জমি সমস্যার সমাধান করতে ফের নতুন শিল্প তালুক তৈরির পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি শিল্পনীতি ঘোষণা করেছে রাজ্য। সেই নীতিতে শহরাঞ্চলে জমির ঊধ্বর্র্সীমা আইনে ছাড় পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ বার আর এক ধাপ এগিয়ে বিনিয়োগকারীদের জন্য জমির ব্যবস্থা করতে নয়া শিল্প তালুক গড়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য।
সেই অনুসারে তৈরি হচ্ছে আরও ৫টি শিল্প তালুক। পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম জমি কিনে তৈরি করবে এই তালুকগুলি। মঙ্গলবার ক্যামাক স্ট্রিটের শিল্প দফতরে এক সাংবাদিক বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, বর্তমান শিল্প তালুকগুলিতে জমি ফুরিয়ে আসছে। নতুন বিনিয়োগ টানতে নয়া শিল্প তালুক তৈরি করা জরুরি। পার্থবাবুর দাবি, ১০০ থেকে ৩০০ একর মাপের শিল্প তালুক তৈরি হবে। যেখানে যেমন জমি কিনতে পারবে নিগম, সেই মাপের তালুক তৈরি হবে।
বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে না সরকার। কিন্তু এক লপ্তে বড় জমি কিনতে গিয়ে পদে পদে ঠোক্কর খেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া সরাসরি জমি কিনে শিল্প গড়ে তোলা যে শক্ত, এ কথা একাধিকবার বিভিন্ন বণিকসভার মঞ্চে উঠে এসেছে। |
বিভিন্ন শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিদের হাতে জমি সংক্রান্ত নথি তুলে
দিচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র |
লগ্নি টানতে গিয়ে এই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম শিল্প সম্মেলন থেকে সাম্প্রতিক মুম্বই শিল্প সম্মেলন, প্রতিটি মঞ্চ থেকেই উঠে এসেছে জমি নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রসঙ্গ। রাজনৈতিক কারণে ঘোষিত অবস্থান থেকে সরতে না-পারলেও সমস্যা আঁচ করতে পারছে সরকার।
দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় তৈরি হবে এই শিল্প তালুকগুলি। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ছাড়া বাকি ৪টি তালুকই পিছিয়ে পড়া জেলায় তৈরি করা হবে। এই জেলাগুলিতে ইনসেনটিভ বা আর্থিক সুবিধার পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে বেশি পাওয়া যায়।
শুধুই জমি নয়। শিল্প তালুকে কারখানা গড়ে তোলার জন্য জল, রাস্তা, নিকাশি, বিদ্যুতের মতো প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরি থাকে। ফলে শিল্প তালুক তৈরির অনুরোধ বরাবরই জানিয়ে আসছে শিল্পমহল। শিল্প তালুক গড়ে অন্তত মাঝারি মাপের জমি দেওয়ার সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বড় শিল্প গড়ার জন্য এক সঙ্গে ৫০০ থেকে ১০০০ একর জমি পাওয়ার সমস্যা থেকেই যাবে বলে তাদের আশঙ্কা।
সরাসরি জমি কিনে শিল্প তৈরি করতে গিয়ে সমস্যার কথা উঠে এসেছে শিল্প সমীক্ষাতেও। বণিকসভা সি আই আই ও বিশেষজ্ঞ সংস্থা আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং-এর একটি সমীক্ষা বলছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমি নিয়ে সমস্যার কারণে আটকে গিয়েছে লগ্নি। ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন জমি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে সম্প্রসারণ পরিকল্পনাও আটকে গিয়েছে।
এ দিন পার্থবাবু ১০টি সংস্থার হাতে জমি বরাদ্দের চিঠি তুলে দেন। রাজ্যের বিভিন্ন শিল্প তালুকে এরা জমি নিয়েছে। সব মিলিয়ে ২৭৮.৫ একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংস্থা ডিভিসি, এইচ পি সি এল ও জয়শ্রী টি। রঘুনাথপুর শিল্প তালুকে ডিভিসি জমি নিয়েছে। পানাগড়ে জমি নিয়েছে এইচ পি সি এল ও জয়শ্রী টি।
|