যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে টমি রব্রেদোর কাছে স্ট্রেট সেটে ৬-৭ (৩-৭), ৩-৬, ৪-৬ হারার পর রজার ফেডেরার নিয়ে জল্পনা নিশ্চয়ই আরও বেড়ে গেল— আর কবে অবসর নেবে টেনিসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম (১৭) চ্যাম্পিয়ন?
২০০২-এর পর এই প্রথম গোটা বছরে চার গ্র্যান্ড স্ল্যামের একটারও ফাইনালে নেই ফেডেরার। খেতাব-টেতাব তো দূর অস্ত। শেষ এগারো বছরের মধ্যে এ মরসুমেই পেশাদার ট্যুরে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে হেরেছে। এক ডজন টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ন’জনের কাছে। শুধু নাদালের কাছেই তিন বার। নিজের প্রিয় সারফেস হার্ডকোর্টে শেষ আট বারই ফেডেরার নাদালকে হারাতে পারেনি।
তা সত্ত্বেও বলব, অবসরের সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি ফেডেরারের নিজের। যেমন সচিন তেন্ডুলকর কবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি অবসর নেবে সেটা একান্তই ও ঠিক করবে। তা ছাড়া, সচিন যেমন নেই-নেই করেও প্রতি তৃতীয় কি চতুর্থ টেস্ট ইনিংসে একটা হাফসেঞ্চুরি করে দিচ্ছে এখনও, তেমনই যেন ফেডেরার। এত খারাপ ফর্ম যাচ্ছে! তা সত্ত্বেও এ বছর একমাত্র উইম্বলডনে দ্বিতীয় রাউন্ড হার বাদে (আর বড়জোর মাদ্রিদ মাস্টার্সে তৃতীয় রাউন্ডে ছিটকে পড়াটা ধরা যায়) সোমবার রাতের আগে কোথাও কোয়ার্টার ফাইনালের আগে হারেনি। অস্ট্রেলীয় ওপেনে এ বারও সেমিফাইনালিস্ট। ফরাসি ওপেনে শেষ আট। রোম মাস্টার্সে ফাইনাল। একেবারে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স কী ভাবে বলবেন?
একটাই আশঙ্কার বিষয়। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম একশোর বাইরে কোনও প্লেয়ারের কাছে ফেডেরার হারছে— এই ছবি শেষ কবে দেখা গিয়েছে সেটা রীতিমতো গবেষণার বিষয় ছিল। কিন্তু শেষ ন’মাসে ফেডেরার দু’-দু’বার সে রকম দুধভাত প্লেয়ারের কাছেও হেরেছে। তার মধ্যে একটা আবার ওর টেনিসের মৃগয়াভূমি উইম্বলডনে ঘাসের কোর্টে! ১১৬ র্যাঙ্কিং প্লেয়ার কোনও এক স্টাকভস্কি হারিয়ে দেয় ফেডেরারকে। সেই ম্যাচের মতোই গত রাতে টমি রব্রেদোর কাছে ফেডেরারের স্ট্রেট সেটে হারেরও ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছি না। যদি না, নাদালকে পরের ম্যাচেই খেলতে হবে সেই ভয়ে আগেভাগে হেরে গিয়ে থাকে রজার! কিন্তু সেটা তো রকের আড্ডার নিছক রসিকতা। |
|
|
বিজিতের যন্ত্রণা। বিজয়ীর হুঙ্কার। যুক্তরাষ্ট্র
ওপেনে ফেডেরার ও রব্রেদো। ছবি: রয়টার্স |
|
স্প্যানিশ প্লেয়ার রব্রেদোর সঙ্গে ফ্লাশিং মেডোর আগে দশ বারে দশ বারই জিতেছিল ফেডেরার। টিপিক্যাল ক্লে কোর্ট প্লেয়ার রব্রেদো। বেসলাইন থেকে লম্বা র্যালি আর বিগ সার্ভিস শুধু সম্বল। তার সামনেও হার্ডকোর্টে স্ট্রেট সেট হারল ফেডেরার। অথচ বেশি গতির হার্ডকোর্টে ফেডেরারের অ্যাটাকিং খেলার স্টাইল সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। নিউইয়র্কে এ বার আগের তিনটে ম্যাচে ফেডেরারের নেটের সামনে দাপট, প্রচুর উইনার মারা, উদ্ভাবনী শটের আধিক্য দেখে টেনিসরসিকদের অনেকে বলাবলি করছিল, এই তো ভিন্টেজ ফেডেরার! কিন্তু রাতারাতি সেই সব ফেডেরারের র্যাকেট থেকে যেন উধাও রব্রেদো ম্যাচে! কী বলব আচমকা আকাশ থেকে এ ভাবে মাটিতে আছড়ে পড়াকে? খুব কাছাকাছি ব্যাখ্যা— ফেডেরার প্রতিদিনই আরও বুড়ো হচ্ছে। আর বুড়ো মানুষের একটা দিন ভাল তো পরের দিনটাই খারাপ যাওয়াটা স্বাভাবিক।
কিন্তু ফেডেরারকে টেনিসের বুড়োর দলেই বা ফেলব কী ভাবে? এখনও ওর যা ফিটনেস লেভেল। কোর্ট কভারিং যে রকম বিশ্ব মানের, তাতে শুধু শারীরিক সক্ষমতা ধরলেও ফেডেরারের অবসর নেওয়ার সময় এখনও আসেনি মনে হবে। তা ছাড়া অবসর নেওয়ার চূড়ান্ত সময় বাছাটা সব সময়ই খুব কঠিন কাজ যে কোনও প্লেয়ারের কাছে। তার ওপর পেশাদার টেনিস ট্যুরে এত বেশি প্রাইজমানির হাতছানি যে, শেষ আট বা শেষ চারে উঠতে পারলেও অতীতের চ্যাম্পিয়নের থেকে অনেক বেশি ডলার পাওয়া যায় এখন। রাফা-রজাররা অবশ্য জীবনে প্রচুর প্রাইজমানি পেয়েছে। ওরা খেলে ট্রফি জেতার জন্যই। আর সবচেয়ে বড় কথা, নির্মম পেশাদারিত্বের যুগে তুমি এক বার প্রাক্তন হয়ে গেলে মানে ছ’মাসের মধ্যেই তোমাকে লোকে ভুলে যাবে। আগাসি, রডিকরা জলন্ত উদাহরণ। হয়তো তাই ফর্ম হারালেও যদ্দিন ফিটনেস আছে ফেডেরার চালিয়ে যাবে। হয়তো এ ভাবেই! আরও একটা বছর!
|
নাদাল, আজারেঙ্কা শেষ আটে
সংবাদসংস্থা • নিউইয়র্ক |
ফেডেরার হারলেও যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেন রাফায়েল নাদাল। ৬-৭(৪-৭), ৬-৪, ৬-৩, ৬-১ তিনি হারান জার্মানির ফিলিপ কোলস্রেইবারকে। শেষ আটে ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কাও। তিনি ৪-৬, ৬-৩, ৬-৪ হারান আনা ইভানোভিচকে। শেষ আটে আজারেঙ্কার লড়াই ড্যানিয়েলা হান্টুকোভার বিরুদ্ধে।
|