|
|
|
|
হাওড়ায় আন্ত্রিক |
‘অপদার্থ’ বাম বোর্ড, মেয়রের পদত্যাগ চাইলেন পুরমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
আন্ত্রিক ক্রমশই ছড়াচ্ছে হাওড়ায়। আর তার জন্য বামফ্রন্ট শাসিত পুরসভার ‘অপদার্থতা’কেই দায়ী করে এ বার হাওড়ার মেয়রের পদত্যাগ দাবি করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর বক্তব্য, “যে পুরসভা এত বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও সাধারণ মানুষকে পরিশুদ্ধ জল দিতে পারে না, সেই পুরবোর্ডের আর ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়।” পুরমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হাওড়ার মেয়র মমতা জায়সবালের উত্তর, “কারা ক্ষমতায় এলে মানুষের কী হাল হবে, গত দু’বছর ধরে মানুষ তা দেখছেন। তাই কাদের পদত্যাগ করা উচিত, মানুষ তা জানেন।”
আর দু’মাস পরেই হাওড়া পুরসভার নির্বাচন। তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আন্ত্রিককে কেন্দ্র করে সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের এই বাদানুবাদ ভোটের ময়দানে নামারই পূর্ব প্রস্তুতি।
গত চার-পাঁচ দিনে হাওড়া ও বালি পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর প্রথম দিনই জানিয়ে দেয়, নর্দমার জল পুরসভার সরবরাহ করা পানীয় জলের সঙ্গে মিশে যাওয়াতেই এই বিপত্তি। ওই বিষাক্ত জল থেকেই আন্ত্রিক ছড়িয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এই অভিযোগ অবশ্য প্রথমে মানতে চাননি মেয়র। তিনি দাবি করেছিলেন, যেহেতু আন্ত্রিক বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন এলাকায় হচ্ছে, তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে জলের দূষণ থেকে এই রোগ হয়নি।
যদিও পদ্মপুকুরের পানীয় জল দূষিত হওয়ার জন্যই যে আন্ত্রিক ছড়িয়েছে, মঙ্গলবার তা কার্যত মেনে নিয়েছেন হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক শুভাশিস সরকার। তিনি এ দিন বলেন, “পানীয় জল দূষিত হওয়ার জন্যই আন্ত্রিক ছড়ায়। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে জল-দূষণ যে কিছুটা হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না।”
এ দিকে, পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া হিসেব থেকেই প্রমাণিত, মঙ্গলবারও আন্ত্রিকের প্রকোপ কমার কোনও লক্ষণ নেই। এ দিন বিকেলে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে এই রোগের উপসর্গ নিয়ে হাওড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এই তথ্য জানার পরেই পুরমন্ত্রী বলেন, “গত ২৪ বছর ধরে পুরসভায় থাকার পরেও বামফ্রন্ট বোর্ড মানুষকে শুদ্ধ জল খাওয়াতে পারে না। জল খেয়ে এত মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাজেই এই বোর্ডের আর ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। মেয়রের উচিত এখনই পদত্যাগ করে আমাদের হাতে বোর্ড তুলে দেওয়া। দেখিয়ে দেব, কী ভাবে পুরবোর্ড চালাতে হয়।” তার উত্তরে মেয়রের বক্তব্য, “পদ্মপুকুর জলপ্রকল্প তৈরি করে ১৯৮৭ সাল থেকে বামফ্রন্টশাসিত পুরবোর্ড হাওড়ার মানুষকে জলের সমস্যা থেকে বাঁচিয়েছে। হাওড়া পুরসভা এত দিন যদি পরিশুদ্ধ জল সরবরাহ না করত, তা হলে মানুষের অসুস্থতার হার আরও বাড়ত। কিন্তু তা কী হয়েছে?”
এ দিকে, আন্ত্রিক নিয়ে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় এ দিন বলেন, “আন্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে সব রকমের জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলিতে কর্মী ও চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ, স্যালাইন রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতে নিষেধ করা হয়েছে। আন্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের জন্য পুরসভার স্বাস্থ্য অফিসারকেও কাজে লাগানো হচ্ছে।”
দেবাশিসবাবু জানান, জল থেকে যে সংক্রমণ ছড়িয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে। তিনি এ দিন বলেন, “আজ জেলার সহ-স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রসূনকুমার দাসের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসকের দল উত্তর হাওড়ায় ঘোরার সময়ে দেখেছেন, কী ভাবে নর্দমার জল পানীয় জলের সঙ্গে মিশছে। আমরা ওই জলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছি।” |
পুরনো খবর: আন্ত্রিক ছড়াচ্ছে হাওড়ায়, কারণ নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই মহল |
|
|
|
|
|