শিলিগুড়ি পুরসভার কাজে যুক্ত ঠিকাদারদের বকেয়া মেটানো এবং বর্তমানে পুরসভার যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তা কাটাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠালেন পূর্ত বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক। গত ৩ বছরের কাজের জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা বিভিন্ন ঠিকাদর সংস্থার প্রাপ্য বকেয়া পড়ে রয়েছে। তা মেটানোর ব্যবস্থা করতে পুর কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়ে ঠিকাদারদের সংগঠনের তরফে ৩ দিন সময় দেওয়া হয়। ব্যবস্থা না নিলে তারা লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। বিধান মার্কেটে রাস্তা তৈরি সহ যে কয়েকটি কাজ চলছে তা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের ক্ষমতায় থাকা বর্তমান পুরবোর্ডের ওই মেয়র পারিষদ মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়ার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
পুজোর আগে শহরের রাস্তাঘাট-সহ নাগরিক পরিষেবার কাজ যাতে থমকে না থাকে সে জন্য উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর কাছে চিঠিতে আর্জিও জানিয়েছে সুজয়বাবু। গৌতমবাবু অবশ্য এখনও কোনও চিঠি পাননি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চিঠি এখনও হাতে পায়নি। তবে বিষয়টি দেখব।” তবে তিনি জানান, বোর্ডে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাঁরা বাজেট পাশ করতে পারেননি। তাই কোনও কাজ করতে পারছে না। এই সমস্যা তাঁরাই তৈরি করেছেন। সমাধান তাঁদেরই করতে হবে। সুজয়বাবু বলেন, “পুজোর সময় যাতে পরিষেবায় বিঘ্ন না ঘটে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে যাতে বেরিয়ে আসা যায় সে জন্যই রাজ্যের মন্ত্রী গৌতমবাবুকে চিঠি পাঠিয়েছি। ঠিকাদারদের বকেয়া টাকা মেটানোর জন্যও ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আশা করব তিনি বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে সদর্থক ব্যবস্থা নেবেন।”
উল্লেখ্য, কাউন্সিলর তথা চেয়ারম্যান নান্টু পাল দলত্যাগ করার পর তা নিয়ে বাম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলররা আলাদা ভাবে বিরোধিতায় নামে। বামেরা ওই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বোর্ড মিটিং-এ অংশ নিতে চান না। নান্টুবাবুর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের তরফেও মেয়র আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনার উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে নান্টুবাবুর কাউন্সিলর পদ খারিজ করেন। নান্টুবাবু ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হলে পুর দফতরের সচিব ওই রায় আপাতত স্থগিত রাখেন। তার বিরুদ্ধেও মেয়র আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। ওই মামলার শুনানি চলছে। পুরসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে বাজেট পাশ নিয়ে বিতর্কের জেরে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে পুরসভায়।
মন্ত্রীর পাশাপাশি পুর কমিশনারকে সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চিঠি পাঠিয়েছেন সুজয়বাবু। যে সমস্ত কাজ শুরু হয়েছে সেগুলি যাতে থমকে না যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি। বিধান মার্কেটের মুর্গিহাটি ও সংলগ্ন এলাকার রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে ঠিকাদারদের আন্দোলনের জেরে তা বন্ধ হয়ে গেলে অসুবিধেয় পড়বেন শহরবাসী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “আমিও চাই শহরের উন্নয়ন হোক। কিন্তু এই বোর্ডই উন্নয়ন স্তব্ধ করে রেখেছে।” ঠিকাদার সংগঠনের মুখপাত্র বিজন দাস বলেন, “আমরা মেয়র ও কমিশনারের ঘরের সামনে অবস্থানে বসব। আন্দোলন চলবে।” |