|
|
|
|
রাজ্যে কমেছে চাষের এলাকা |
ফলন বাড়িয়ে কী লাভ, প্রশ্ন কৃষকদেরই
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
ক্রেতা নেই। তাই সরকারি প্রকল্পের আওতায় ও উচ্চ-ফলনশীল বীজ ব্যবহার করে এবং সঙ্কর প্রজাতির ধানের চাষ করে ফলন বাড়িয়ে কী লাভ, সেই প্রশ্ন এ বার তুললেন কৃষকরাই।
শুক্রবার পূর্ব ভারতে সবুজ বিপ্লব প্রকল্প নিয়ে কলকাতায় কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষিসচিব আশিস বহুগুণা। তাঁর সামনেই কৃষকরা বুঝিয়ে দিলেন, বাজার তৈরি না করে ফসলের উৎপাদন বাড়ালে অন্তত তাঁদের কোনও লাভ নেই।
বহু ক্ষেত্রেই ফসল বিক্রি করে লাভ তো দূরের কথা, চাষের খরচও উঠছে না। ফসল বেচে ঠিক মতো দাম না পেয়ে বহু ক্ষেত্রেই কৃষক চাষে উৎসাহ হারিয়ে সেই জমি শিল্পের জন্য বিক্রি করে দিচ্ছেন। কৃষক প্রতিনিধিদের বক্তব্যের ভিত্তিতে অনেকেই মনে করছেন, এটাই অনিবার্য পরিণতি এবং কৃষিজমিতে শিল্প গড়ে উঠলে দীর্ঘমেয়াদে কৃষকেরই লাভের সম্ভাবনা। সরকারি সূত্রেই বলা হচ্ছে, গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষের এলাকা ও উৎপাদনশীলতা কমেছে। তবে ওই জমি সব ক্ষেত্রেই শিল্পের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা জানার জন্য সম্প্রতি সমীক্ষা শুরু করেছে কৃষি দফতর।
এ দিন কেন্দ্রীয় কৃষিসচিবের সামনে কৃষক প্রতিনিধিরা তাঁদের প্রকৃত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হল কুইন্টাল প্রতি ১২৫০ টাকা। কিন্তু মরসুমের গোড়ায় কুইন্টাল প্রতি ৭৫০-৮০০ টাকায় ফড়েদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষকরা। এ দিনের আলোচনায় যোগ দেন বর্ধমান, নদিয়া, বীরভূম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু কৃষক। তাঁরা সকলেই সবুজ বিপ্লব কর্মসূচিতে নিজের নিজের এলাকায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে ২০১২-’১৩ আর্থিক বছরে দু’লক্ষ হেক্টর জমিতে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব কর্মসূচি রূপায়িত হয়েছিল। খরিফ মরসুমে যেখানে সাধারণত প্রতি হেক্টরে আড়াই টন ধান উৎপাদন হয়, সেই জায়গায় সবুজ বিপ্লব কর্মসূচির আওতাধীন জমিতে হেক্টর পিছু ২.৮ টন উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি দফতরের দাবি। আর এই অতিরিক্ত উৎপাদন নিয়েই সমস্যা। কেন্দ্রের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি বিপণন মরসুমে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ২২ লক্ষ টন ধান সরাসরি কৃষকদের থেকে কিনতে হবে।
রাজ্য কিন্তু সেখানেও পিছিয়ে। তারা এখনও পর্যন্ত ১৩.৫০ লক্ষ টন ধান কিনতে পেরেছে। বিপণনের চলতি মরসুম শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। এ দিনের আলোচনাতেই অবশ্য কেন্দ্রীয় কৃষিসচিব এবং কেন্দ্রের অন্য প্রতিনিধিরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, কৃষকদের থেকে সরাসরি ধান কেনার ক্ষেত্রে যা করণীয়, দায়িত্ব নিয়ে তা করতে হবে রাজ্য সরকারকেই। আলোচনায় এফসিআইয়ের প্রতিনিধিরা গুদাম সমস্যার প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁরা জানান, রাজ্যে তাঁদের গুদামগুলির মোট শস্যধারণ ক্ষমতা ১০ লক্ষ টন।
বছরের অধিকাংশ সময়েই বেশির ভাগ গুদাম ভর্তি থাকে। রাজ্য সরকারের কেনা ধানের ষোলো আনা সেখানে মজুত রাখা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সাড়ে ১৩ লক্ষ টন ধান কিনে সেগুলি বিভিন্ন বেসরকারি গুদামে ভাড়া করে রাখা হয়েছে। আরও সাড়ে পাঁচ লক্ষ টন ধান বিভিন্ন চালকলে পড়ে আছে। গুদামের অভাব একটা বড় সমস্যা। রাজ্য সরকারের নিজস্ব গুদাম যা আছে, তাতে সব মিলিয়ে ৪৮ হাজার টনের বেশি ধান রাখা সম্ভব নয়।” জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বক্তব্য, “আমরা বলছি, কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের ধান কেনার জন্য এক হাজার কোটি টাকা দিক। আর ১০ লক্ষ টন ধান রাখতে পারি, এমন গুদাম করে দিক। ধান কেনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আমাদের চার মাসও লাগবে না।”
|
এই সংক্রান্ত অন্য খবর: হেক্টর পিছু ধানের
ফলন বাড়াতে প্রতি
ব্লকে প্রশিক্ষণ |
|
|
|
|
|