ডলারের বলি ১
টাকার পতনে আমদানি পণ্ড, সঙ্কটে শাঁখাশিল্প
চিন্তা তো হচ্ছেই।
অন্যান্য বার পুজো এবং ঈদের আগে কাজের চাপে নাওয়া-খাওয়ার জো থাকে না। এ বার কাঁচামাল কিনতে না পেরে কপালে চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ গভীর হচ্ছে ওঁদের।
ওঁরা মুর্শিদাবাদের ডোমকলের শাঁখাশিল্পী। ডলারের দর চড়ায় বিদেশ থেকে কাঁচামাল জোগাড় করা মুশকিল হচ্ছে। শাঁখা আমদানি প্রায় বন্ধ। এই সুযোগে দর বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশীয় শাঁখ সরবরাহকারীরাও। দু’য়ে মিলে মুশকিলে পড়েছেন শাঁখাশিল্পীরা।
কেবল এ রাজ্য নয়, দেশের অন্যত্রও ডোমকলের শাঁখার কদর আছে। এই শিল্পকে ঘিরেই জীবন-জীবিকা চলে জিৎপুর ও বাজিতপুর গ্রামের। গ্রাম দু’টিতে এলাকার বেশ কিছু গ্রামের কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন শাঁখাশিল্পে। জিৎপুর গ্রামের বাসিন্দা শাঁখা ব্যবসায়ী তরুণ বর্মন বললেন, “অন্য বছর পুজোর কয়েক মাস আগে থেকে চোখের পাতা এক করার সময় থাকে না, এত অর্ডার থাকে।” শ্রমিকেরাও দিন-রাত কাজ করে পুজোর খরচ পুষিয়ে নেন। কিন্তু এ বছর ছবিটা অন্য। “ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে শ্রীলঙ্কা থেকে আসা কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে চেন্নাই থেকে আসা মালেরও। ফলে কাঁচামাল কেনাই কঠিন হয়ে পড়ছে।”
শাঁখাশিল্পে যুক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শাঁখের দাম নির্ভর করে তার আকারের উপরে। শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানি করা হয় আটটি আকারের শাঁখ। সব থেকে বড় হল ‘০০০’ নম্বরের। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে ‘০০’, ‘০’, ১, ২, ৩, ৪, ৫ পর্যন্ত। আমদানিকারীরা জানান, শ্রীলঙ্কার শাঁখের গড়পড়তা মান ভাল। সে কারণেই সেখান থেকে আমদানি করা শাঁখের ভাল চাহিদা রয়েছে। ৫ নম্বর শাঁখ আকারে সব থেকে ছোট। এক মাস আগেও ৫ নম্বর শাঁখের দাম ছিল (প্রতি পিস) ভারতীয় মুদ্রায় ৯০ টাকার আশপাশে। টাকার দাম গোঁত্তা খাওয়ায় তা এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩২ টাকায়। অন্য দিকে ‘০০০’ নম্বরের শাঁখের দাম ছিল (প্রতি পিস) ভারতীয় মুদ্রায় ৯০০ টাকার আশেপাশে। এখন তার দাম দাঁড়িয়েছে ১,২০০ টাকার কাছাকাছি। আমদানিকারী তথা শাঁখ সরবরাহকারীদের অন্যতম শ্যামাপ্রসাদ নন্দী বলেন, “ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা থেকে শাঁখ আমদানি অনেকটাই কমে গিয়েছে। এখন আমরা শাঁখ আনছি তামিলনাড়ু থেকে। দেশীয় শাঁখের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের। কিছু করার নেই।”
কিন্তু মাগ্যিগন্ডার বাজারে তামিলনাড়ু থেকে আসা শাঁখের দরও তো বেড়েছে। সমস্যায় পড়েছেন শাঁখা-ব্যবসায়ীরা। বাজিতপুরের প্রবীর পালের কথায়, “আগে যে সাদা শাঁখ ৬০০ টাকায় কিনতাম, এখন কিনছি ৮০০ টাকায়। কড়ি নামের এক ধরনের উন্নত মানের শাঁখের দাম ৭০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ১,০০০ টাকা।” শাঁখা-শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, প্রমাণ মাপের এক-একটা শাঁখ থেকে ১০টা গোটা শাঁখা তৈরি হয়। যার এক-একটির দাম ৫০০-৭০০ টাকা। তা ছাড়া ওই শাঁখ থেকে ভাঙা অংশ জোড়া দিয়েও কিছু শাঁখা তৈরি হয়। তার দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
ভিন্ রাজ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গের বড় শহরে শাঁখা ফেরি করেন ডোমকলের বাবর আলি। তাঁর কথায়, “এ বছর শাঁখার চড়া দাম শুনে ক্রেতারা চমকে উঠছেন। এক লাফে অনেকটা দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্য বছরের তুলনায় শাঁখা বিক্রিও কম হচ্ছে।”
ডোমকলের বিডিও রবীন্দ্রনাথ মিশ্র বলেন, “ডোমকলের ওই দু’টি গ্রাম এই শাঁখাশিল্পকে ঘিরেই সমৃদ্ধ। ওই এলাকার কেউ না কেউ কোনও না কোনও ভাবে জড়িয়ে আছেন এই শিল্পের সঙ্গে। এই সময় সরকারি কোনও সাহায্য নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো যায় কি না, সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইব।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সন্দীপ দত্ত বলেন, “জিৎপুর এলাকার শাঁখাশিল্পের জন্য ইতিমধ্যেই এক কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ওই টাকায় উৎপাদন ও বিক্রির জন্য শেড তৈরি হবে। তবে এই সময়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, শাঁখাশিল্পীরা আমাদের লিখিত ভাবে জানালে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখব।”
শাঁখাশিল্পী সাইফুল ইসলাম, অনিমেষ কর্মকারেরা জানান, সাধারণত দৈনিক ৩৫০-৪০০ টাকা আয় তাঁদের। উৎসবের মরসুমে তা দৈনিক ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। তাঁদের উদ্বেগ, “ডলারের দাম না কমলে শ্রীলঙ্কার শাঁখ আসবে না। তামিলনাড়ুর শাঁখের দামও কমবে না। শাঁখার দাম বাড়লে রোজগার আরও কমবে আমাদের। উৎসবের সময়ে চলবে কী ভাবে!”

(সহ প্রতিবেদন: নুরুল আবসার)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.