|
|
|
|
দাম নিয়ন্ত্রণে নজরদারি |
অকালবর্ষণে মাঠে নষ্ট সব্জি,
আমদানি ভিন্ রাজ্য থেকে
দিবাকর রায় • কলকাতা |
|
|
তিন দিনের বৃষ্টিতে জেলায়-জেলায় সব্জি চাষে ক্ষতির কারণে বাজারে দাম অস্বাভাবিক চড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তা রুখতে ভিন্ রাজ্য থেকে সব্জি আমদানির তোড়জোড় চলছে।
রাজ্যের উদ্যানপালন দফতরের অধিকর্তা পীযূষকান্তি প্রামাণিক বলেন, “প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন জেলা থেকে সব্জি চাষে ক্ষতির তালিকা এসে পৌঁছেছে। সামগ্রিক তালিকা এখনও তৈরি হয়নি।” কৃষি দফতরের অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, “মে মাসের শেষ সপ্তাহে এমন বৃষ্টি সাধারণত হয় না। বাদাম ও তিল চাষে ক্ষতি হয়েছে। যাঁরা দেরি করে বোরো চাষ করেছেন, তাঁদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে পাটে লাভ হয়েছে।”
বিভিন্ন জেলার উদ্যানপালন আধিকারিকদের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি। এর ফলে খোলা বাজারে সব্জির দাম চড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকের আশঙ্কা, সুযোগ বুঝে ফড়েরা কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে বাজার অগ্নিমূল্য করে তুলতে পারে। ফলে বড় বাজারগুলিতে ভিন্ রাজ্য থেকেও সব্জি আমদানি করা হচ্ছে।
কলকাতার কোলে মার্কেটের চিফ সুপারভাইজার উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “দুই ২৪ পরগনা, নদিয়া, হুগলি, হাওড়া এবং বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের একাংশে সব্জি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ও বাঁকুড়ার উঁচু এলাকার চাষের উপরেই আমাদের বেশি নির্ভর করতে হবে। বাজারে জোগান বজায় রাখতে আমরা ইতিমধ্যেই বেনারস থেকে বেগুন ও কাঁচালঙ্কা আনানোর বন্দোবস্ত করেছি।” রাজ্যের কৃষি ও কৃষি বিপণন সচিব সুব্রত বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “এখনও পর্যন্ত বাজারে কোনও প্রভাব পড়েনি। যাতে সব্জির দাম অস্বাভাবিক ভাবে না বাড়ে, আমরা সে দিকে নজর রাখছি।”
গোটা দেশে এই রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে, প্রায় দেড় লক্ষ হেক্টর জমিতে ২৮২৮ লক্ষ টন বেগুন চাষ হয়। পোকার উৎপাতে আগে থেকেই বেগুনের উৎপাদন কম হচ্ছিল। কীটনাশক ব্যবহার করলে খরচ অনেকটা বেড়ে যায়। তাই চাষিরাও উৎসাহ পাচ্ছিলেন না। যার ফলে বাজারে ইতিমধ্যেই ভাল টান রয়েছে। ৭০-৮০ টাকা কেজিতে চড়ে গিয়েছে বেগুনের দর। বহু জায়গায় পোকাহীন তাজা বেগুন পাওয়াই যাচ্ছে না। এই আগাম বৃষ্টিতে আবার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেগুনেরই। গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফলনও কমতে পারে বলে চাষি ও সরকারি কর্তাদের আশঙ্কা করছেন।
নদিয়ার হরিণঘাটা, চাকদহ, রানাঘাট-২, শান্তিপুর ও কৃষ্ণনগর-১ ব্লকে বৃষ্টিতে সব্জি চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাংনাপুরের সব্জি চাষি স্বপন সাধু বলেন, “বেগুন আর কাঁচালঙ্কা ক্ষতি তো হয়েছেই, বৃষ্টির সঙ্গে জোরে হাওয়া থাকায় ঢ্যাঁড়শ গাছও পড়ে গিয়েছে।” হুগলিতে ক্ষতি হয়েছে ঢ্যাঁড়শ, পটল, লাউ, উচ্ছে, করলার। শুক্রবার দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকায় মাচা ভেঙে শশা, করলা, ঝিঙে, লাউ গাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে গাছের গোড়ায় যদি জল না দাঁড়ায় তা হলে ক্ষতির সম্ভাবনা কিছুটা কমবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে পটল ভাল হয়। সেখানে বেশ কয়েকটি এলাকায় জল জমেছে।
কৃষি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে তিলের চাষ হয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তার অনেকটাই ক্ষতি হয়েছে। বাদাম চাষ হয়েছে ৩৩ হাজার হেক্টরে। একই পরিমাণ জমিতে হয়েছে গ্রীষ্মকালীন মুগের চাষ। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে এগুলিরও ফলন কমার আশঙ্কা করছেন কৃষিকর্তারা। |
|
|
|
|
|