অফিসে না গেলে মাইনে মিলবে না। আবার গেলে ঘরদোর তছনছ হয়ে যেতে পারে।
শাঁখের করাতে পড়েছেন দার্জিলিং পাহাড়ের কয়েক হাজার সরকারি কর্মী।
সানু লামা, কবিতা ছেত্রী, পেমদেন শেরিং ভুটিয়ার
(নাম পরিবর্তিত) মতো সরকারি কর্মীরা জানাচ্ছেন, এক দিকে আন্দোলনের নামে অফিসে গরহাজির থাকলে মাইনে কাটা হবে বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার। অন্য দিকে, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলনের ডাক উপেক্ষা করে অফিসে গেলে মোর্চা নেতাদের কোপে পড়তে হচ্ছে। হাজিরা খাতার ‘জেরক্স’ নিয়ে এসে মোর্চা প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠনের কয়েকজন নেতা তাঁদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছেন। এ হল কালিম্পঙের একটি এলাকার ছবি।
দার্জিলিঙে সরকারি দফতরের মধ্যে থেকেই কাজে যোগ দিতে ইচ্ছুক কর্মীদের সই করার আগেই বাইরে বার করে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। একই অভিজ্ঞতা কার্শিয়াঙের শিক্ষা প্রকল্প, স্বাস্থ্য দফতরের কিছু কর্মীরও। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি অবশ্য বলেছেন, “জবরদস্তি করছি না। সরকারি কর্মীরা স্বেচ্ছায় অফিস যাচ্ছেন না।” |
সুনসান জেলাশাসকের দফতর। —নিজস্ব চিত্র। |
পঞ্চাশোর্ধ্ব সানু লামার অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য রকম। জিএনএলএফের আন্দোলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। গোড়া থেকেই মোর্চার আন্দোলনেরও শরিক। তাঁর কথায়, “জনতা-কার্ফুর সময়ে এক দিন অফিসে যেতেই মোর্চা প্রভাবিত সরকারি কর্মীদের সংগঠনের এক নেতা দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে চড়াও হন। আর অফিস যাইনি।” পেমদেনবাবুর বাড়ির ফুলের টব তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। কবিতাদেবীকে ভয় দেখাতে বাড়ির জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে।
থানায় অভিযোগ করেননি কেন? ভুক্তভোগী সরকারি কর্মীরা জানান, মৌখিক ভাবে পুলিশকে জানিয়ে রেখেছেন। কিন্তু লিখিত অভিযোগ করার সাহস পাননি।
পুলিশ সূত্রেও কয়েকটি এলাকা থেকে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেছেন, “মঙ্গলবার রাতে কালিম্পঙ থেকে জনমুক্তি সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সভাপতি খড়্গবিক্রম সুব্বাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক লোককে হুমকি দেওয়া সহ নানা অভিযোগে পুরোনো মামলা রয়েছে।” তাঁর দাবি, কোনও সরকারি কর্মী নিরাপত্তার জন্য আর্জি জানালে ব্যবস্থা করা হবে।
কিন্তু পাহাড়ে পুলিশ ছাড়া সরকারি কর্মীর সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তব্য, “সকলের নিরাপত্তা লাগবে, তা হতে পারে না। ধীরে ধীরে হলেও পাহাড়ের মানুষ প্রতিবাদ করছেন, অভিযোগ জানাচ্ছেন, এটা আশার কথা। তাঁদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েই পুলিশ তৎপর হচ্ছে।”
কিন্তু অগস্টের মাইনে নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে সানুদেবীদের। জুলাইয়ের মাইনে পেয়েছেন দেরিতে। অগস্টে কেউ-ই প্রায় অফিসে যাননি। বিনা কারণে গরহাজির থাকার জন্য তাই এ মাসের মাইনে না-ও মিলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। রোশন বলেছেন, “কেউ ইচ্ছে করে অফিস ফাঁকি দিলে মাইনে কাটার যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু একটা বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল চাকুরিজীবীদের মাইনে কাটার সিদ্ধান্ত পাহাড়বাসী মেনে নেবেন না।” এর পরেই তাঁর সংযোজন, “সরকার যদি মাইনে কাটে তাতে ক্ষতি নেই। কারণ, আমাদের সভাপতি তো বলেই দিয়েছেন, আন্দোলনের জন্য সকলকেই কিছু স্বার্থ ত্যাগ করতে হবে।”
এ দিন দার্জিলিঙের জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। সেখানে সরকারি কর্মীদের মাইনের বিষয়েও কথা হয়েছে। গৌতমবাবুর কথায়, “অফিসে না গেলে সরকারি কর্মীদের প্রথমে কারণ দর্শাতে বলা হবে। সেই কারণ যুক্তিগ্রাহ্য না হলে মাইনে কাটা হবে।” |