কেন তৈরি, পরিষ্কার নয়।
চালু হল না কেন, নানা মত।
এ বার কী হবে, জানা নেই।
রাজ্য মত্স্য দফতরের চরম অদূরদর্শিতা ও উদাসীনতার নিদর্শন হিসাবে দাঁড়িয়ে শঙ্করপুর মত্স্যবন্দরের কাছে প্রায় ২৫ একর জায়গায় তৈরি ফুড পার্ক। রাজ্যের সামুদ্রিক মাছ রফতানি বৃদ্ধির জন্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে বছর সাতেক আগে সেখানে সাত কোটি টাকা খরচ করে ফুড পার্ক গড়ে তুলেছিল বাম সরকার। স্থানীয় মত্স্যজীবী ও মত্স্য সংগঠনের কথা না শুনেই। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। দিঘা মোহনা ছেড়ে মত্স্যজীবীরা এখানে আসার কোনও আগ্রহ দেখাননি। ফুড পার্কও চালু করা যায়নি। মাঝে ঠিক হয়েছিল, মেরিন কলেজ হবে। আইনি জটিলতায় তা আটকে গিয়েছে। আপাতত কোটি কোটি টাকার প্রকল্প ক্ষেত্রে চরে বেড়াচ্ছে গরু, ছাগল। ধূ ধূ প্রান্তরে জাল শুকোচ্ছেন মত্স্যজীবীরা। |
জনশূন্য শঙ্করপুর ফুডপার্ক।—নিজস্ব চিত্র। |
২০০৬ সালের ৩ জানুয়ারি তত্কালীন মত্স্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ ও মত্স্য দফতরের পদস্থ কর্তাদের উপস্থিতিতে রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে পশ্চিমবঙ্গ মত্স্য নিগমের তৈরি শঙ্করপুর ফুডপার্কের উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের তত্কালীন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। মত্স্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ জানিয়েছিলেন, ২৫ একর জায়গায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠা এই ফুডপার্কটি দেশের প্রথম ও একমাত্র আইএসও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। আন্তর্জাতিক বাজারে মাছের প্রি প্রসেসিং শেড, প্যাকেজিং কেন্দ্র, নিলাম কেন্দ্র, বরফ কল, জলের বিশাল ট্যাঙ্ক, হিমঘর এমনকী ল্যাবরেটরি থাকবে পার্কে। মূলত রফতানি করার জন্য মাছের গুণগত মানের পরীক্ষা ও উত্তরণ করার কথা ছিল এই কেন্দ্রে।
কিন্তু মত্স্যজীবীরাই না আসায় ফুড পার্ক চালু হয়নি। বা মত্সাজীবীরা আসছে না অজুহাতে ফুড পার্ক চালু হয়নি। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড মিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রণবকুমার কর বলেন, “ওখানে বরফকল ছিলই। ওরা শুধু কিছু কংক্রিটের কাঠামো খাড়া করেছিল। ল্যাবরেটরি বা অন্য পরিকাঠামো কিছুই করেনি। এমনকী সিকিউরিটি গার্ডও নিয়োগ করেনি। ওই ফুড পার্ক তৈরির উদ্দেশ্য কতটা মহত্ ছিল, তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তা ছাড়া মত্স্য ব্যবসায়ীরা মাছ রফতানি করার সময়েই গুণগত পরীক্ষা করে নেন। মত্স্যজীবীদের সরাসরি এটা করানোর প্রয়োজনীয়তা হয় না।”
রামনগরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বদেশ নায়ক সেই সময় শঙ্করপুরে ফুডপার্ক তৈরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, শঙ্করপুর মস্য বন্দরের কাছেই দিঘা মোহনাতে রয়েছে মাছের বিশাল পাইকারি বাজার। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘ দিন ধরে সেই বাজার নিয়ন্ত্রিত করে আসছে। সেখানে একটা নিলাম কেন্দ্রও করেছে মত্স্যজীবীরা। চালু ওই ব্যবস্থা ছেড়ে মাছের আড়তদাররা ফুডপার্কে যেতে রাজি হবেন না। বলা বাহুল্য মত্স্য দফতরের কথারা বিধায়কের কথায় কান দেননি। যার ফল ভুগতে হচ্ছে এখন।
২০১১ সালের প্রথম দিকে শঙ্করপুর ফুডপার্কের জায়গায় একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে পিপিপি মডেলে চুক্তি করে মেরিন কলেজ চালু করতে উদ্যোগী হয় মত্সল্য দফতর। কিন্তু মেরিন কলেজ করার নিয়ম হল, নিডস্ব জডমি থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমি হস্তান্তরের চেষ্টা করা হলেও আইনি কারণে তা করা যায়নি। অগত্যা বেসরকারি ওই সংস্থার সঙ্গে মেরিন কলেজ তৈরির চুক্তি বাতিল করা হচ্ছে বলে জানান রাজ্যের মত্স্য নিগমের ডিরেক্টার অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়।
তারপর কী হবে? উত্তর মেলেনি।
ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে গোচারণ ভূমি হয়েই বিরাজ করবে জনশূন্য ফুডপার্ক।
|