বাজার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন কাকতালীয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নতুন গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে রঘুরাম রাজনও বলেছেন, অর্থনীতিতে অলৌকিক ভাবে এখনই প্রাণ ফিরে আসা অবাস্তব কল্পনা। কিন্তু তাঁর হাল ধরার পর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনেও ভাল রকম বেড়ে টাকা ও সেনসেক্স জানিয়ে দিল, রঘুরাম রাজনের প্রতিই বাজারের অটল আস্থা। অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও এ দিন লোকসভায় লগ্নিকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, টাকা স্থিতি ফিরে পাবেই এবং অর্থনীতিও বৃদ্ধির পথেই ফিরবে।
রাজন নতুন গভর্নর হওয়ার পরে বৃহস্পতিবারই ছিল বাজারে লেনদেনের প্রথম দিন। টাকাকে টেনে তুলতে এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তাঁর দাওয়াইকে স্বাগত জানাল বাজার। ডলারে টাকার দাম এক ধাক্কায় বেড়ে গেল ১০৬ পয়সা। বাজার বন্ধের সময়ে এক ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৬.০১ টাকা। গত ২৯ অগস্টের পর টাকা এতটা বাড়েনি। তাল মিলিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ছিল সেনসেক্সও। ৪১২ পয়েন্ট বেড়ে তা থামে ১৮,৯৭৯.৭৬ পয়েন্টে। যা গত তিন সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভ ঘরে তুলেছে ব্যাঙ্কিং শিল্পের শেয়ার। রঘুরাম রাজনকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের সূত্র ধরেই ব্যাঙ্কিং শিল্পের সূচক বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে আর্থিক ক্ষেত্রকে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা এবং ব্যাঙ্কিং শিল্পের আরও সংস্কারের পথে হাঁটার যে ইঙ্গিত রাজন দিয়েছেন, তাতেই এ দিন চাঙ্গা হয়ে ওঠে ব্যাঙ্কিং শিল্পের শেয়ার। শেয়ার বাজার চাঙ্গা হওয়ায় উল্লেখযোগ্য হারে পড়েছে সোনার দামও।
বুধবার বিকেলে রাজন দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতি ও টাকার হাল ফেরাতে নয়া পথনির্দেশ (তাঁর কথায় ‘বিগ ইনিশিয়াল প্যাকেজ’) ঘোষণার আগেই বন্ধ হয়ে যায় শেয়ার ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। তা সত্ত্বেও যেহেতু তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার দিনটি নির্ধারিত ছিল, সেই কারণে তাঁর উপর আস্থা রেখেই ডলারে টাকা বেড়ে যায় ৫৬ পয়সা। দিনের শেষে প্রতি ডলারের দর দাঁড়ায় ৬৭.০৭ টাকা। শেয়ার কেনার হিড়িক পড়ে যায় শেয়ার বাজারেও। সেনসেক্স দিনের শেষে বেড়ে যায় ৩৩৩ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সেনসেক্স ছিল ১৮,৫৬৭.৫৫ পয়েন্টে। তখনই বিশেষজ্ঞরা বৃহস্পতিবার বড় উত্থানের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। কার্যত তাঁদের সেই ইঙ্গিতই সত্যি প্রমাণিত হল।
প্রসঙ্গত, রাজন বুধবারই রফতানিকারীদের বৈদেশিক মুদ্রার আগাম লেনদেনে সুবিধা ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, অনাবাসী ভারতীয়দের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে বিনিময় হারে বিশেষ ছাড় ঘোষণা করেছেন তিনি। বাজার সূত্রের খবর, শুধু এই নয়া বিনিময় হারের জেরেই বাড়তি ১,০০০ কোটি ডলার আয় হয়েছে ব্যাঙ্কগুলির। এর প্রভাবেই লগ্নিকারীরা মূলত ব্যাঙ্কের শেয়ার কিনতে ভিড় করেন বলে মনে করছেন লেনদেনকারীরা।
টাকার হাল ফেরা প্রসঙ্গে আশাবাদী চিদম্বরম এ দিন বলেছেন, মে মাস থেকেই ডলারে টাকার দাম পড়ছে। তাই এ বার তা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাই বেশি। তবে টাকা কতটা উঠবে, তা সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার উপরই নির্ভর করছে। অর্থনীতি যে চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা এ দিন ফের কবুল করেন চিদম্বরম। তবে তিনি বলেন, তা সত্ত্বেও ডলারে টাকার যতটা অবমূল্যায়ন ঘটেছে, তাতে প্রকৃত মূল্যের তুলনায় অনেক নীচে নেমে গিয়েছে টাকা। এই কারণেই এ বার টাকা বৃদ্ধির বৃত্তে প্রবেশ করবে বলে তাঁর ধারণা। গত মাসেই ডলারে টাকা সবচেয়ে নীচে নেমে ছুঁয়েছিল ৬৮.৮০। তার পর থেকে তা আর অত বেশি তলানিতে নামেনি।
|
অনাবাসী ভারতীয়রা স্বদেশের সংস্থার শেয়ার বা ডিবেঞ্চার হাতে নিতে চাইলে গ্যারান্টি দিতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আজ এতে সায় দিয়েছে। এই গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য তাদের শীর্ষ ব্যাঙ্কের আগাম অনুমতি নিতে হবে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খোলা প্রস্তাব, হস্তান্তর, নথিভুক্তি বাতিল হওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে। তবে এ ধরনের লেনদেন সেবি-র আইন মেনেই করতে হবে বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
|