কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
বিদেশিদের সামনে বিক্ষোভে মর্যাদায় ঘা
বিলেতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’জন এসেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আবার উপাচার্যের ঘরে চলছে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক বাছাই। ইন্টারভিউ নিতে হাজির ভিন্ রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা। ঠিক এমন সময়েই নিজেদের নানান দাবিদাওয়া নিয়ে উপাচার্যেরই ঘরের সামনে চাদর বিছিয়ে অনশনে বসে স্লোগান দিতে থাকেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তৃণমূল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা।
ওই কর্মীদের জন্য দেশি-বিদেশি অতিথিদের সামনে রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়তে হল উপাচার্যকে! মঙ্গলবার দুপুরে তাঁর ঘরের সামনে ওই কর্মীদের এই আচরণ দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না-ঘটে, সেই জন্য সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

উপাচার্য সুরঞ্জন দাস
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও উপাচার্যের ঘরের সামনে বসে বিক্ষোভ-আন্দোলন করেছে ওই কর্মী সংগঠন। গত ১৯ নভেম্বর তারা এ ভাবে বিক্ষোভ দেখানোর সময় সেখানে হাজির হন তৃণমূলের মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সংগঠনের নেতৃত্ব তাঁরই ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। সে-দিন তৃণমূলেরই অন্য একটি সংগঠনের হাতে নিগৃহীত হতে হয়েছিল শোভনদেববাবুকে। এ দিন অবশ্য তাঁর অনুগামী সংগঠনের সদস্যদের এই ধরনের আন্দোলন কর্মসূচিতে অন্যায় কিছু দেখেননি ওই তৃণমূল নেতা। তাঁদের এই কাজকে তিনি কার্যত সমর্থনই করেছেন।
১৯ নভেম্বরের সেই ঘটনার পরে উপাচার্য বলেছিলেন, ক্যাম্পাসে আন্দোলনের জন্য আচরণবিধি বলবৎ করা হবে। কিন্তু এখনও তা হয়নি। সুরঞ্জনবাবু এ দিন জানান, সিন্ডিকেটের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, তিনি এবং রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে আচরণবিধি রূপায়ণ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দেশ-বিদেশের অতিথিদের সামনে এ দিনের বিড়ম্বনা ওই আচরণবিধি চালু করার প্রয়োজনটাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বিলেতের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা দু’জনকে নিয়ে উপাচার্য নিজে ক্যাম্পাসে বেরিয়েছিলেন। তা ছাড়াও এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন দেশের বেশ কয়েক জন অধ্যাপক। উপাচার্য জানান, অর্থনীতির অধ্যাপক বাছাই কমিটিতে দেশের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামী অধ্যাপকেরা ছিলেন। তাঁরা হলেন আইআইএম কলকাতার অধ্যাপক অমিতাভ বসু, বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এম পি সিংহ, দিল্লি আইএসআইয়ের সত্য দাস ও অরুণাভ সেন এবং বেঙ্গালুরুর ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল অ্যান্ড ইকনমিক চেঞ্জের অধিকর্তা আর এস দেশপাণ্ডে।
দেশ-বিদেশের অতিথিদের সামনে ওই কর্মীদের আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলেই মনে করছেন কর্তারা। উপাচার্য পরে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাহানি হলে তার সঙ্গে যুক্ত সকলেরই খারাপ লাগার কথা। কর্মীদের সেটা বোঝা উচিত। ভবিষ্যতে বিক্ষোভ আন্দোলনের সময় এটা মাথায় রাখার জন্য সকলের শুভ চেতনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
এ দিনই বিক্ষোভ দেখানোর কারণ কী? ও-ভাবে উপাচার্যের ঘরের সামনে বসে বিক্ষোভই বা কেন?
কর্মী সংগঠনের বক্তব্য, তাদের দাবিদাওয়ার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা তো মাইক বাজিয়ে সভা করব বলে উপাচার্যকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা থাকায় মাইক বাজানো হয়নি।”
ওই কর্মী সংগঠন আগাম চিঠি দিয়ে নিজেদের কর্মসূচির কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের কোনও রকম বাধা দেওয়া হয়নি। কেন?
উপাচার্য জানান, বাধা দেওয়া হয়নি। কারণ, উপর থেকে কিছু চাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায় না। সুরঞ্জনবাবুর কথায়, “সকলেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, দাবিদাওয়া জানাতে পারেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মী সংগঠন নীচের বারান্দায় বা দ্বারভাঙা ভবনের বাইরে বসে আন্দোলন করে। শুধু এই কর্মী সংগঠনটিই এ ভাবে উপাচার্যের ঘরের বাইরে বসে বিক্ষোভ দেখায়। এই জায়গায় এ ভাবে আন্দোলন না-করে নীচে বসলেই শোভন হতো।”
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরই দলের মুখ্য সচেতক এ দিনের বিক্ষোভের ব্যাপারে কী বলছেন?
শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “যেখানে যেমন প্রথা, তেমনই হবে। এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.