চাষিদের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার যৌথ চাষের ব্যাপারে নীতিগত ভাবে রাজি হলেও আইনি ছাড়পত্র এখনও দেয়নি রাজ্য সরকার। তবে তার আগেই এ রাজ্যের চাষিদের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে কলা চাষে নামছে বারাক ওবামার প্রশাসন।
মার্কিন সরকারের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা ‘ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ (ইউএসএড) আগামী দু’বছর রাজ্যে উন্নত মানের কলা চাষের জন্য বিনিয়োগ করবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় এই প্রকল্পে তাদের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে বণিকসভা কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইআই)। প্রকল্পে প্রাথমিক ভাবে প্রায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে মার্কিন সংস্থাটি।
তবে চাষিদের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে কলা চাষের এই প্রকল্প সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কিছুই জানা নেই রাজ্যের। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং উদ্যান পালন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত সাহার কথায়, “এমন কিছু হচ্ছে বলে শুনিনি। খোঁজ নেব। চাষিদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে এ রাজ্যে কৃষিতে মার্কিন বিনিয়োগ হলে ভালই। কিন্তু সরকারকে জানিয়েই এই ধরনের কাজ হওয়া উচিত।” মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “এ রাজ্যের কৃষিতে মার্কিন সংস্থা বিনিয়োগ করলে স্বাগত। কিন্তু
দেখতে হবে, চাষিদের সঙ্গে এমন কোনও চুক্তি না হয়, যেখানে ফসলের ঠিক দাম পাওয়া যাবে না। চাষিদের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখে যে কোনও সংস্থা এ রাজ্যে এলে সরকারের আপত্তি নেই।”
কী ভাবে এ রাজ্য কলা চাষ প্রকল্প করবে মার্কিন সংস্থা?
ঠিক হয়েছে, ইউএসএড-এর বাছাই করা দু’টি সংস্থা এই চুক্তি চাষের দায়িত্ব থাকবে। একটি সংস্থা চাষিদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং পদ্ধতিগত খুঁটিনাটি জানাবে। এদের দায়িত্ব থাকবে ফল ফলানো পর্যন্ত। অন্য সংস্থাটি গ্রামে গিয়ে চাষিদের কাছ থেকে ওই কলা কিনে নেবে। তার পর সরাসরি তা কলকাতা, দিল্লির বাজারে বিক্রি করবে কিংবা বাইরে রফতানি করবে। মোট ৩০০০ চাষির সঙ্গে চুক্তি করা হবে। প্রায় ১৫০০ চাষির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
চাষিদের সঙ্গে চুক্তি করবে যে সংস্থা, তাদের এক মুখপাত্র জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় দেশি পদ্ধতিতে যে কলা চাষ হয়, তাতে প্রতি কাঁদিতে ২০ কেজি মতো ফলন হয়। কিন্তু টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি জি-৯ প্রজাতির কলায় উৎপাদন হয় কাঁদি প্রতি ৩৫ কেজি। হলুদ রঙের বড় আকারের এই কলার কাঁদির উপর থেকে নীচ পর্যন্ত প্রতিটিই আকারে এক রকম। ফলে বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। ইদানীং বিভিন্ন শপিং মলেও এই কলা পাওয়া যায়। চুক্তির পর চাষিদের নতুন প্রজাতির কলার চারা দেওয়া হবে। দেওয়া হবে চাষের ব্যাপারে যাবতীয় প্রশিক্ষণও।
অন্য দিকে যে সংস্থা চাষিদের কাছ থেকে কলা কিনবে, তার এক কর্তা জানান, এ রাজ্যে কলা বিক্রি হয় কাঁদি-প্রতি দরে। ফলে চাষিরা তেমন দাম পান না। কিন্তু তাঁরা সরাসরি গ্রামে গিয়ে কলা কিনবেন কেজি দরে। চাষিদের আর ফড়েদের কাছে কম দামে ফসল বিক্রি করতে হবে না।
ওই কর্তার দাবি, সংস্থার দেশব্যাপী কৃষিপণ্যের কারবার থাকায় তাঁরা সরাসরি এ রাজ্যের কলা অন্য রাজ্যের বড় শহরে পৌঁছে দিতে পারবেন। জি-৯ প্রজাতির কলা উৎপাদনে মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের একচেটিয়া আধিপত্যও ভেঙে দেওয়া যাবে বলে মনে করেন ওই কর্তা।
কিন্তু এ রাজ্যের প্রতি মার্কিন সংস্থার এই আগ্রহ কেন? বিশেষ করে প্রাক্তন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিনটন থেকে শুরু করে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল যখন কলকাতায় এসেও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজি করাতে পারেননি!
প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআইআই-এর ডিরেক্টর (অনুদান ব্যবস্থাপনা) তরুণ টন্ডনের কথায়, “সত্তরের দশকে সবুজ বিপ্লবের সুফল সে ভাবে পায়নি দেশের পূর্বাঞ্চল। তাই কেন্দ্রীয় সরকার কৃষির অগ্রগতির জন্য পূর্ব ভারতে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেছে। পূর্বাঞ্চলে কৃষির উৎপাদন, বাজার তৈরি, আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ বিষয়ে ইউএসএড এবং সিআইআই একই রকম চিন্তার শরিক। সেই কারণেই মার্কিন সংস্থার সহায়তায় পশ্চিমবঙ্গে চুক্তি-ব্যবস্থায় কলা চাষের পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
তরুণদেবী জানান, আপাতত দু’বছরের জন্য এই চাষ হচ্ছে। তার পর পরিস্থিতি বুঝে এলাকা বাড়ানো হবে অথবা প্রকল্প গুটিয়ে নেওয়া হবে। |