শেষ কুলোনো যাবে তো?
দমবন্ধ উৎকণ্ঠার এই প্রশ্নই এখন রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে লেক গার্ডেন্সের কল্যাণী চট্টোপাধ্যায়ের। মাস তিনেক আগে ছেলেকে মার্কিন মুলুকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠিয়েছেন তিনি। দু’বছরের স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম। প্রথম বছরেই খরচ প্রায় ৪৩ হাজার ডলার। যখন পাঠিয়েছিলেন, তখন ডলার ৫৫-র আশেপাশে। সেই হিসেবে খরচ ধরেছিলেন ২৩.৬৫ লক্ষ টাকা। ২০ লক্ষ ব্যাঙ্ক থেকে ধার করার পর বাকিটুকুর সংস্থান করেছিলেন নিজে। অনেক কষ্টে।
কিন্তু তাঁর সেই হিসাব তছনছ করে দিয়েছে টাকা আর ডলারের ‘নতুন সম্পর্ক’। মার্কিন মুদ্রার দর এখন ঘোরাফেরা করছে ৬৫-৬৮ টাকায় (শুক্রবার ডলার ৬৫.২৪ টাকা)। কল্যাণীদেবী হিসাব করে দেখেছেন, ডলার ৬৮ ছুঁলে শুধু প্রথম বছরের পড়ার খরচই হবে ২৯.২৫ লক্ষ। বিদেশে পড়ার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ২০ লক্ষ টাকার বেশি ধার নেওয়ার উপায় নেই। তাই বাড়তি টাকার সংস্থান কোথা থেকে হবে, তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি।
একই ভাবে পাউন্ডের প্যাঁচে নাস্তানাবুদ গড়িয়ার হিমাংশু শেখর বসু। ছেলেকে ম্যানেজমেন্ট পড়াতে ইংল্যান্ড পাঠিয়েছেন তিনি। দেওয়া হয়ে গিয়েছে কোর্সের টাকাও। কিন্তু প্রতি মাসে থাকা-খাওয়ার খোরাক বা হাতখরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছেন। তাঁর কথায়, “আগে মাসে ১০ হাজার টাকার পাউন্ড কিনে পাঠালেই চলত। কিন্তু এখন ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে পাউন্ড। ফলে ওই একই ১০ হাজারে তা মিলছে অনেক কম।” তাই পাউন্ড কেনা কমাতে না-চাইলে বাড়তি টাকার সংস্থান নিয়ে তিনি চিন্তায়।
কল্যাণীদেবী বা হিমাংশুবাবুর মতো দশা সন্তানকে বিদেশে পড়তে পাঠানো প্রায় সমস্ত মধ্যবিত্ত বাবা-মায়েরই। তাঁরা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন, শেষ পর্যন্ত খরচ জোগানো যাবে তো? কোথা থেকে আসবে বাড়তি টাকা? কল্যাণীদেবী বলেন, “বিদেশে পড়ানোর জন্যও আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। খরচ এ ভাবে বাড়লে, তা সামাল দেব কী করে?”
চিন্তা ব্যাঙ্ক-কর্তাদেরও। কারণ, পড়া শেষে চাকরি পেলে তবেই উজ্জ্বল হবে ধারের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা। তাই তাঁরাও চান, যেন ‘অল্প’ কিছু টাকার জন্য পড়াশোনা না আটকায়। কিন্তু ব্যাঙ্কেরও হাত-পা বাঁধা। কারণ, বিদেশে পড়তে ২০ লক্ষ টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই তাদের।
তাই ব্যাঙ্ক কর্তাদের মতে, বিদেশি মুদ্রার দামের ওঠা-পড়ার সমস্যা মাথায় রেখে অবিলম্বে নিয়মের কিছু সংশোধন করা জরুরি। যেমন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্তার দাবি, “ঋণের ঊর্ধ্বসীমা ১০-১৫% বাড়ালে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতে পারে।”
|