ডলারের চোখরাঙানিতে এ বার টান পড়তে পারে উৎসবের মরসুমের কেনাকাটায়।
চকোলেট, প্রসাধনী দ্রব্য থেকে শুরু করে ল্যাপটপ, মোবাইল, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর বিদেশ থেকে আমদানি করা যাবতীয় জিনিসের দাম এক লাফে অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পথে। প্রতি ডলারে টাকার দাম ৭০-এ পৌঁছতে পারে, এই পরিস্থিতি ধরে নিয়ে ইতিমধ্যেই দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে ‘কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স’ বা বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলি।
মন্দার কালো মেঘ। থমকে থাকা বৃদ্ধির হার। এই দুইয়ের সাঁড়াশি চাপে বাজার তলানিতে ঠেকেছিল আগেই। বিস্তর ছাড় ও ‘অফার’-এর বিপণন চমকে নেতিয়ে পড়া বাজার তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছিল সংস্থাগুলি।
সেই প্রচেষ্টাতেও কোপ মারছে গত কয়েক মাস ধরে হু হু করে পড়তে থাকা টাকার দাম। আকাশছোঁয়া হয়েছে আমদানির খরচ। এর সঙ্গে রয়েছে দামি জিনিসের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনাও। সব মিলিয়ে মার খাচ্ছে বৈদ্যুতিন ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলি। ডলারে টাকার দাম যা দাঁড়িয়েছে, তাতে যন্ত্রাংশ আমদানির খরচ অনেক গুণ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কিন্তু বাড়েনি মুনাফা। শুধু মাত্র লোকসান ঠেকাতেই দফায় দফায় দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে সংস্থাগুলি। যেমন, প্যানাসোনিক ইন্ডিয়ার প্রধান মণীশ শর্মার মতে, পরিস্থিতি সামলাতে দাম বাড়াতে হতে পারে। কিন্তু উৎসবের মুখে এই দাম বাড়ার সম্ভাবনা নতুন করে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। |
অথচ সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর, কেনাকাটার এই মরসুমের দিকে তাকিয়ে রয়েছে নির্মাতা থেকে খুচরো ব্যবসা সংস্থা সকলেই। গত কয়েক মাসের লোকসান পুষিয়ে নিয়ে লাভের মুখ দেখাতে পারে গণেশ চতুর্থী, ওনম, দুর্গাপুজো, দীপাবলি ও বড়দিনের বাজার। এই আশায় বাদ সাধছে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা। শপার্স স্টপ-এর প্রধান গোবিন্দ শ্রীখণ্ডে জানান, বিদেশি ব্র্যান্ডগুলির দাম প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে উৎসবের বাজেটে টান পড়ারই সম্ভাবনা।
চলতি বছরে টাকার দাম পড়ার কারণে এর আগে একাধিকবার বৈদ্যুতিন পণ্যের দাম বেড়েছে। গত জুলাইয়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে হায়ার, এল জি, ওয়ার্লপুল-সহ বিভিন্ন সংস্থা। প্রায় ৭ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে ল্যাপটপ সংস্থাগুলি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে ডলারের দাম এই হারে বাড়তে থাকলে শীঘ্রই ৬ থেকে ৮ শতাংশ দাম বাড়তে পারে ল্যাপটপের। এল জি ইলেকট্রনিক্স ইন্ডিয়ার বিপণন কর্তা সঞ্জয় চিৎকারার অবশ্য দাবি, উৎসবের সময়ে নতুন জিনিস কেনাকে শুভ বলে মনে করেন ক্রেতারা। তাই দাম বাড়লেও ক্রেতার উৎসাহে ভাটা পড়বে না বলেই তিনি আশা করেন।
দাম বাড়াতে পারে মোবাইল ফোন নির্মাতারাও। লাভা ও মাইক্রোম্যাক্স-এর মতো দেশি সংস্থার আশঙ্কা, এ ভাবে টাকার দাম পড়তে থাকলে, মোবাইল হ্যান্ডসেট-এর দাম বাড়াতে বাধ্য হবে তারা। কারণ অধিকাংশ যন্ত্রাংশই আমদানি করা হয়। ইতিমধ্যেই টাকার দাম পড়ে যাওয়ার ফলে প্রায় ১৫ শতাংশ মার খেয়েছে লভ্যাংশ। সে ক্ষেত্রে অন্তত ১০ শতাংশ দাম বাড়াতে হতে পারে। একই অবস্থা ল্যাপটপ সংস্থাগুলিরও। এসার-এর বিপণন কর্তার দাবি, দাম বাড়াতে বাধ্য হলেও ই এম আই, দীর্ঘমেয়াদি ওয়ার্যান্টি-সহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে বাজার ধরে রাখার চেষ্টা চলছে।
শুধু পণ্য নয়, প্যাকেজিং বোর্ড-এর দামও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে জে কে পেপার। সংস্থার অন্যতম কর্তা সন্তোষ ওয়াখলু জানান, ডলারের দাম না-কমলে প্যাকেজিং বোর্ডের দামও বাড়াতে বাধ্য হবে সংস্থা। |