সব্জির দামে লাগাম পড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ যা-ই হোক, পাইকারি দামের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন। ঢ্যাঁড়শ-লঙ্কার দামও বেশি। লাফিয়ে বেড়েছে মাছের দাম। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ৩০ অগস্ট মহাকরণে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রবিবার কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের শীর্ষ প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। ঠিক হয়েছে, কাঁচা বাজারের মূল্যবৃদ্ধি রোখার চেষ্টায় বাজারে বাজারে ঘুরবেন ব্যবসায়ী-প্রতিনিধিরা।
বাজারে দু’রকম পেঁয়াজের পাইকারি দাম কিলো পিছু ৪৫ ও ৪৭ টাকা। রসুন কিলো পিছু ১০০ টাকা। সরকারের টাস্ক ফোর্সের দাবি, পেঁয়াজের দাম খোলা বাজারে ৬০ টাকার, রসুনের দাম ১২৫ টাকার উপরে হওয়া উচিত নয়। টাস্ক ফোর্সের প্রতিনিধি ও ‘ফোরাম ফর ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, “সল্টলেক, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট বাজারে পেঁয়াজ ৬৫ টাকা, কখনও ৭০ টাকা। রসুন কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কিলোয়। ঢ্যাঁড়শ ও লঙ্কা কিলো পিছু ২০ ও ৬৫ টাকা। খুচরো বাজারে এই দাম পাইকারি দরের চেয়ে ২৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়।”
লেক মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক মনতোষ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রবিবার বলেন, “আমাদের বাজারে পেঁয়াজ ৬০ টাকা কিলোয় নেমে এসেছে। প্রতিদিন সরকারি দরে অর্থাৎ ১৮ টাকায় মাথাপিছু ৫০০ গ্রাম পেঁয়াজের প্যাকেট বিক্রি হওয়ায় বাড়তি দামে পেঁয়াজ কেনার লোক কমেছে।” রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, বেশি দামে সব্জি বিক্রির অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট বাজারের সমিতির সম্পাদককে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হচ্ছে। প্রতিনিধিদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মজুত-নিয়ন্ত্রণ আইনে অভিযুক্ত কোনও ব্যবসায়ীর পাশে কোনও সংগঠন যেন না দাঁড়ায়। এ দিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বলেন, ঢ্যাঁড়শ-লঙ্কার পাইকারি দাম যেখানে কিলো পিছু ২০ ও ৬৫ টাকা, খুচরো বাজারে তা যথাক্রমে ৩০ ও ৯০ টাকা। কাঁচা বাজারে সব্জির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে প্রতিনিধিরা বর্ষা এবং খেতে জল জমার কথা বলেন। বৈঠকে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে জানানো হয়, ফড়েদের জন্য কাঁচা বাজারে সব্জির দাম যাতে না বাড়ে, সে দিকে নজর রাখতে। না হলে চাষিদের বাজারে এনে সব্জি বিক্রির ব্যবস্থা হবে।
পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রকেই দায়ী করে রাজ্যের খাদ্য বিপণনমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “পেঁয়াজের উৎপাদন এ বার কম জেনেও রফতানিতে লাগাম দিতে ব্যবস্থা নেয়নি কেন্দ্র। আমদানি বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছি।” ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্ষায় পেঁয়াজ চাষ ও মজুত ভাণ্ডার তৈরিতেও রাজ্য হাত দিচ্ছে, মন্তব্য করেন তিনি।
পূর্ব কলকাতার জলাভূমি থেকে ফি বছর ১৬ হাজার টন মাছ মেলে। এই তল্লাটে ক্রমাগত পাঁক জমায় দ্রুত মাছ কমছে। বৈঠকে অল বেঙ্গল ফিশ প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপঙ্কর মণ্ডল বলেন, “ ওই জলাভূমিতে প্রতিদিন ৬০০ মিলিয়ন লিটার অপরিস্রুত জল জমে। গভীরতা অন্তত সাড়ে পাঁচ ফুট না হলে রুই-কাতলা-মৃগেল ভাল হয় না। কিন্তু গভীরতা দ্রুত কমছে।” মাছ-উৎপাদক সমিতির তরফে বৈঠকে জানানো হয়, জলাভূমি সংস্কারে সরকারের দ্রুত উদ্যোগী হওয়া জরুরি।
তবে, অন্য বারের এই সময়ের তুলনায় এ বার মাছের দাম বেশি নয় দাবি করে মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “গ্রীষ্মে জলাশয়ের জল কমে যায় বলে প্রতি বছর মাছ কম মেলে। দাম বাড়ে। জলাভূমির গভীরতা বাড়াতে পাঁক সরানো চলছে। কয়েক বছরেই বাড়তি সুফল মিলবে।”
বৈঠকে অল বেঙ্গল ফিশ প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন, সাউথ সাবার্বান ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং হুগলি, বীরভূম, নদিয়া, পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রভৃতি জেলার বণিকসভার প্রতিনিধিরা ছিলেন। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় টাস্ক ফোর্সের ১৮-দফা লক্ষ্য নিয়ে একটি পুস্তিকা বৈঠকে পেশ করা হয়।
|