লোকসানের বহর বাড়ছে। তাই কলকাতা-ঢাকা রুটে আর বড় বিমান চালাবে না বাংলাদেশের সরকারি উড়ান সংস্থা বিমান।
হিসেব-নিকেশের পরে বিমান কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, বোয়িং ৭৩৭ বা এয়ারবাস ৩১০ নয়, এ বার থেকে ছোট এটিআর-ই চলবে ঢাকা আর কলকাতার মধ্যে। বিমানের কলকাতার রিজিওনাল ম্যানেজার মহম্মদ আলাউদ্দিন জানান, বোয়িং-এ আসন সংখ্যা ১৬২, এয়ারবাসে ২২১টি। এটিআর-এ যাত্রী ধরে মাত্র ৪৪ জন। এখন দিনে একটি উড়ান চলে কলকাতা-ঢাকা রুটে। এ বার থেকে দিনে দু’টি এটিআর যাতায়াত করবে এই রুটে।
প্রধানত যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেই এই সিদ্ধান্ত। এমনিতে ঢাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ায়, বিরোধীরা যখন-তখন হরতাল ডাকায় দুই শহরের মধ্যে যাতায়াত কমেছে। এ জন্য ইতিমধ্যেই ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা উড়ান কমিয়েছে বিমান। এই রুটে আগে প্রতিদিন একটি তো বটেই, কোনও কোনও দিনে একাধিক উড়ানও চালাত বিমান। এখন তা কমে সপ্তাহে পাঁচ দিন, দিনে একটি করে উড়ানে এসে ঠেকেছে। |
কেউ কেউ মনে করেন, কলকাতা-ঢাকা রুটে বিমান-এর উড়ানসূচিও যাত্রী কমে যাওয়ার একটা কারণ। বেঙ্গালুরু-মুম্বই-হায়দরাবাদ থেকে দুপুরে কলকাতায় পৌঁছে যাঁরা ঢাকা পৌঁছতে চান, তাঁরা বিমান-এর উড়ান ধরতে পারেন না। কারণ বিমান-এর বিমান উড়ে যায় তার আগেই। আবার, খুব সকাল সকাল ঢাকা পৌঁছে গোটা দিন কাজ করতে চাইলেও জেট এয়ারওয়েজ-এর উড়ানই ভরসা। উল্টো দিকে, ঢাকায় সারাদিনের কাজ সেরে রাতে কলকাতায় ফিরতে হলেও এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ান ছাড়া গতি নেই। ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে উড়ান চালাচ্ছে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ইউনাইটেডও। তাদের ভাড়া বিমান-এর তুলনায় কম। এই সব বিবেচনা করেই ছোট বিমান চালানোর পাশাপাশি নিজেদের সময়সূচিও ঢেলে সাজার কথা ভাবছে বিমান।
বিমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চলতি বছরের শেষে তাদের লোকসান দাঁড়াবে ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জ্বালানির দামও। এই অবস্থায় খরচ কমিয়ে লোকসান আটকাতে চায় বিমান। পরিকাঠামো ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেমন অভিজ্ঞ পেশাদারদের সংস্থার মাথায় বসানো হচ্ছে। বর্তমানে চালু প্রতিটি রুটের লাভ-ক্ষতি সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ছোট বিমানে লোকসান কমবে কী ভাবে?
সংস্থার এক মুখপাত্র জানান, এখন সপ্তাহে পাঁচ দিন কলকাতা-ঢাকা রুটে একটি করে উড়ান চালাচ্ছে বিমান। তাঁর কথায়, “বড় বিমানের আসন অর্ধেকও ভরছে না, অথচ জ্বালানি খরচ বেশি। আবার কলকাতায় এ ধরনের বিমানের ল্যান্ডিং ও পার্কিং ফি-ও সম্প্রতি অনেকটা বাড়ানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, গত এক বছরে প্রতিটি উড়ানে যাত্রী ছিলেন গড়ে ১০০-রও কম। এই অবস্থায় প্রতিদিন দু’টি ছোট এটিআর চালালে সর্বোচ্চ ৮৮ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। ছোট বিমানে জ্বালানি খরচ কম, কলকাতায় ল্যান্ডিং-পার্কিং ফি-ও কম হবে। যাত্রীরা সকাল ও বিকেলে যাওয়ার বিকল্পও পেতে পারেন।
সরকারি এই সংস্থায় মার্চে ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে যোগ দিয়েছেন কেভিন জন স্টিল। তিনি দায়িত্ব নিয়েই সংস্থার সব ডিসি-১০ বিমান বসিয়ে দেন, যার ফলে প্রতিদিন ৯০ টন জ্বালানি বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। স্টিল জানান, সম্প্রতি দু’টি এটিআর বিমান কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই একটি চলবে কলকাতা রুটে। দিল্লিতেও উড়ান চালায় বিমান। নতুন এমডি জানিয়েছেন, আপাতত ভারতের আর কোনও শহরে উড়ান চালানোর পরিকল্পনা তাদের নেই। |