বার মিলনাশ্রম। অনাথ শিশু, শারীরিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ, সংসারে ব্রাত্য পিতামাতাদের মাঝেই আনন্দ খুঁজে নিতে চলেছে এই পুজো। আটচালার মণ্ডপে থাকবে এমনই বিভিন্ন আশ্রমের ছবি। থাকবে শীতলপাটি, মাদুরের কাজ। সাবেক প্রতিমা, পুরো মণ্ডপে ভেষজ রঙের ব্যবহার।
শৈশবের নতুন ঠিকানা হতে পারে বালিগঞ্জ ফার্স্ট লেনের ২১ পল্লির পুজো। ৬৭তম বর্ষে তাঁদের ভাবনায় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। টুনটুনির বাসার মধ্য দিয়ে যেতে হবে মূল মণ্ডপে। চিত্রকলায়, বিভিন্ন মডেলে ফুটিয়ে তোলা হবে উপেন্দ্রকিশোরের নানা সৃষ্টি।
যামিনী রায়ের শিল্পকলা হাজির হবে ৪৭ পল্লি যুবকবৃন্দ-এর পুজোয়। মণ্ডপ সাজবে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি, করোগেটেড রোল, রকমারি বাঁশে।
এ বছর উত্তরাখণ্ডে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মাথায় রেখে থিম সাজিয়েছেন মুকুন্দপুর সর্বজনীন। তাদের ৩৮তম বর্ষের ভাবনা শিবশক্তি। তিনটি গোলাকৃতি মণ্ডপ। যার দু’টি শিবের রূপ। মূল মণ্ডপে দশমহাবিদ্যা। মণ্ডপ হবে প্লাস্টিকের বালতি, জগ, মগ, গ্লাস, বাটি দিয়ে। উত্তর কলকাতার হরি ঘোষ স্ট্রিট সর্বজনীনও তাদের ভাবনায় এনেছে শিবশক্তিকে। মন্দিরের আদলে মণ্ডপে শিবের বিভিন্ন রূপ ফুটে উঠবে চিত্রকলা, মডেল ও ত্রিশূল দিয়ে।
প্রকৃতির রোষ থেকে সাধারণকে সচেতন করবে দমদম পার্ক তরুণ সঙ্ঘের পুজো। উন্নয়নের নামে যে ভাবে জলাশয় ও সবুজ ধ্বংস হচ্ছে, তাতে সভ্যতার বিপদ আসন্ন। তাই প্রতিবাদী রূপেই দেবী পূজিত হবেন জলাশয় ও গাছগাছালি ঘেরা স্নিগ্ধ মণ্ডপে।
টেলিগ্রাম এখন অতীত। ঘোড়সওয়ার ডাক ব্যবস্থা, ‘রানার’ বা ‘ডাক হরকরা’রা ইতিহাসের পাতায়। এখন এসেছে ই-মেল। বেলেঘাটা মেন রোডের শ্রীদুর্গা ক্লাব ৮৭তম বর্ষে তুলে ধরছে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবর্তনকে। মূল মণ্ডপ কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ দিয়ে গড়া। মনিটরের স্ক্রিনে ফুটে উঠবে মাতৃপ্রতিমা।
বড়িশা তরুণ তীথের্র্ আবার মৈথিলী রূপকথার রাজ্য। গুজরাতের শিল্পকলা নিয়ে তাদের থিম, “অথঃ লিপ্পন কথা”। কচ্ছের রণ অঞ্চলের রাবারি আদিবাসীদের গোলাকৃতি বাড়ি ‘ভাঙ্গাস’ এর আদলে মণ্ডপ। গুজরাতের পোশনি জেলার উপজাতি মানুষের জোড়া ঘোড়ার দান প্রথাকে তুলে ধরা হয়েছে।
স্রেফ থিমে নয়, আয়োজনেও আনন্দের নতুন দিশা পাবেন অনাদিবাবুরা। পাইকপাড়া সঙ্কল্প যেমন স্রেফ কয়েকটি পরিবার মিলে এক বন্ধুর বাড়িতে মাতৃ আরাধনার আয়োজন করছে। সাবেক পুজো। কিন্তু পুজো ঘিরে ভিন্ন ভিন্ন এলাকার কয়েকটি পরিবারের মেলবন্ধনেই অভিনব আনন্দের সন্ধান মিলবে এ শহরে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.