তিন ছাত্রীর ‘আত্মহত্যার চেষ্টা’
আবাসিকদের উপর ‘নির্যাতন’ সরকারি হোমে
তিন আবাসিক ছাত্রীর উপরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠল নাকতলার একটি সরকারি আবাসিক হোমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, অত্যাচার সহ্য করতে না-পেরে বৃহস্পতিবার সকালে শ্রীরামকৃষ্ণ আনন্দ আশ্রম নামের ওই হোমে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তিন আবাসিক ছাত্রী। অসুস্থ ওই তিন ছাত্রী এখন এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি।
পুলিশ জানায়, অষ্টম শ্রেণির ওই তিন ছাত্রী দীর্ঘদিন ধরেই ওই হোমে রয়েছে। ছাত্রীদের পরিবারের পক্ষ থেকে হোম-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পাটুলি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত হোমের পক্ষ থেকে অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। আবাসিক ছাত্রীদের আত্মহত্যার চেষ্টার খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ওই হোম পরিদর্শন করেছেন রাজ্যের যুবকল্যাণ ও আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালে হোমের ভিতরে এক জায়গায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে ছিল ওই তিন ছাত্রী। পুলিশকে হোম-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই ছাত্রীরা কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। অভিযোগ, হোমের সদস্যেরা ওই আবাসিক ছাত্রীদের হাসপাতালে না পাঠিয়ে প্রথমে বাড়িতে খবর দেন। পরে অবশ্য হোম-কর্তৃপক্ষ তাদের হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই ছাত্রীদের পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘক্ষণ হোমে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিল ছাত্রীরা। হোমের সুপার অবশ্য বলেন, “আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ওদের হাসপাতালে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেছি।”
অসুস্থ ছাত্রীদের পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ওই হোমে আবাসিকদের উপরে এক শিক্ষিকা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাচ্ছেন। হোম-কর্তৃপক্ষকে জানানো সত্ত্বেও তাঁরা এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ। ওই ছাত্রীদের নিম্নমানের খাবার খেতে বাধ্য করা হত বলে পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে তাদের মারধর করা হত বলেও অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীদের পরিবারের সদস্যেরা।
অসুস্থ এক ছাত্রীর বাবা লাল্টু বিশ্বাসের অভিযোগ, মাস দুয়েক ধরে তাঁর মেয়ের উপরে অত্যাচার করছিল হোমের কয়েক জন। তাঁর দাবি, হোমে থাকাকালীন গত সপ্তাহে মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থাও করেননি কর্তৃপক্ষ। লাল্টুবাবু বলেন, “আমি রবিবার ওই হোমে গিয়ে ওকে বাড়িতে নিয়ে আসি। চিকিৎসা করার পরে একটু সুস্থ হওয়ায় বুধবার ফের মেয়েকে হোমে রেখে এসেছিলাম।”
একই অভিযোগ আর এক ছাত্রীর মা দেবলা দাসেরও। তাঁর অভিযোগ, মারধরের ভয়ে তাঁর মেয়ে ওই হোমে থাকতে চাইত না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পড়াশোনার জন্য মেয়েকে বাধ্য হয়ে ওই হোমে রাখতে হত বলে তিনি জানান।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার হোমের পরিচালন সমিতির ২০ জন সদস্য বৈঠকে বসেন। হোম সূত্রের খবর, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ওই হোমে ১৫০ জনের জায়গা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আবাসিক রয়েছে ৯৩ জন।
এ ব্যাপারে হোমের সম্পাদক মাধবী পাহাড়ি বলেন, “কর্তৃপক্ষকে বিপদে ফেলতে হোমেরই একটি অংশ চক্রান্ত করছে। হোমে কারও উপরে কোনও অত্যাচার করা হয়নি। ওই ছাত্রীরা হোমে থাকতে চায় না। তাই তারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
এ দিন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ অবশ্য জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, দশম শ্রেণির কয়েকটি মেয়ের সঙ্গে অষ্টম শ্রেণির এই তিন ছাত্রীর কোনও ব্যাপারে গোলমাল বাধে। দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীরা শিক্ষিকাকে বলে দেওয়ার ভয় দেখায় তাদের। তাতে ভয় পেয়েই ওই তিন ছাত্রী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
হোম-কর্তৃপক্ষ অবশ্য ছাত্রীদের মধ্যে এমন গোলমালের বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.