কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পৃথক রাজ্য দাবি করলেও, রাজ্য সরকারের কাছে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া-সংস্কৃতি পরিকাঠামো উন্নয়ন চাইল কামতাপুর পিপলস পার্টি (কেপিপি)। এমনকি পৃথক রাজ্যের দাবিতে আলোচনা করতে রাজ্য সরকার রাজি না হলে, তাঁরা শুধুমাত্র পরিকাঠামো এবং সামাজিক উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিয়েছেন কেপিপি নেতৃত্ব। কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অতুল রায় বলেন, “রাজ্য সরকার বা মুখমন্ত্রী যদি বলেন বঙ্গভঙ্গের দাবিতে আমরা বসব না। তবে আর যে সমসা বা দাবি রয়েছে সেগুলি নিয়ে তো আলোচনা হতেই পারে।”
বুধবার কয়েক হাজার সমথর্ক নিয়ে এসে জলপাইগুড়িতে বিভাগীয় কমিশনারের দফতরে মুখমন্ত্রীর এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে দুটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে কেপিপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা স্মারকলিপিতে উত্তরবঙ্গ এবং নিম্ন অসমের এলাকা নিয়ে পৃথক রাজ্য গঠন এবং কামতাপুরি ভাষার সংবিধান স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে পাঠানো স্মারকলিপিতে পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিই জানানো হয়েছে। অতুল রায় এবং নিখিল রায়, কেপিপির দুই নেতা এদিনের কমর্সূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন। |
জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনারের দফতরের সামনে
কেপিপি’র মিছিল সামলাচ্ছে পুলিশ। বুধবার। ছবি: সন্দীপ পাল। |
মুখমন্ত্রীকে লেখা স্মারকলপির প্রথম লাইনেই জানানো হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন কর্মসূচিতে কেপিপিও সামিল হতে চায়। পাশাপাশি রাজ্যে পালাবদলের পরে রাজ্য সরকার রাজবংশী আকাদেমি গঠনের কথা বললেও বাস্তবে তার কিছুই রূপায়িত হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশও করা হয়েছে।
কেপিপি নেতা অতুলবাবুর কথায়, “পৃথক কামতাপুর রাজ্য গঠন আমাদের মূল দাবি। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথেই আমরা থাকতে চাই। তবে রাজবংশী আকাদেমি গঠন হলেও তার কোনও স্বীকৃতি নেই, তবে কী রাজ্যের নতুন সরকার শুধু আশ্বাসই দিতে চাইছেন। এইসব বিষয় নিয়েই আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চাই।”
তেলঙ্গনা রাজ্য গঠনের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের পরে যখন রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করে দার্জিলিঙে গোর্খাল্যাণ্ডের দাবিতেই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোর্চা এবং তার সহযোগী দলগুলি। সেই সময়ে কামতাপুর পিপলস পার্টি এবং কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি মিলে এক হয়ে রাজ্য সরকারের কাছে উন্নয়ন এবং আলোচনার দাবি তুলে ধরাকে রাজনৈতিক দিক থেকে যথেস্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
১৩ দফা দাবিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে ক্রীড়া-সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানানো হয়েছে। স্মারকলিপিতে হিন্দি ও নেপালি মাধ্যমের মতো কামতাপুরি মাধ্যমেরও স্কুল চালু করা, কামতাপুর এলাকার ইতিহাসকে পাঠ্যে অর্ন্তভুক্ত করা, উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করা, নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, রাজবংশীদের জন্য পৃথক স্কুল এবং কলেজ সার্ভিস কমিশন গঠন করা, চিলা রায়ের নামে ক্রীড়া আকাদেমি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক নিখিলবাবু বলেন, “আমরা আশা করি খুব শীঘ্রই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সদর্থক আলোচনা শুরু হবে। গণতান্ত্রিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই উন্নয়ন সম্ভব।” |