নজরদারির অভাবে নোংরা হচ্ছে মেট্রো
রাতের শেষ মেট্রো তখন সবে চাঁদনি চক স্টেশনে ঢুকেছে। একদল যুবক কামরায় উঠে ভেস্টিবিউলের কাছে দাঁড়ালেন। বেশির ভাগেরই মুখ পান-মশলায় ভর্তি, ঠোঁট লাল। শুরু হল পিক ফেলা। সেন্ট্রাল স্টেশন আসার আগেই জায়গাটা ভরে গেল লাল থুতুতে। কয়েক জন প্রবীণ যাত্রী প্রতিবাদ করে উঠলেন। প্রথমে ওই যুবকেরা পাল্টা কিছু বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে দুই যুবক পিক ফেলেছিলেন, তাঁদের দিয়েই মোছানো হল ভেস্টিবিউলের গায়ে লেগে থাকা পিকের দাগ।
দুপুর দেড়টা। দমদমের প্ল্যাটফর্মে ঢুকল বাতানুকূল মেট্রো। দরজা খুলতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল ভিড়। প্রথম কামরায় ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে উঠতে গিয়ে কী যেন একটা পায়ে আটকে যাওয়ায় পড়েই গেলেন এক প্রৌঢ়। পরে দেখা গেল, কে বা কারা জল খেয়ে সিটের তলায় খালি বোতল ফেলে গিয়েছিল। কারশেডে মেট্রোর কামরা পরিষ্কার করার পরেও সেটা রয়ে গিয়েছিল। তাতেই পা আটকে পড়ে যান ওই প্রৌঢ়।
শুধু এই দু’টি ঘটনা নয়। এ রকম ভাবেই আকছার নোংরা হয় মেট্রো আর তার প্ল্যাটফর্ম। কলকাতার গর্বের মেট্রোর বহু স্টেশনেই পড়ে থাকে জলের খালি বোতল, খাবারের বা গুটখার খালি প্যাকেট। স্টেশনে ঢোকার মুখে দু’পাশের সিঁড়ির দেওয়াল আর নর্দমা পানের পিকে রঙিন। গুটখার পিকের অত্যাচারে ক্ষতি হচ্ছে মেট্রোর। মেট্রো-কর্তাদের বক্তব্য, এতে দৃশ্য-দূষণ তো হচ্ছেই, ওই সব পান-মশলার রাসায়নিকে স্টিল বা লোহার প্লেটেও মরচে লেগে ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে।
অচেতন: পান-গুটখার পিকে নোংরা হচ্ছে মেট্রো স্টেশনগুলির চত্বর।
দমদম থেকে নিয়মিত ধর্মতলায় অফিসে আসেন বিপ্রতীপ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “প্রতিবাদ করে কখনও কখনও লাভ হয় বটে। কিন্তু পরিষ্কার কামরাতেও যাঁরা পানের পিক ফেলতে পারেন, তাঁদের বুঝিয়ে বিশেষ লাভ নেই।” নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, প্রতিটি স্টেশনে শুধু জরিমানার বিজ্ঞপ্তি টাঙালেই হবে না, মেট্রো-কর্তৃপক্ষকে কড়া হাতে এটা দমন করতে হবে।
বেসরকারি বিমা সংস্থার কর্মী অর্পিতা কর্মকার রোজ সকালে সাড়ে ৮টার ট্রেনে টালিগঞ্জ থেকে পার্ক স্ট্রিট যান। ফেরেন রাতে। তাঁর কথায়, “আগে স্টেশনে খাবার নিয়ে ঢোকা যেত না, নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন অনেকেই রোল, চিপ্স, ঝালমুড়ির প্যাকেট নিয়ে খেতে খেতে স্টেশনে ঢুকছেন। খাওয়া হয়ে গেলে লাইনেই ফেলে দিচ্ছেন প্যাকেট। কোনও নজরদারি নেই।”
যাত্রীরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি স্টেশনেই সিসিটিভি রয়েছে। কলকাতা পুলিশ ছাড়াও রয়েছে আরপিএফ। কিন্তু কেউই গা করছেন না। মেট্রো-কর্তৃপক্ষের সাফাই, ট্রেন ও প্ল্যাটফর্ম চত্বর নোংরা করার জন্য গত এক বছরে মোট ২০১৮ জনের জরিমানা হয়েছে। আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা।
তবে এ বার পুজোয় মেট্রো স্টেশন নোংরা হচ্ছে কি না দেখার জন্য ২০ জনের একটি বিশেষ দল তৈরি হয়েছে। এতে মহিলা ও পুরুষ আরপিএফ থাকছেন। তাঁরা বিভিন্ন স্টেশন ও ট্রেন ঘুরে দেখবেন। মেট্রোর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র জানান, পুজোয় আরও ২৫৩ জন আরপিএফ কর্মীর একটি বিশেষ দল নিয়ে অভিযান চালানো হবে। স্টেশন ও ট্রেন নোংরা না করার জন্য যাত্রীদের সচেতন করতে ঘোষণারও ব্যবস্থা করছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.