বিরোধ মিটিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো শেষ পর্যন্ত কোন পথে যাত্রা করবে, তা চূড়ান্ত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হচ্ছে। এই কমিটি যাত্রাপথ চূড়ান্ত করা ছাড়াও নতুন মেট্রোকে নিয়ে অন্যান্য যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে সমাধানের পথ বার করবে।
প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী, সল্টলেক থেকে শুরু করে বেলেঘাটা, ফুলবাগান, শিয়ালদহ, সেন্ট্রাল, বড়বাজার হয়ে গঙ্গার নীচ দিয়ে হাওড়া ময়দানে গিয়ে থামবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। সেইমতো কাজও শুরু হয়েছে। কেন্দ্র চায়, এই পথেই চলুক ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। কিন্তু রাজ্যের দাবি, সেন্ট্রালের পরে বড়বাজার নয়, মেট্রোর রুট হোক ধর্মতলা, বি বা দী বাগ হয়ে হাওড়া ময়দান। আর এই নিয়েই দুই সরকারের মধ্যে বিরোধ চলছে অনেক দিন ধরে। মহাকরণের আশা, দুই সরকারকে নিয়ে তৈরি নতুন কমিটি এই বিরোধের মীমাংসা করবে।
যৌথ কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। সদস্য-সচিব হচ্ছেন কলকাতা মেট্রো রেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। অন্যেরা হলেন রাজ্য সরকারের পরিবহণ, নগরোন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সচিব, পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার, কলকাতা পুরসভার কমিশনার, কলকাতা পুলিশের কমিশনার, কেএমডিএ-র সিইও এবং রাজ্যের ভূমি কমিশনার। দু’এক দিনের মধ্যেই এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে সময়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রাপথ পরিবর্তনের দাবিতে সরব হয়, তখন রেলমন্ত্রী ছিলেন মুকুল রায়। সেই সময়ে নতুন যাত্রাপথের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে রাইট্সকে দিয়ে একটি সমীক্ষাও করানো হয়। রাইট্স সেই রিপোর্ট রেল মন্ত্রকে জমাও দেয়। কিন্তু কেন্দ্রের ইউপিএ-২ সরকার থেকে তৃণমূল কংগ্রেস বেরিয়ে আসায় এই নিয়ে জট তৈরি হয়। পাশাপাশি, প্রকল্পে ঋণদানকারী সংস্থা জাইকা-ও জানিয়ে দেয়, যাত্রাপথ পরিবর্তিত হলে তারা ঋণ দেবে না। তাদের যুক্তি ছিল, প্রকল্পের কাজ এমনিতেই প্রায় বছরখানেক দেরিতে চলছে। এর পরে যাত্রাপথ পরিবর্তিত হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হতে অনেক বেশি সময় লাগবে, যা তাদের ঋণদান নীতির পরিপন্থী।
মহাকরণ সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রাপথের পরিবর্তন চেয়ে রাজ্য সরকার তাদের অবস্থানে এখনও অনড়। সম্প্রতি জাইকা-র এক প্রতিনিধিদল মুখ্যসচিবের সঙ্গে প্রকল্পটি নিয়ে একটি বৈঠক করে। সেখানেও রাজ্য সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয় জাইকা-র প্রতিনিধিদের। রাজ্যের যুক্তি ছিল, দীর্ঘ দিন ধরে ব্রেবোর্ন রোড আটকে কোনও প্রকল্পের কাজ করা কার্যত অসম্ভব। তা ছাড়া, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর যাত্রাপথ অপরিবর্তিত রাখলে অনেক মানুষকে উচ্ছেদ করতে হবে। যা কোনও অবস্থাতেই রাজ্য সরকার মেনে নেবে না। যদিও উচ্ছেদ প্রসঙ্গে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, অধিগ্রহণ বৈধ। অর্থাৎ, উপযুক্ত পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে মূলত বড়বাজার এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে হবে সরকারকে। এ ছাড়াও রয়েছে দত্তাবাদে বস্তি উচ্ছেদ-সহ আরও কিছু সমস্যা।
সব মিলিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের কাজ কোথাও থমকে রয়েছে, কোথাও জটিল আকার নিয়েছে। কমিটি শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটিকে মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে কি না, সেটাই দেখার। |