জোড়া চাপে নরম গুরুঙ্গ
মমতার চার দাওয়াই, বনধে আপত্তি শিন্দেরও
কালিম্পঙে ভিড় উপচে পড়া লেপচাদের জনসভায় পাহাড়কে ছন্দে ফেরাতে চারটি কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লিতেও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিনিধিদের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে জানিয়ে দিলেন, আগে বনধ তুলতে হবে, তার পর অন্য কথা। এই জোড়া চাপের মুখে পড়ে বনধ তোলার ইঙ্গিত দিলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তবে স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রের ‘অনুরোধ’কে ঢাল করে। রাজ্যের চাপের কাছে নতিস্বীকারের কথা স্বীকার করে নয়।
মঙ্গলবার দুপুরে কালিম্পঙের মেলার মাঠে আয়োজিত সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বনধ তুলতেই হবে। আন্দোলনকারীরা দিল্লি থেকে ওবামা, যেখানেই যাক, আমি প্রাণ থাকতে বাংলা ভাগ হতে দেব না। তা ছাড়া, জাতিসত্তার আন্দোলনের নামে দিনের পর দিন পাহাড়ের সব জনজাতিকে ঘরে বসে থাকতে বাধ্য করাটা কখনও মেনে নিতে পারব না। পাহাড়ের মানুষের স্বার্থেই উন্নয়ন চালু করতে হবে। ছন্দে ফেরাতে হবে পাহাড়কে।”
সেই ছন্দে ফেরানোর প্রক্রিয়া হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন,
জিটিএ-র বৈঠকে মোর্চা যোগ না-দিলে রাজ্যই পাহাড়ে ১০০ দিনের কাজ চালু করিয়ে দেবে। জিটিএ-র প্রধান সচিব রামদাস মিনা সেই কাজের সমন্বয় সাধন করবেন।
পাহাড়ের রেশন দোকান অবিলম্বে না-খোলা হলে ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করে তা পাহাড়ের ইচ্ছুক মহিলাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
সরকারি কর্মীরা বন্ধের অছিলায় দিনের পর দিন অফিসে গরহাজির থাকলে, তাঁদের জায়গায় পাহাড়ের বেকার যুবক-যুবতীদের নিয়োগ করবে রাজ্য। এবং
কোনও স্কুলে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পড়ুয়াদের মধ্যে প্রচার করা হলে তার অনুমোদন বাতিল করার কথা ভাবা হবে।
পাশেই আছি। লেপচা সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার কালিম্পঙে বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
মমতার এই ঘোষণার কিছু ক্ষণ বাদেই দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ যশোবন্ত সিংহ এবং মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি-সহ অন্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে শিন্দে তাঁদের বন্ধ তোলার পরামর্শ দেন। জিটিএ না-ছাড়ার কথাও বলেছেন তিনি। সেই সঙ্গে শিন্দে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, রাজ্যকে এড়িয়ে পাহাড় নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করা হবে না। তবে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি। মোর্চার নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার নিয়ে রোশনদের নালিশের উত্তরেও শিন্দে জানিয়ে দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। কেন্দ্র সেখানে কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
শিন্দের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে যশোবন্ত বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিষয়টি যথেষ্ট জটিল। কাজেই এর কোনও তাৎক্ষণিক জবাব হতে পারে না। উনি কেন্দ্র, রাজ্য ও জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকবেন। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করবেন। একই সঙ্গে বনধ-বিক্ষোভ প্রত্যাহার করতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।”
মোর্চা সূত্রে বলা হচ্ছে, বনধ নিয়ে চাপের মুখে সম্মানজনক একটা পথ খুঁজছিলেন গুরুঙ্গ। শিন্দের অনুরোধ সেই পথ খানিকটা হলেও খুলে দিয়েছে। শিন্দের সঙ্গে বৈঠকের পরে গুরুঙ্গকে ফোন করেন রোশন। তার পরই মোর্চা সভাপতি বলেন, “দিল্লিতে বৈঠক খুব ভাল হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছেন। সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।”
রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলাও রোশনদের দিল্লি যাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য বলে মোর্চা সূত্রে খবর। ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার ব্যাপারে শিন্দের আশ্বাসের উপরেই আপাতত ভরসা করছেন গুরুঙ্গরা। মহাকরণ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, মাস দু’য়েক আগেই একটা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। তাই তড়িঘড়ি আবার একটা বৈঠক ডাকার পক্ষপাতী নয় রাজ্য। তবে পাহাড়ের জনজীবন স্বাভাবিক রাখলে উন্নয়ন নিয়ে মোর্চার সঙ্গে কথা হতেই পারে।
নর্থ ব্লক সূত্রের খবর, প্রথমেই রাজনৈতিক স্তরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে না। অর্থাৎ, কেন্দ্র বা রাজ্যের কোনও মন্ত্রী প্রথমে বৈঠকে যোগ দেবেন না। আগে সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে কথা বলা হবে।
নিসর্গের টানে

মুখ্যমন্ত্রীর লেন্সে ঝর্না। কালিম্পঙের কাছে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
জিটিএ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চাপের মুখে আজ, বুধবার দার্জিলিঙে জিটিএ-র নতুন প্রধান নির্বাচনের সভায় মোর্চা যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন গুরুঙ্গ। তবে সাম্প্রতিক আন্দোলনে ধৃত মোর্চার প্রায় ৯৫০ নেতা-কর্মীকে মুক্তি দেওয়া না-হলে পূর্ণাঙ্গ সভা করা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। গুরুঙ্গের কথায়, “আমরা জিটিএ সভায় যোগ দিলেও ধৃতদের মুক্তির দাবিতে প্রস্তাব নিয়েই সভা শেষ করে দেব।”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কালিম্পঙের সভায় ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, জিটিএ চালানোর ব্যাপারে তিনি কোনও পূর্বশর্ত মানবেন না। মোর্চার ফতোয়া উপেক্ষা করে সভায় উপচে পড়া ভিড় যে তাঁকে অবস্থানে অনড় থাকার সাহস জুগিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। পরে উচ্ছ্বসিত মমতা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে যত মানুষ এখানে জড়ো হয়েছেন, আমি তাঁদের চোখে উদ্দীপনা এবং দৃঢ়তার প্রতিফলন দেখেছি। তামাঙ্গ ভাইবোনেরাও এসেছেন দেখে আমি খুবই আনন্দিত। স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভরা।’
সভায় তিনি বলেন, “পাহাড়ের মানুষকে ঘরে বসিয়ে রেখে নিজের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পাঠানো আমজনতা মানবে না। নেতারা রেশন মজুত করে খাবেন, জনতা খেতে পাবে না, এটাও হতে পারে না। কাউকে ঘরে বসিয়ে রাখার ফতোয়া দিলে তা মানা যাবে না। অতীতে স্বেচ্ছাচারী রাজাও এমন ফতোয়া দিতেন না। কয়েক জন আন্দোলনের নামে যা খুশি নির্দেশ দেবে, সকলে মুখ বুজে মেনে নেবে, এটা যে হবে না, সেটা এখন স্পষ্ট।”
এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী সভায় যান। সেখানে তখন বৃষ্টি মাথায় করে উপচে পড়ছে লেপচা সম্প্রদায়ের মানুষের ভিড়। ‘ইন্ডিজেনাস লেপচা ট্রাইবাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি লেনসোঙ্গ তামসাঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁদের সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সম্মান ‘কিনচোম ডারমিট’ (ভাগ্য বিধাতা) জানিয়ে স্মারক ও মানপত্র তুলে দেন। তিনি বলেন, “আমরা অভিভূত! দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী লেপচাদের জন্য ভাবলেন। আলাদা উন্নয়ন পর্ষদ গড়ে দিলেন। উনি যেন আমাদের ভাগ্য বিধাতা!”

মেলার মাঠে লেপচা সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের পরে কালিম্পঙের পাহাড়ি পথে
হাঁটতে বেরিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পথে স্কুল পড়ুয়াদের আবদার
মেটাতে সইও বিলোন তিনি। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন কিশোর সাহা।
সভায় যে ভিড় হয়েছে তা স্বীকার করেছেন গুরুঙ্গও। তবে তাঁর কথায়, “ওই ভিড়ের বেশির ভাগই কালিম্পঙের বাইরে থেকে এসেছেন। সিকিম, ভুটান, জয়গাঁ-সহ নানা এলাকা থেকে লেপচাদের আনা হয়েছিল বলে খবর পেয়েছি। বাকিরা তৃণমূল কর্মী-সমর্থক, পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান।” সেই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “সভামঞ্চের রং ছিল নীল। অথচ লেপচাদের অনুষ্ঠানে নীলের সঙ্গে মেরুন ব্যবহার করাই প্রথা। তাই আমার তো মনে হচ্ছে, ওটা তৃণমূলেরই সভা ছিল। যাই হোক মুখ্যমন্ত্রী অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও ক’টি যে পূরণ হবে, কে জানে!”
পাশাপাশি তাঁর ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়াশোনার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন গুরুঙ্গ। তিনি বলেন, “আমার দুই ছেলে-মেয়ে দেশেই থাকে। মেয়ে আইনজীবী, সে এখন দিল্লিতে।
আর ছেলে পাহাড়ের স্কুলেই পড়াশোনা সেরে এখন বেঙ্গালুরুতে পড়াশোনা করছে।”

ধন্যবাদ দার্জিলিং, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কালিম্পং এবং কার্শিয়াং। সর্বত্রই স্বাভাবিক বাতাবরণ আর শান্তির সুর অনুভব করছি। আমি আপনাদের জন্য গর্বিত। দার্জিলিংকে আমি স্বপ্নের গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

লেপচাদের উন্নয়নে
উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ বেড়ে দেড় কোটি
পর্ষদ ভবনের জন্য কালিম্পঙে জমি
কালচারাল অ্যাকাডেমি গঠনে ১০ লক্ষ
হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ ও বিপণন কেন্দ্রে ১০ লক্ষ
কমিউনিটি সেন্টার, লাইব্রেরির জন্য ১০ লক্ষ
আগামী শিক্ষাবর্ষেই প্রাথমিকে লেপচা ভাষা
গৃহহীনদের জন্য ১ হাজার ঘর
গ্রামীণ পুলিশে ৫ হাজার কর্মী নিয়োগ





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.