আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনাচ্ছিল কয়েক দিন ধরেই। তবে তা যে এ ভাবে আছড়ে পড়বে, কল্পনা করেননি কেউই।
বাজারের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, তা জানা থাকলেও কর্তৃপক্ষ একেবারে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেবেন, ভাবেননি বেসরকারি ফেরো অ্যালয় কারখানার কর্মীরা। পুজোর মুখে ওই কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে দুর্গাপুরে রাতুড়িয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে অন্য নানা কারখানার শ্রমিকেরাও এখনও শঙ্কিত। অন্য কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষও জানিয়েছেন, ডলারের তুলনায় টাকার দাম ক্রমান্বয়ে পড়তে থাকায় এক দিকে যেমন কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়েছে, উৎপাদিত পণ্যের চাহিদাও কমিয়েছে অন্য দেশগুলি। তাই সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
বাম আমলে নয়ের দশকের মাঝামাঝি দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে একের পর এক ফেরো অ্যালয় কারখানা গড়ে ওঠে। সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি উৎপন্ন হয় সেগুলিতে। দেশের নানা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ছাড়াও এই পণ্য রফতানি করা হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুকে ওয়ারিয়া রোডের পাশে বিএসএএল ফেরো অ্যালয় কারখানার প্রথম ফার্নেস গড়ে ওঠে ১৯৯৫-৯৬ সালে। পণ্যের চাহিদা দেখে তার পরপরই আরও একটি ফার্নেস তৈরি হয়। রবিবার বাজারের শোচনীয় পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে কারখানা বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে সেখানে।
ওই শিল্পাঞ্চলে ফেরো অ্যালয় কারখানার সংখ্যা এখন ৩৫টি। বেশ কয়েকটি কারখানার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উৎপাদনের জন্য মলিবডেনাম, টাংস্টেন, নিকেল-সহ নানা কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় তাঁদের। কিন্তু গত কয়েক মাসে টাকার তুলনায় ডলারের দাম বাড়ায় এই সব সামগ্রী কেনার খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য টাকার দামে বিক্রি হওয়ায় আয় একটুও বাড়েনি। এক কারখানা কর্তার কথায়, “ইউরোপের নানা দেশে মন্দা চলায় আমাদের পণ্যের চাহিদাও কমেছে। অনেকেই আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। তাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। সব মিলিয়ে, গত কয়েক মাসে লোকসান বেড়েছে।” দীর্ঘদিন এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে তাঁদেরও কড়া পদক্ষেপ করতে হবে বলে বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি।
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বাজারের পরিস্থিতিকে দায়ী করে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হঠকারী সিদ্ধান্ত। ডলারের দাম তো আর চিরকাল ৭০ টাকা থাকবে না। রাজ্যে যখন নতুন শিল্প আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সেখানে এ ভাবে কারখানা বন্ধ করে দিলে ভুল বার্তা যাবে।” রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিটুর বর্ধমান জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর আবার দাবি, “ডলারের বিনিময়মূল্য নিশ্চয়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে এ রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম থেমে গিয়েছে। উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা কমার পিছনে তা-ও একটি কারণ।”
দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি তথা বর্তমান সদস্য সমীর রায়ের মতে, “শুধু ভারত নয়, বেশ কয়েকটি দেশে ডলারের দাম বেড়েছে। এই অবস্থায় যে সমস্ত দেশে রফতানি করলে সুবিধা মিলবে তেমন বাজার খুঁজে বের করার উপরে জোর দিতে হবে।” এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতাও প্রয়োজন বলে মনে করেন সমীরবাবু। শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “সমস্যায় পড়লে কারখানা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলুন। আমার সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।”
|