টানা বৃষ্টিতে নাকাল শহরের অবস্থা আরও সঙ্গীন করে ছাড়ল কাজের দিনের মিটিং-মিছিল। মঙ্গলবার মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভা উপলক্ষে সৃষ্টি হওয়া যানজটের জেরে ভোগান্তিতে পড়লেন নিত্যযাত্রীরা।
কাজের দিনে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পথ আটকে মিছিল-মিটিং যে শহরের ভাবমূর্তির জন্য আদৌ ইতিবাচক কিছু নয়— তা কিন্তু নিজেও মানেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই তৃণমূলনেত্রী জানিয়েছিলেন, এ বিষয়টিতে তাঁরা সতর্ক থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও রাস্তা আটকে মিটিং-মিছিল বা বনধ-অবরোধের রাজনীতির প্রতি তাঁর অনীহার কথা জানাতে বার বার সরব হয়েছেন মমতা। তৃণমূলের জমানায় মুখ্যমন্ত্রীর দৃঢ়তার ফলেই ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে কোনও সমাবেশের অনুমতি দিতে সহজে রাজি হয় না লালবাজার। এ দিন কিন্তু দেখা গেল, কাজের দুপুরে ধর্মতলা থেকে সামান্য দূরে মেয়ো রোড জুড়ে সমাবেশে বক্তৃতা দিচ্ছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। |
যানজটে স্তব্ধ জওহরলাল নেহরু রোড। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র। |
তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস (২৮ অগস্ট) উপলক্ষে দুপুর একটা থেকে এই সমাবেশ এ বার এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছিল। সংগঠকদের যুক্তি, নিদিষ্ট দিনটিতে এ বার জন্মাষ্টমী পড়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ কলেজের পড়ুয়াদের সমাবেশে পেতে সমস্যা হতো। তা-ই এ বার এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে সমাবেশ। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, ছুটির দিনে দলীয় কর্মসূচি বজায় রেখে কাজের দিনের ব্যস্ত শহরকে কেন রেহাই দেওয়া হল না? এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার কোনটি?
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য তাঁদের সমাবেশের ফলে আমনাগরিকের বড় রকমের সমস্যা হয়েছে বলে মানতে চাননি। আর যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেছেন, “মেয়ো রোডের সভার কথা মাথায় রেখে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই ট্রাফিক পরিচালনার পরিকল্পনা ছকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতায় সমস্যাও হয়নি।”
নিত্যযাত্রীদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য রকম। বেলা ১২টায় মেয়ো রোডমুখী মিছিল যাওয়ার সময়েই পার্ক স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা যাচ্ছিলেন পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা আনোয়ার হুসেন। তিনি বলেন, “ধর্মতলা অবধি পৌঁছতেই ঝাড়া আধ ঘণ্টা সময় লেগেছে।” ঘটনাস্থলে কতর্ব্যরত ট্রাফিক পুলিশের এক অফিসারও সমস্যাটা মেনে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “কাজের দিনে মেয়ো রোডের মতো রাস্তা মিটিং হলে যানজট হবেই।”
পুলিশ সূত্রের খবর, মেয়ো রোডের সমাবেশের জন্য ডাফরিন রোড, মেয়ো রোড থেকে পূর্বমুখী ট্রাফিক আউট্রাম রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। আর চৌরঙ্গির দিক থেকে মেয়ো রোডে আসা পশ্চিমমুখী গাড়ির ঢল রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ দিয়ে ঘোরানোর ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশকর্তাদের মতে, সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে বৃষ্টির জন্য। মেয়ো রোডের পশ্চিমে বা রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে জল জমে থাকার কারণেও যানচলাচল মন্থর হয়ে পড়ে। এ দিন দুপুর একটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটে অবধি মেয়ো রোড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তার ঢের আগে থেকেই হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশন বা হাজরার দিক থেকে মিছিল ঢুকতে শুরু করে। পুলিশের মতে, উত্তরের মহাত্মা গাঁধী রোড, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মতো রাজপথে জল জমে থাকায় মিছিল দেরি করে এগোয়। ফলে যানজট ও ভোগান্তি বাড়ে। |