হুবহু এক লেটারহেড। তাতে বাংলায় লেখা বিবৃতির বয়ানও এক। ডুয়ার্সের বারবিশায় গত রবিবার একটি বেসরকারি বাসে বিস্ফোরণের পর ওই বাসের মধ্যে থেকে পাওয়া গিয়েছে একটি চিঠি। ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফোর্স অফ বেঙ্গলিজ’ বা ‘বাঙালি জনমুক্তি বাহিনী’র লেটারহেডে লেখা সেই রকম চিঠিই এর আগে মিলেছিল অসমের দু’টি জায়গায় আইইডি-সহ। প্রাথমিক তদন্তে গোয়েন্দারা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতেই অসমের এই জঙ্গি সংগঠনটি বারবিশায় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। প্রাণহানি ঘটানোর উদ্দেশ্য সম্ভবত ছিল না তাদের। |
বিস্ফোরণের পর সেই বাস।—ফাইল চিত্র। |
ক্ষতিগ্রস্ত বাসটি থেকে উদ্ধার হওয়া ওই লেটারহেডের চিঠিতে সংগঠনটি দাবি করেছে, তারা অসমের বড়ো টেরিটোরিয়াল অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট (বিটিএডি) এলাকায় বাঙালিদের উপর বড়ো জনগোষ্ঠীর অত্যাচার, সন্ত্রাস ও সমাজবিরোধী কাজকর্মের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রথমে গণতান্ত্রিক পথে আন্দোলনে নেমেছিল। কিন্তু তাতে কাজ না-হওয়ায় হিংসার পথ বেছে নিচ্ছে। সংগঠনের নেতা হিসেবে অভিজিৎ দাস নামে এক জনের স্বাক্ষরও রয়েছে বিবৃতিতে। সংগঠনটির সদস্যপদ নেওয়ার ফর্মও মিলেছে বাসটি থেকে।
‘বাঙালি জনমুক্তি বাহিনী’র নামে এই একই ধরনের চিঠি ও আইইডি চলতি বছরের মার্চ মাসে উদ্ধার হয়েছিল অসমের বঙ্গাইগাঁওয়ের একটি বাসস্ট্যান্ডে। তারও আগে, গত সেপ্টেম্বরে অসমেরই গোসাইগাঁও স্টেশনের কাছে মিলেছিল চিঠি-আইইডি। কিন্তু কোথাও বিস্ফোরণ হয়নি। অথচ বারবিশায় টাইমার দিয়ে ঘটানো বিস্ফোরণে বাসটির ছাদের একাংশ উড়ে যায়। জখম হন পাঁচ যাত্রী ও দুই পথচারী।
স্বাভাবিক ভাবেই, পাহাড় যখন উত্তপ্ত, সেই সময়ে ডুয়ার্সে ওই নাশকতার ঘটনা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের কপালে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে অসম লাগোয়া উত্তরবঙ্গের এলাকাগুলির শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন। ইতিমধ্যে কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন (কেএলও) উত্তরবঙ্গে নতুন করে জঙ্গি হানার ছক কষছে
বলে পুলিশের কাছে খবর রয়েছে। কিন্তু ‘বাঙালি জনমুক্তি বাহিনী’ সম্ভবত প্রচারের আলোয় আসার জন্যই বারবিশায় ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলে মনে করছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ বা আইবি)।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগির বক্তব্য, “এরা (বাঙালি জনমুক্তি বাহিনী) কারা, সেই ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কেনই বা এরা বারবিশায় দাঁড় করানো বাসে বিস্ফোরণ ঘটাতে গেল, সেটা জানাও জরুরি।” তবে আইবি-র এক কর্তা বলেন, “বাঙালি জনমুক্তি বাহিনীর অস্তিত্ব অসমে রয়েছে। সে রাজ্যে সংগঠনটি অচেনা কিছু নয়। পশ্চিমবঙ্গে অসমের চেয়ে অনেক বেশি বাঙালির বাস। অথচ এখানে কেউই তাদের বিষয়ে তেমন জানে না। বারবিশায় বাসে বিস্ফোরণের পর কিন্তু রাজ্যের অনেকে সংগঠনটির নাম জেনে গেলেন।” ওই অফিসারের মতে, পশ্চিমবঙ্গে কোনও নাশকতা ঘটালে বাঙালিদের দৃষ্টি অনেক বেশি আকর্ষণ করা যাবে বলেই সংগঠনটি হয়তো মনে করেছে।
তদন্তের কাজে রাজ্য পুলিশকে সহায়তা করছে অসম পুলিশও। ২০১২ থেকে ‘বাঙালি জনমুক্তি বাহিনী’র নাম সামনে এলেও আজ পর্যন্ত ওই সংগঠনের কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। বারবিশার ঘটনার পর অসম পুলিশ তাদের হদিস পেতে তৎপর হয়েছে। অসম পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বঙ্গাইগাঁও ও গোসাইগাঁওয়ে যে আইইডি পাওয়া গিয়েছিল, তার চেয়ে ওই বাসে রাখা আইইডি-তে বিস্ফোরক ছিল বেশি মাত্রায়। প্রাথমিক ভাবে অবশ্য মনে হচ্ছে, আইইডি-গুলি একই ধরনের। বাসের ১৫ জন যাত্রীর সবাইকে এবং চালক ও খালাসিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। আমরা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে সমস্ত রকম সাহায্য করছি।” |
বারবিশায় তদন্ত শুরু সিআইডির
নিজস্ব সংবাদদাতা • শামুকতলা |
কুমারগ্রামের বারবিশায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে বুধবার তিন সদস্যের ফরেনসিক (সিএফএসএল) দল তদন্ত শুরু করল। গত রবিবার দুপুরে কুমারগ্রামের বারবিশা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা অসমের চিরাং জেলার দাদগিরি থেকে জয়গাঁগামী একটি বাসে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। সাতজন জখম হন। উড়ে যায় গাড়ির ছাদের পিছনের একটি অংশ। পুলিশ সূত্রের খবর, ঠিক কী ধরণের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল তা দেখা শুরু হয়েছে। কলকাতা থেকে আসা দলটি এদিন ঘটনাস্থলটি ঘুরে দেখেন। বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া একটি কৌটার অংশ, ঘড়ির টুকরো এবং পুড়ে যাওয়া দুটি ব্যাটারির নমুনা তাঁরা সংগ্রহ করেছেন। বাসের ক্ষতিগ্রস্থ অংশ এবং বারুদের নমুনাও দলটি পরীক্ষার জন্য নিয়েছে। তাঁরা চারজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গেও কথা বলেন। বারবিশা পুলিশ ফাঁড়িতে আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে পাঁচদিন পরেও ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছেই। এলাকায় পূর্ণাঙ্গ থানার তৈরির দাবিও বাসিন্দারা তুলেছেন। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া জানান, ফরেনসিক দলটি তদন্ত শুরু করেছে। একমাসের ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া যাবে। থানা তৈরির বিষয়টি সরকারকে জানানো হয়েছে। |