বোমাটি ছিল উচ্চক্ষমতার। মূল উপাদান অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। তীব্রতা বাড়ানোর জন্য তার সঙ্গে মেশানো হয়েছিল জ্বালানি তেলও। স্প্লিন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল লোহার আংটা।
আর ছিল বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য অনর্থক তাড়াহুড়ো। ছিল না সতর্কতার বিধি মানার যথেষ্ট তাগিদ।
জঙ্গি সংগঠন কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা কেএলও-র তৈরি ওই ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) নিষ্ক্রিয় করার সময়ে ভীষণ তাড়াহুড়ো করেছিল সিআইডি-র বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড। আর তাতেই আলিপুরদুয়ারে ওই আইইডি বিস্ফোরণে সিআইডি-র কনস্টেবল লালবাহাদুর লোহারের মৃত্যু হয়। বিস্ফোরণের তদন্তের পরে এমনটাই দাবি সিআইডি-র। এই ব্যাপারে সিআইডি-র অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল শিবাজী ঘোষের কাছে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে।
গোয়েন্দাদের দাবি, জ্বালানি তেল ব্যবহার করায় বিস্ফোরণের পরে গোটা এলাকা কালো ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছিল। তদন্তকারীদের দাবি, ফাঁকা মাঠ না-হয়ে কোনও জনবহুল জায়গায় ওই বিস্ফোরণ ঘটলে হতাহত এবং অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতো। বোমাটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, ঘটনাস্থলে কয়েক ফুট গভীর গর্ত হয়ে যায়। তদন্তকারীরা জানান, বিস্ফোরণে নিহত কনস্টেবলের মুখের বাঁ দিকটা উড়ে যায় এবং তার থেকেই বিস্ফোরণের তীব্রতা বোঝা গিয়েছে। |
তবে ওই আইইডি-র টাইমার ডিভাইসে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে রাখার ফলেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল কি না, তদন্তকারীরা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। ঘটনাস্থলে পাওয়া নমুনা দেখে প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, টাইমার ডিভাইসের কারণেই বিস্ফোরণ হয়েছিল। পরীক্ষার জন্য ওই সব নমুনা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ভবানী ভবন সূত্রের খবর, ওই বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময় অনুসরণীয় ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ (এসওপি) বা সাধারণ নিয়ম মানা তো হয়ইনি। তার উপরে সিআইডি-র বোমা নিষ্ক্রিয়কারী বাহিনী অনর্থক তাড়াহুড়ো করেছিল। তারই খেসারত দিতে হয়েছে ওই কনস্টেবলকে। ঘটনাস্থল ঘুরে এসে সিআইডি-র আইজি (১) জগমোহন রিপোর্ট দিয়েছেন এডিজি-কে। সেই রিপোর্টে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী বাহিনীর তাড়াহুড়োর কথাই বলা হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। মঙ্গলবার জগমোহন ওই রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি।
তাড়াহুড়োটা কেমন ছিল?
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ২৯ অগস্ট সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারের বলাই মেমোরিয়াল ক্লাবের মাঠে পৌঁছন বোমা নিষ্ক্রিয় বাহিনীর তিন সদস্য। আর তার ১৫ মিনিটের মধ্যেই বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, এত তাড়াহুড়োর দরকার ছিল না। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ বোমাটি উদ্ধার করে সুরক্ষিত জায়গাতেই রেখেছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও ওই বোমার ধারকাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। গোয়েন্দারা মনে করছেন, আরও সময় নিয়ে, নিয়ম মেনে ধৈর্য ধরে সব পরীক্ষা করার পরে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করতে গেলে হয়তো প্রাণহানি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যেত।
বোমাটি কাদের তৈরি?
গোয়েন্দাদের দাবি, কেএলও-র নতুন ব্যাচের সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গে টম অধিকারীর মতো পুরনো সদস্যেরা বিস্ফোরক তৈরিতে জড়িত। তাদের কয়েক জন রাজ্যের বাইরে গা-ঢাকা দিয়ে আছে বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা মঙ্গলবার বলেন, “কেএলও যে জড়িত, সেই ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। এলাকায় নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর জন্যই ওই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে কেএলও।” ঘটনার দিন দু’জন ধরা পড়লেও তার পরে আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
অগস্টে আলিপুরদুয়ারের বারবিশা বাসস্ট্যান্ডে বাসে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাতেও তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। তবে বারবিশার সঙ্গে আলিপুরদুয়ারের বিস্ফোরণের যোগ নেই বলে সিআইডি-কর্তাদের দাবি। |