গঙ্গাজল নেই, জেলের জলপানে নারাজ আশারাম
জেলের জল মুখে রুচছে না আশারাম বাপুর।
সেই জল দূষিত বা বিস্বাদ, এমন কোনও অভিযোগ নেই। জোধপুর সেন্ট্রাল জেল-সূত্রের খবর, আশারাম বলেছেন, যখনই তিনি জল খান, তখন তাতে নিজের গঙ্গাজলের বোতল থেকে কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে নেন। কিন্তু জেলে সে বন্দোবস্ত নেই। অতএব তাঁর আর্জি, ‘গঙ্গাজল লাও’।
ধরা পড়ার আগে থেকেই বলে আসছিলেন, তিনি অসুস্থ। যে কারণে জোধপুর সেন্ট্রাল জেলের ডিসপেনসারির পাশের ব্যারাকেই রাখা হয়েছে আশারামকে। গ্রেফতার হওয়ার পর যদিও ডাক্তাররা তাঁকে পরীক্ষা করে বলেছেন, সুস্থই আছেন ধর্মগুরু। এমনকী তাঁদের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে জোধপুরের পুলিশ কমিশনার এ-ও দাবি করেছেন, ৭২ বছরেও আশারাম যৌন সংসর্গে সক্ষম।
ইতিমধ্যে আশারামের আইনজীবী কে কে মেনন আজ তাঁর জামিনের আবেদন জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে। তাঁর যুক্তি, যে মেয়েটিকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আশারামের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, সে নাবালিকা নয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণ প্রমাণিতও হয়নি। আর আশারাম নিজে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, অভিযোগকারিণী ও তার পরিবারের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে। সে দিন তাঁর ধর্মসভা (সৎসঙ্গ) উপলক্ষে তাঁরা এসেছিলেন। ১৫ অগস্ট মেয়েটির সঙ্গে তিনি এক ঘরে ছিলেন বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তাদের তদন্ত শেষ। ওই কিশোরীর বয়ান এবং অন্যান্য তথ্যপ্রমাণে অভিযোগ যথেষ্ট জোরদার হয়েছে। আগামিকাল সুপ্রিম কোর্টে আশারামের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে।
আজ অবশ্য সুপ্রিম কোর্টই অন্য একটি মামলায় নাম না করে আশারাম-প্রসঙ্গ তুলেছে। ভিআইপি-দের নিরাপত্তা ও লালবাতির অপব্যবহার সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি এবং বিচারপতি ভি গোপাল গৌড়ার বেঞ্চ বলেছে, “গত চার-পাঁচ দিন ধরে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম দেখাচ্ছে, এক জন অভিযুক্তকে ঘিরে রয়েছেন দলে দলে নিরাপত্তা কর্মী। এর কোনও প্রয়োজন নেই।” এই ঘটনায় তাঁরা বিস্মিত বলে জানিয়ে বিচারপতিরা বলেন, এমন হওয়াটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজস্থান পুলিশের যুক্তি, আশারামের ভক্তদের হাত এড়াতেই বিপুল নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। কিন্তু ঘটনা হল, গ্রেফতার হওয়ার আগেও নিরাপত্তার ঘেরাটোপ নিয়েই ঘুরতেন আশারাম। নাম না করলেও আজ বিচারপতিরা তাঁকে বিন্দুমাত্র রেয়াত করেননি। তাঁরা বলেন, “এই ধরনের বেশির ভাগ লোকই মাদক ব্যবসা দিয়ে শুরু করে। তার পর হয় রাজনীতিতে, নয় ধর্মকর্মে ঢুকে পড়ে। বহু সম্পত্তি হাতিয়ে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে তারা। এদের সাধারণ মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করার ক্ষমতা আছে। আইনের বইয়ে এমন উদাহরণ আছে।”
আশারামের বিরুদ্ধে অভিযোগ যদিও শুধু যৌন নির্যতনে থেমে থাকছে না। সোমবার সুরাতে আশারামের জাহাঙ্গিরপুরা আশ্রমকে ১৮ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। অভিযোগ, বৃষ্টির জল ধরে রেখে ব্যবহার সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ৩৪ হাজার বর্গমিটার জমি জবরদখল করে আশ্রমটি গড়া হয়েছিল। বস্তুত, আশারামের নানাবিধ গোলমেলে কাজকর্মের বিরুদ্ধে কী ভাবে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে, গত ক’দিন ধরেই তা তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, বিজেপি তথা মোদী সরকার। এ-ও বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে আমদাবাদের সাবরমতী নদীতে দুই আশারাম-শিষ্যের মৃত্যুর ঘটনায় মোদীই তদন্ত-কমিশন গঠন করিয়েছিলেন। মোদী নিজেও গত সপ্তাহে ছোটা উদয়পুরের এক সভায় আশারামকে একহাত নিয়েছেন। আশারাম-কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর সঙ্গে মোদীর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। সেই অভিযোগ খণ্ডন করতেই মোদী সরকার হঠাৎ নড়ে বসল কি না, সেই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
আশারাম-ভক্তদের বিক্ষোভ অবশ্য জারি। আজ তাঁদের অবরোধে জম্মু-পাঠানকোট লাইনে রেল চলাচল ব্যাহত হয়। বিক্ষোভ হয়েছে জোধপুর সেন্ট্রাল জেলের বাইরেও। সকলেরই দাবি, মিথ্যা অভিযোগে আশারামকে ফাঁসাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.