তিনি ভুল করেছিলেন। সেই ভুলের পরিণামে তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারত। যদিও মেট্রোকর্মীদের তৎপরতায় তিনি রক্ষা পান, কিন্তু তাঁর ভুল মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল।
মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১১টা। রবীন্দ্রসদন স্টেশনে দমদমমুখী একটি মেট্রো এসে থামল। ঠিক ছাড়ার মুহূর্তে মধ্যবয়সী এক পুরুষ যাত্রী দৌড়ে এসে প্রথম কামরায় পা রাখতেই বন্ধ হয়ে গেল দরজা। ততক্ষণে ওই যাত্রী কামরার ভিতরে সম্পূর্ণ ঢুকতেও পারেননি। বাঁ পা-সহ খানিকটা তখনও দরজার বাইরে। কিন্তু ওই অবস্থাতেই বন্ধ হয়ে গেল দরজা এবং ছেড়েও দিল ট্রেনটি।
আতঙ্কে কামরার ভিতরের যাত্রীরা চিৎকার করছিলেন। কিন্তু ড্রাইভিং মোটরম্যানের কানে সেই শব্দ পৌঁছয়নি। ফলে ট্রেন স্টার্টার সিগন্যাল পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। ওই দৃশ্য দেখে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো যাত্রীরাও ততক্ষণে চিৎকার শুরু করে দিয়েছেন। ওই চিৎকার শুনতে পান ট্রেনের পিছনের কনডাক্টিং মোটরম্যান। তিনিই চালককে সতর্ক করেন। ইতিমধ্যে ওই কামরার যাত্রীরাও অ্যালার্ম চেন টেনে চালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। |
যখন ট্রেন থামে ততক্ষণে প্ল্যাটফর্ম থেকে অনেকটা বেরিয়ে গিয়েছে মেট্রোটি। এ বার চালক দেখেন, প্রথম কামরার শেষ দরজায় (৪ নম্বর) এক যাত্রীর দেহের অনেকটা অংশ বাইরে বেরিয়ে রয়েছে। আর দেরি না করে তিনি ওই অবস্থাতেই ট্রেনটিকে পিছনে এনে ফের প্ল্যাটফর্মে ঢুকিয়ে দরজা খুলে দেন।
আতঙ্কিত হয়ে প্ল্যাটফর্মে সবাই তখন ভিড় করে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। ট্রেন ফের প্ল্যাটফর্মে আসতেই ওই কামরার দিকে ছুটে যান সকলে। দরজা খুলতেই লাফ মেরে প্ল্যাটফর্মে নেমে সিঁড়ির দিকে দৌড় লাগান ‘ঝুলন্ত’ ওই যাত্রী। যাত্রী ও পুলিশ সকলেই ওই যাত্রীর পিছনে ছুটতে শুরু করেন। ধরেও ফেলেন তাঁরা। ভিড় জমে যায়। সবাই একবার ওই যাত্রীকে দেখতে চান। এসে যায় আরপিএফ ও মেট্রো কর্মীর দল। অত লোক, পুলিশ দেখে ওই যাত্রী যথেষ্ট আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে নিজেই বলতে শুরু করেন, “যা করেছি ভূল করেছি। আমার ভুলেই এটা ঘটেছে। আমি সেটা লিখেও দিচ্ছি।” পরে তিনি নিজেই একটি মুচলেখা দেন।
মেট্রো সূত্রে বলা হয়, তাতেই জানা যায় তাঁর নাম, অরূপ বসাক। তিনি শ্রীভূমি এলাকার বাসিন্দা। মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “ওই যাত্রীকে বলা হয়েছিল, কোথাও আঘাত লেগে থাকলে হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারেন। কিন্তু ওই যাত্রী কিছুতেই হাসপাতালে যেতে চাননি। কোনও রকমে ওই লেখাটি জমা দিয়ে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে চলে যান।”
কিন্তু সামান্য কিছু আটকে থাকলেও মেট্রোর দরজা বন্ধ হওয়ার কথা নয়। সে ক্ষেত্রে এক জন যাত্রীর প্রায় অর্ধেকাংশই বাইরে ছিল। কিন্তু তার পরেও ওই কামরার দরজা বন্ধ হল কী করে? এর কোনও জবাব মেট্রো কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। কিছুদিন আগে একবার এক যাত্রী প্রায় একই ভাবে দরজায় আটকে থাকা অবস্থায় ট্রেন ছেড়ে দিয়েছিল। সে বারও মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রত্যুষবাবু শুধু বলেছেন, “সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মেট্রোর নিয়ম অনুসারে কামরার দরজা বন্ধের আগে একটি অ্যালার্ম বাজার কথা। কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ, মোটরম্যানেরা তা অনেক সময়েই বাজান না। যাত্রীদের বক্তব্য, রেকগুলির প্রায় লঝ্ঝড়ে অবস্থা। ফলে যে কোনও সময়ে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে, তা এ দিন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রেকটি। |