|
|
|
|
...সময় এল কাছে |
পুরাণের পাশাপাশি
সচেতনতার পাঠও
আর্যভট্ট খান |
|
|
শরতের পেঁজা তুলোর মতো মেঘকে মাঝে মধ্যেই গুঁড়িয়ে দিয়ে জাঁকিয়ে বসছে বর্ষার ঘন কালো মেঘ। কাশ ফুল বা শিউলি ফুলের দেখা মেলা ভার। তবু শহরের রাস্তায় যানজটের কবলে পড়েও কোথাও যেন একটা পুজোর গন্ধ ভেসে আসছে। অফিসের কিউবিকলে বা বড়বাজারের ঘিঞ্জি গলির মধ্যে দশ ফুট বাই দশ ফুট দোকানঘর,
অফিস ঘরেও অদৃশ্য কোনও ডাকপিওন দিয়ে গিয়েছে পুজোর খবর ভরা চিঠি। সেই চিঠিতে লেখা রয়েছে কোন সংগঠন কোন পুজো করছে। তাদের অভিনবত্ব কোথায়? প্রতি বছরই এই চিঠি আসে। কিন্তু প্রতি বারই এই চিঠি যেন নতুন করে নাড়া দিয়ে যায়।
তেলেঙ্গাবাগান দুর্গোৎসব কমিটির এ বারের থিম জগন্ময়ী জগন্নাথ। চণ্ডী পুরাণে জগন্ময়ী-জগন্নাথ এক হয়ে আছেন ভক্তমানসে। এ বারের তেলেঙ্গাবাগানের প্রতিমা দেখলে কোথাও যেন জগন্নাথের আদল খুঁজে পাবেন দর্শকেরা। প্রতিমার রূপে মূর্ত ও বিমূর্তের এক মেলবন্ধন। কাঠের তৈরি মণ্ডপ যেন কাঠ দিয়ে বানানো এক বিশাল রথ। সেই কাঠের রথে থাকবে দুর্গাপুজোর পঞ্চবুড়ির পাঁচ রংয়ের সমাহার। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে খবরের কাগজ দিয়ে তৈরি নানা মোটিফ। এক দিকে মণ্ডপ জুড়ে যেমন থাকবে ঘোর পরাবাস্তবতা তেমনই বিভিন্ন মোটিফে থাকবে বাস্তব ঘটনার নানা প্রতিচ্ছবি।
কাশী বোস লেনের দুর্গাপুজো কমিটির পুজো মণ্ডপে চলে এলে দেখা যাবে ফুলের মেলা। শরৎকালের প্রধান তিনটি ফুল হল কাশ, শিউলি ও পদ্ম। শিল্পী তাঁর রং তুলি থেকে শুরু করে ব্রাশ, তামা, ইলেক্ট্রিক্যাল কিছু জিনিস এমনকী কফি কাপ দিয়েও তৈরি করেছেন নানা রংয়ের ফুল। পুজোর কর্তারা জানাচ্ছেন, তাদের ঠাকুর সাবেক হলেও চালচিত্র থিমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হচ্ছে।
বনহুগলি লেক ভিউ পার্কের সার্বজনীন শারদোৎসব কমিটি এ বার তাদের পুজো মণ্ডপে জারোয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরছে। আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে জারোয়া দ্বীপের রুপোলি বালুকাবেলা, অগভীর সমূদ্রে রঙীন মাছের জলকেলি, নানা রঙের প্রবাল, সেই সঙ্গে জারোয়া সম্প্রদায়ের নানা সংস্কৃতি ফুটে উঠবে এই পুজো মণ্ডপে। শুধু জারোয়া সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি তুলে ধরাই নয় এই সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা ক্রমশই কমে আসায় তাদের কী ভাবে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যও নানা বিষয় তুলে ধরা হবে। বাঁশ, হোগলাপাতা, ধানের বিচালি দিয়ে তৈরি হবে মণ্ডপ।
ভবানীপুর দুর্গোৎসব সমিতির পুজো মণ্ডপ এ বার বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তমকুমারকে উৎসর্গ করে সাজানো হচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, মণ্ডপে স্বর্ণযুগের বাংলা সিনেমার নানা ছবি তুলে ধরা হবে।
সরশুনা মেন রোডের বাসুদেবপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসবের পুজো মণ্ডপে এলে দুর্গার একুশ রূপ দেখতে পাওয়া যাবে। গ্রামবাংলার খড়ের ঘরে আলো আঁধারির মধ্যে দেখা যাবে দুর্গার নানা রূপ। খড় ও বাঁশের মণ্ডপে থাকবে নানা ধরনের আলপনা, সহজ পাঠের নানা ছবি। মণ্ডপে ঢোকার গেটও থিমের সঙ্গে মিলিয়ে করা হচ্ছে। মণ্ডপে এলে দর্শকদের মনে হবে শহরের মধ্যে যেন এক টুকরো গ্রামে চলে এসেছেন।
ডানলপ মোড়ের কাছে অশোকনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে ধানগাছের চারা দিয়ে। তুসো ও শোলার কাজ থাকবে পুরো মণ্ডপ জুড়ে। সাবেক প্রতিমার মাটির সাজ দেখা যাবে। মতিলাল নেহেরু রোডের কিশোর বাহিনী অ্যাথলেটিক ক্লাবের এ বারের
থিম হল ‘থিমের যুগে সাবেকিআনা।’ পুজোকর্তারা জানাচ্ছেন, এ বছর একেবারে অভিনব পদ্ধতিতে মণ্ডপ সাজানো হবে।
বেহালার নন্দনা যুব সঙ্ঘের এ বারের থিম ‘নিরাজনা’। পুজো কর্তারা জানাচ্ছেন পঞ্চদ্রব্য দিয়ে মায়ের যে আয়োজন করা হয় তাকে নিরাজনা বলা হয়। সেই পঞ্চদ্রব্য তৈরি হবে নানা রংয়ের কাগজ দিয়ে। সেই সঙ্গে এই মণ্ডপে এলে মিলবে অন্ধকারে আলোর দিশা। আর সেখানেই মা দুর্গার সন্ধান পাওয়া যাবে। |
|
|
|
|
|