ভোরে ঘুম ভাঙতেই আলমারি খোলা দেখে চমকে ওঠেন প্রাক্তন সেনাকর্তা। এর পরে দেখেন, অন্য ঘরেও আলমারি খোলা। জিনিসপত্র তছনছ করা। বাড়ির এক দিকের দরজা খোলা, বাইরের গ্রিল কাটা। মিলছে না নগদ পঁচিশ হাজার টাকা ও সোনার গয়নার হদিসও।
মঙ্গলবার সল্টলেকের বি ই ব্লকের ৩৮ নম্বর বাড়ির ঘটনা। অভিনেত্রী তিলোত্তমা সোমের বাবা, প্রাক্তন সেনাকর্তা অনুপম সোম ও তাঁর স্ত্রী বৈশাখীদেবী ওই বাড়িতে থাকেন। বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই দম্পতি।
এই ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে সল্টলেকের পুলিশি ব্যবস্থা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগের থেকে পুলিশ সক্রিয় হলেও অপরাধ ঘটেই চলেছে। নজরদারিতেও গাফিলতি রয়েছে। পুলিশের পাল্টা দাবি, পুলিশি ব্যবস্থা কিংবা নজরদারিতে কোনও গাফিলতি নেই। অপরাধও আগের থেকে অনেক কমেছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে দুষ্কৃতীরা দরজার বাইরে গ্রিলের তালা কাটে। সঙ্গের জানলাটি খোলা ছিল। তা দিয়ে হাত গলিয়ে দরজা খুলে দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢোকে। পিছন দিকের একটি ঘরে ড্রয়ার থেকে দু’টি আলমারির চাবি পায় তারা। ড্রয়ারে রাখা মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, আলমারি থেকে গয়না ও নগদ কুড়ি হাজার টাকা হাতায়। শেষে বাড়ির সামনের দিকে যে ঘরে অনুপমবাবু ও তাঁর স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন, সেখানেও আলমারি ঘেঁটে তেমন কিছু না পেয়ে চম্পট দেয়। অনুপমবাবু বলেন, ‘‘সকালে আলমারি খোলা দেখে সন্দেহ হয়। অন্য আলমারিটা দেখে বুঝি চুরি হয়েছে।” ওই বাড়ির অন্য তলার বাসিন্দা বৈশাখীদেবীর দাদা তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছ’বছর আগেও একতলায় চুরি হয়েছিল। এ বার ঘরে লোক ছিল, তা-ও চুরি হল। অপরাধীদের সাহস কতটা বেড়ে গিয়েছে!’’
সল্টলেকের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘নজরদারিতে গাফিলতি নেই। তদন্ত চলছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ পুলিশের দাবি, অপরাধ কমেছে। তবে পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালের তুলনায় চলতি বছরের অগস্ট পর্যন্ত চুরির ঘটনা অর্ধেক কমেছে। যদিও গত দু’বছরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে চুরির কিনারা হয়নি।
এ দিকে, বিভিন্ন বাড়িতে যাঁরা নানা কাজে যুক্ত, তাঁদের সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের অনেকেই সহযোগিতা করছেন না বলে পুলিশের দাবি। গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, ‘‘বাইরে থেকে যাঁরা কাজে আসেন, নিরাপত্তার স্বার্থেই তাঁদের সম্পর্কে তথ্য চাইছি।’’ সল্টলেকের পুর-চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অপরাধ কমেছে। তবে বাসিন্দাদের আরও সচেতন হতে হবে। বহিরাগতদের সম্পর্কে তথ্য দিলে তাঁরাই সুরক্ষিত থাকবেন।’’
|