মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে প্রায় গোটা বিশেক বাড়ি ভেঙে পড়েছে মহানগরে। কলকাতা পুরসভার তথ্য জানাচ্ছে, সেই সব বাড়িগুলিকেই ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পুরসভার বিল্ডিং দফতর। সে রকমই একটি বাড়ি বিবাদী বাগ চত্বরের ৫, কাউন্সিল হাউস স্ট্রিট ঠিকানার বাড়িটি। মঙ্গলবার সকালে তুমুল বৃষ্টির সময়ে ভেঙে পড়ে সেটি। পুর আধিকারিকের কথায়, “ভাগ্যিস সকালে ঘটনাটা ঘটেছে। অফিস-টাইমে হলে প্রাণহানিও হতে পারত।”
দিন কয়েক আগেই ৩২, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ রোডের বাড়ির উপর তলা ভেঙে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। আহত হন বাড়িটিরই এক বাসিন্দা। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, বিপজ্জনক বাড়ি জেনেও পুরসভা কেন কিছু করে না? কেন শুধু নোটিস টাঙিয়েই দায়িত্ব শেষ বলে মনে করে পুর প্রশাসন?
এ নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “অনেক বাড়ি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা চলছে। তাই পুরসভা হাত দিতে পারে না। শুধু সতর্ক করেই দায়িত্ব পালন করতে হয়।” |
যদিও পুর-আইন অনুযায়ী, গণ-নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই ধরনের বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আছে পুরসভার। বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, পুর-আইনের ৪১১ (৪) ধারায় পরিষ্কার বলা রয়েছে, বিপজ্জনক বাড়ি হিসেবে আখ্যা দেওয়ার পরেও সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক বাড়িটি না সারালে পুর প্রশাসন যে কোনও সময়ে বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনও বাধা টিকবে না। পুরসভার ভাষায় এটি ‘এক্সপ্রেস নোটিস’। ওই আধিকারিক জানান, সম্প্রতি পরপর কয়েকটি বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়ায় গত তিন সপ্তাহে ‘এক্সপ্রেস নোটিস’ দিয়ে প্রায় ২০টি বাড়ি ভাঙা হয়েছে।
এ রকমই এক ‘আতঙ্কের’ বাড়ি ১১, রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়্যার ঠিকানার বাড়িটি। দেখলেই মনে হয়, যে কোনও সময় ধসে পড়তে পারে। বাড়িটির পাশেই ক্রিক রো, শিয়ালদহ থেকে বিবাদী বাগ যাওয়ার সহজ পথ। রাস্তাটি সব সময়েই ব্যস্ত থাকে, প্রচুর যানবাহন চলে। বছর কয়েক আগেই সে বাড়িতে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস লাগিয়েছে পুর প্রশাসন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। সম্প্রতি বাড়িটির একটা অংশ ভেঙে পড়ায় টনক নড়েছে পুরসভার। এখন সেটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।
কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে কলকাতা শহরে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস ঝোলানো বাড়ির সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। বেআইনি ও বিপজ্জনক বাড়ি দেখার দায়িত্বে রয়েছেন ডিজি বিল্ডিং (২) দেবাশিস চক্রবর্তী।
কিন্তু কী ভাবে চিহ্নিত করা হয় ‘বিপজ্জনক’ বাড়ি? দেবাশিসবাবুর জবাব, “৫০ বছরের পুরনো বাড়ির হাল দেখতে প্রতিটি ওয়ার্ডে বিল্ডিং দফতরের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারেরা পরিদর্শন করেন। বাড়ির কার্নিস, রেলিং, ঝোলা বারান্দা বা কোনও একটি অংশ ভেঙে পড়ার মতো দেখলেই বাড়িটিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে দেগে দেওয়া হয়। ইঞ্জিনিয়ারদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিককে ৪১১ (১) ধারায় নোটিস দিয়ে সারাতে বলা হয়। তাতেও যদি কাজ না হয়, তা হলে ৪১১ (২) ধারায় বাড়িটিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে দেওয়ালে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেও কাজ না হলে দেওয়া হয় ‘এক্সপ্রেস নোটিস’। সে ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের কোনও আপত্তি না শুনে বাড়ির খারাপ অংশ ভেঙে দেয় পুরসভা। আর তার জন্য যা ব্যয় হয়, তা দিতে হয় বাড়ির মালিককেই।”
তবে কাগজে-কলমে এই আইন থাকলেও তা প্রয়োগ করা নিয়ে পুরসভায় নানা গড়িমসি চলে বলে অভিযোগ একাধিক আমলার। তাঁদের বক্তব্য, টাকার বিনিময়ে অনেক ক্ষেত্রেই ‘বিপজ্জনক’ বাড়ি পার পেয়ে যাচ্ছে। আর তার কারণে বিপদ বাড়ছে শহরবাসীরই। |