র‌্যাগিং-কলঙ্কিত কলকাতা,
ফিরে গেলেন ভিন্ রাজ্যের দুই পড়ুয়া
খনউ ও দেহরাদূন থেকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিলেন তাঁরা। ঠিক ন’দিনের মাথায় র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ তুলে কলকাতা ছাড়লেন ওই দুই ছাত্র।
পুলিশি সূত্রের খবর, লখনউয়ের আমির সোহেল এবং দেহরাদূনের বাসিন্দা বঞ্চিত কুন্দলিয়া ৭ অগস্ট তারাতলার মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। শুক্রবার ওই দুই ছাত্র তারাতলা থানায় লিখিত ভাবে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ জানান। তাঁদের অভিযোগ, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কয়েক জন ছাত্র ক্রমাগত তাঁদের মারধর করেছে, নানা ভাবে অত্যাচার চালিয়েছে। ডিরেক্টর, ওয়ার্ডেনকে জানানোর পরেও অত্যাচার বন্ধ হয়নি।
কলেজ-কর্তৃপক্ষ অবশ্য র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ মানতে চাননি। ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর এম কে ঘোষ এ দিন বলেন, “মাত্র কয়েক দিন আগে ওরা ভর্তি হয়েছে। তাই এখানকার শৃঙ্খলা, নিয়মকানুন, আদবকায়দা ও পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে একটু অসুবিধা হতে পারে। সেটাকে র‌্যাগিং বলা যায় না। ওই ছাত্রদের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্নও নেই।” তবে র‌্যাগিংয়ের যে-অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করে দেখার জন্য চার অফিসারের কমিটি গড়া হয়েছে বলে তিনি জানান। শুধু তা-ই নয়, তদন্ত কমিটির সুপারিশ মেনে হিমাংশু ফুলে ও জেসু টমাস নামে দুই ছাত্রকে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে।
ঠিক কী অভিযোগ করেছেন আমির ও বঞ্চিত?
কলেজ ছাড়ছেন আমির-বঞ্চিত। শুক্রবার তারাতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ভিন্ রাজ্যের ওই দুই ছাত্রের অভিযোগ, ৭ অগস্ট কলেজে ভর্তি হতে আসার পরেই পুরনো পড়ুয়ারা তাঁদের একসঙ্গে ভারী সমস্ত ব্যাগপত্র কাঁধে তুলে হস্টেলে যেতে বাধ্য করিয়েছিল। ঘরে ব্যাগপত্র রাখার কয়েক মিনিটের মধ্যে দাড়ি-গোঁফ কাটতে বাধ্য করানো হয়। তেষ্টা পেলেও জল খেতে দেওয়া হয়নি। তার পর থেকে কথায় কথায় চড়-লাথি মারা হতো। রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো টানা দেড় ঘণ্টা। রাত ১টায় ঘুম থেকে তুলে ‘দাদাদের’ বোতলে জল ভরে আনতে বলা হতো। এ ছাড়াও ছিল কান ধরে ওঠ-বোস, ব্যাঙ-দৌড় করানোর মতো অত্যাচার। সেই সঙ্গে সমানে চলত শাসানি: এই র‌্যাগিংয়ের কথা কাউকে জানালে আরও অত্যাচার করা হবে। অত্যাচার ক্রমশ বাড়তে থাকায় ওই দুই ছাত্র ফোনে অভিভাবকদের সব জানান।
আমিরের বাবা সোহেল আহমেদ এ দিন তারাতলা থানার সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “ছেলের কাছ থেকে সব শুনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর র‌্যাগিং প্রতিরোধ হেল্পলাইনে ফোন করে পুরো বিষয়টি জানিয়েছিলাম। পরে কলেজের ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলি। উনি আশ্বাস দেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ কিন্তু কিছুই ঠিক হয়নি। বরং অত্যাচার আরও বেড়ে গিয়েছিল।” বাধ্য হয়েই তিনি ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান সোহেল।
একই অবস্থা বঞ্চিতের মা নিম্মি কুন্দলিয়ারও। ছেলের ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি করে দেহরাদূন থেকে উড়ান ধরে চলে এসেছেন। তিনি বলেন, “ছোট থেকেই ছেলের ইচ্ছে ছিল মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। কিন্তু এখানে ওকে যে এমন পরিবেশে পড়তে হবে, ভাবতে পারিনি।”
তারাতলার এই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি ইন্ডিয়ান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। আমির ও বঞ্চিত সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েই এই কলেজে ভর্তি হন। ওই দুই ছাত্রের অভিভাবকেরা জানান, র‌্যাগিং নিয়ে দেশ জুড়ে এত বিধিনিষেধ চালু হওয়ার পরেও কলকাতায় এসে তাঁদের ছেলেদের যে এ-রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে, তা ভাবতে পারেননি তাঁরা। পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে তাঁরা ছেলেদের ভর্তির জন্য ব্যয় করা লক্ষাধিক টাকা ফেরত চেয়েছেন।
কী বলছেন কলেজ-কর্তৃপক্ষ?
ডিরেক্টর জানান, ১০ অগস্ট র‌্যাগিং প্রতিরোধ হেল্পলাইন থেকে তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। তার পরে ওই সংস্থার তরফে ই-মেল পাঠিয়ে কলেজ-কর্তৃপক্ষকে র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি জানানো হয়। ডিরেক্টর বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পরেই এক অভিযোগকারী এবং তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। ১২ অগস্ট চার জন অফিসারকে নিয়ে তদন্ত কমিটিও গড়ে দেওয়া হয়।” কলেজ-কর্তৃপক্ষের দাবি, ২৪ ঘণ্টাই হস্টেলে এক জন ওয়ার্ডেন থাকেন। সেখানে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে না। অভিযোগ পাওয়ার পরেই কলেজের র‌্যাগিং প্রতিরোধ কমিটিও খবর নিয়ে জানায়, সে-রকম কিছু ঘটেনি। তা সত্ত্বেও নিয়ম মেনে অভিযোগ পাওয়ার পরেই দুই ছাত্রকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম অনুযায়ী কলেজের কোনও ছাত্র র‌্যাগিংয়ের নালিশ করলে বিষয়টি থানায় জানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার দায়িত্ব কলেজ-কর্তৃপক্ষের। আমির ও বঞ্চিত অভিযোগ করার পরে বিষয়টি থানায় জানানো হয়নি কেন?
ডিরেক্টর বলেন, “আমি মনে করিনি, এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার প্রয়োজন আছে।”
ছাত্রদের অভিযোগের ব্যাপারে কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসডব্লিউডি) সুব্রত মৈত্র বলেন, “এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.