ঘরে-বাইরে চাপের মুখে পড়ে পদ থেকে ইস্তফা দিতে চলেছেন শিলিগুড়ি পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নান্টু পাল। তৃণমূল সূত্রে খবর, সোমবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দার্জিলিং সফরে যাওয়ার পথে নান্টুবাবুকে কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই মতো আজ, বুধবার নান্টুবাবু পুরসভায় গিয়ে ইস্তফা দেবেন বলে তৃণমূলের এক শীর্ষনেতা জানান। এ ব্যাপারে নান্টুবাবু বলেন, “আমি দলের একজন সৈনিক। দলের সব নির্দেশ মেনে চলব।”
নান্টুবাবুকে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে-ই। ওই দিন কলকাতায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেন নান্টুবাবু। ২৯ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ি পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে চেয়ারম্যানের দলত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখায় বাম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলররা। বোর্ড মিটিংয় ভেস্তে যায়। চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ চেয়ে নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন বাম কাউন্সিলররা। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের তরফে মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত আদালতে দলত্যাগ বিরোধী আইনে নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে মামলা করেন। অনাস্থার সভা ডাকা না হলে বামেরা আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশে অনাস্থা সভায় হেরে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যান নান্টুবাবু। পরে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচনে তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান নান্টু পাল। কংগ্রেস প্রার্থী হন সবিতা অগ্রবাল। তবে চেয়ারম্যান নির্বাচনের সভায় কংগ্রেস এবং বামেরা অংশ নেননি। তৃণমূল কাউন্সিলররা নান্টুবাবুকে ফের চেয়ারম্যান নির্বাচন করলে কোরাম ছাড়া অবৈধ সভা হয়েছে অভিযোগ তুলে বামেরা তা মেনে নিতে আপত্তি করে। কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের একাংশও নান্টুবাবুর উপস্থিতিতে বোর্ড মিটিংয়ে যাওয়া বন্ধ করেন। বাজেট অধিবেশনের দিন তৃণমূল কাউন্সিলরা মেয়রের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। এতে বাজেট পাস নিয়ে বিতর্ক দেখাদেয়। মেয়র তৃণমূলের মেয়র পারিষদদেরও পদ থেকে সরিয়ে দেন।
গঙ্গোত্রী দত্ত যে মামলা করেছিলেন আলাদতের নির্দেশ মেনে জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনার উভয়পক্ষের শুনানির পর পরবর্তীতে নান্টুবাবুর কাউন্সিলর পদও খারিজ করেন। এর পর রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হন নান্টুবাবু। রাজ্য সরকারের তরফে পুর দফতরের এক সচিব বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে আপাতত স্থগিতাদেশ দেন। এর পরে ফের উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন মেয়র। আদালত নির্দেশ দেয় ৬ সপ্তাহ অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আদালতের তরফেও শেষ শুনানি হবে বলে জানানো হয়। তার রায় নান্টুবাবুর বিপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। মান বাঁচাতেই তাই নান্টুবাবু পদ থেকে ইস্তাফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে কটাক্ষ করেছেন পুরসভার বিরোধী বামেরা।
বাজেট পাস নিয়ে বিতর্কের জেরে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের তরফে কেবল ১৬ টি কাজ চালানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। তাতে আটকে পড়েছে পুরসভার উন্নয়নমূলক কাজ। তার জন্য কংগ্রেস তৃণমূল একে অপরকে দুষছেন। নান্টুবাবু পদত্যাগ করলে পুরবোর্ডের পরিস্থিতি কী হয় সেটাই এখন দেখার। |