জিমের ছাদ ফেটে চুঁইয়ে পড়ছে জল। ফ্লোরের একটা অংশে দিব্য সেটা জমা হচ্ছে। মাঝে মাঝে সাফাইকর্মীর ডাক পড়ে বটে, একটু অসতর্ক হলেই কপালে পপাত ধরণীতল বরাদ্দ!
তিনটে স্ট্রিপের গা দিয়ে ডাঁঁই করা রাজ্যের আবর্জনা। ভাঙা কাঠের আলমারি। চায়ের কাপের প্যাকেট। বিকল এসি। দেওয়ালে নোনা। কোথাও ঝুলকালি। দেওয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে গোটা পাঁচেক বস্তা দাঁড় করানো। কী ওগুলো? উপস্থিত কেউ সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না।
নেটের লাগোয়া পেডেস্টাল ফ্যানগুলো আজও ঘুরছে সিংহবিক্রমে। তার মধ্যেই একমনে নেট সেশন করে চলেছে জুনিয়র বাংলা। মুহূর্তের অসতর্কতা আবারও তো ডেকে আনতে পারে দুর্ঘটনা। বাংলার পূর্বতন কোচ ডব্লিউ ভি রামনের যা হয়েছিল। ভুলবশতঃ আঙুল ঢুকে গিয়েছিল ফ্যানের ভেতর, এবং রক্তাক্ত রামনকে যেতে হয় হাসপাতালে। তবু ফ্যানগুলো নেটের গা ঘেঁষে কেন? অস্পষ্ট উত্তর আসছে গরম। একে ভেন্টিলেশন নেই, তার উপর ফ্যান তুলে দিলে গরমে অস্থিত হতে হবে।
তা হলে গত এক বছরে সিএবি ইন্ডোরে পরিবর্তনটা ঠিক কী? খুব সহজে, শূন্য! পরিবর্তন বলতে শুধু একটা স্ট্রিপ পাল্টানো। পুরনো সরিয়ে নতুন বসানো। ক্রিকেটারদের কথা ধরলে, যেটায় একমাত্র ব্যাটিং প্র্যাক্টিস সম্ভব। বাকি যা ছিল, তাই আছে।
অথচ এক বছর আগে, ঠিক এর কাছাকাছি সময়ে প্রবল ঢক্কানিনাদ সমেত সিএবি কর্তারা জানিয়েছিলেন, আমূল সংস্কার করা হচ্ছে ইন্ডোরের। নতুন ইন্ডোর হবে দোতলা, বসবে অত্যাধুনিক জিম, সুইমিং পুল। বলা হয়েছিল, কাজ সম্পূর্ণ করতে সময় লাগবে এক থেকে দেড় বছর। তার পরই নতুন চেহারায় দেখা যাবে সিএবি ইন্ডোরকে।
বছর ঘুরেছে, সময় পাল্টেছে, কিন্তু ইন্ডোর বদলায়নি। |
বেহাল ইন্ডোরের এক টুকরো। ছবি: উৎপল সরকার |
কেন? দু’টো কারণ শোনা গেল। ইডেনে কোনও কিছু সংস্কার করতে হলে তাতে সেনাবাহিনীর অনুমতি প্রয়োজন হয়। প্রথম দিকে সিএবি তড়িঘড়ি করে আর্কিটেকচার সংস্থা নির্বাচন করে ইন্ডোরের প্ল্যানও তৈরি করে ফেলে। সেই প্ল্যান সেনাবাহিনীর কাছে যায় অনুমোদনের জন্য। এবং এখানেই সমস্যা। সিএবি কর্তাদের বক্তব্য, ছ’মাসের উপর হয়ে গেলেও সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কিছু জানানো হয়নি। কোনও কোনও কর্তা আবার সঙ্গে দ্বিতীয় কারণকেও জুড়ে দিচ্ছেন এর সঙ্গে। বলা হচ্ছে, প্ল্যান অনুমোদন করানোর জন্য যতটা তদ্বির করা উচিত ছিল, ততটা মোটেই হয়নি। ঢিলেমির অভিযোগকে সম্পূর্ণ ওড়ানো যাবে না। আরও বলা হচ্ছে, কোনও সংস্থা শেষ পর্যন্ত ইন্ডোর নির্মাণ করবে, সেটা টেন্ডার ডেকে এর মধ্যে ঠিক করে রাখা যেত। কিন্তু সেটাও হয়নি। যা পরিস্থিতি তাতে প্ল্যানের অনুমোদন এখন চলে এলেও সময়ে কাজ শেষ করা অসম্ভব। কত দিনের মধ্যে কাজ শেষ হতে পারে, তা নিয়েও কোনও সদুত্তর নেই।
কর্তাদের মধ্যে যোগাযোগের অভাবও কিছুটা দেখা যাচ্ছে। ইন্ডোর সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল স্টেডিয়াম কমিটির চেয়ারম্যান চিত্রক মিত্রকে। বুধবার এ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে চিত্রকবাবুর উত্তর, “আমি আর ব্যাপারটা দেখছি না। আর্কিটেকচারাল কোম্পানি ঠিক করে দেওয়ার কথা ছিল। করে দিয়েছি। এর পর বাকিটা জগুদা (জগমোহন ডালমিয়া) দেখছেন।” যা শুনে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, এই মুহূর্তে স্টেডিয়াম কমিটি নেই, ঠিক কথা। সিএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভার পর সমস্ত কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু ৩১ জুলাই পর্যন্ত ইন্ডোরের ব্যাপারটা তো তাঁরই দায়িত্বের মধ্যে ছিল। সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া আবার রাতে বললেন, “বর্ষাটা না গেলে কিছু করাও যাচ্ছে না। তা ছাড়া প্ল্যানের অনুমোদন এখনও সেনাবহিনী দেয়নি। আশা করছি, অক্টোবরের মধ্যে পেয়ে যাব। কাজ কিন্তু খারাপ এগোচ্ছে না। তবে প্ল্যান অনুমোদন পেলেও তার পর সময় লাগবে।”
কিন্তু যত দিন না হচ্ছে, তত দিন ক্রিকেটারদের দুর্ভোগ এ ভাবে চলতেই থাকবে। বৃষ্টি হলে তথৈবচ ইন্ডোরেই দৌড়তে হবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ফ্লোরের জল লোক ডেকে পরিষ্কার করিয়ে জিম করতে হবে লক্ষ্মীরতন শুক্ল-সৌরাশিস লাহিড়িদের। মুখে লক্ষ্মী-সৌরাশিসরা কিছু বলছেন না, বলবেনও না। কিন্তু ইন্ডোর নিয়ে বঙ্গ ক্রিকেটারদের নির্বাক হতাশা বুঝতে বিশেষ বুদ্ধি খরচের বোধহয় দরকার নেই।
|