নরক থেকে স্বর্গ
বদলে যাচ্ছে মনোজদের ইন্ডোর
জানুয়ারি ২০১৩—৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩।
হাতে সময় ঠিক ৮ মাস। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তার মধ্যে লজ্জার গর্ভদ্বারকে রূপান্তরিত করতে হবে গর্বের গজদন্তমিনারে। নরককে নিয়ে যেতে হবে স্বর্গে।
বস্তুটির নাম সিএবি-র পঙ্কজ গুপ্ত ইন্ডোর প্র্যাক্টিস হল। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ইন্ডোর হলগুলির অন্যতম, স্থাপিত হয় যে বছর চরণ সিংহ ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বর্তমান আয়ু ৩২ বছরের সামান্য বেশি। কিন্তু সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি যেমন সারাইয়ের জন্য গড়বড় শুরু করে, আর তত্ত্বাবধানের অভাবে একেবারে শুয়ে পড়ে। এই হলেরও তাই অবস্থা।
দেবীপক্ষের প্রথম দিনের মিষ্টি পুজো পুজো পরিবেশের মধ্যে পুরোদমে ঢুকে যাওয়া সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও ইন্ডোরের জন্য কোনও ভাল বিশেষণ খুঁজে পাননি। “জঘন্য অবস্থা। ওপরটা উঠে গিয়েছে। নীচে সারফেস এবড়ো-খেবড়ো হয়ে গিয়েছে। জিমটা খারাপ,” বলছিলেন সৌরভ।
ইন্ডোর প্র্যাক্টিস হলের নানা সমস্যায় কণ্টকাকীর্ণ সিএবি। সম্প্রতি তারা আরও সমস্যায় পড়ে কোচ ডব্লু ভি রামনের ইন্ডোরের ভেতর হাতে চোট পাওয়া নিয়ে বিরূপ প্রচারে। এই হলের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল জলবায়ুর কারণে, কম অনুশীলনের সুযোগ পাওয়া বর্ষাবিঘ্নিত বাংলার ক্রিকেটারদের অফ সিজনে প্র্যাক্টিস দেবে বলে। ভাবা হয়েছিল, জুলাই, অগস্ট, সেপ্টেম্বরে ভরা বর্ষার মধ্যেও বাংলার ক্রিকেটাররা এখানে নির্বিঘ্নে প্র্যাক্টিস করতে পারবেন। আদতে যা দাঁড়ায়, তা ব্যারেটো সম্পর্কে ময়দানি প্রবচনের সঙ্গে তুলনীয়। মোহনবাগান সমর্থকরা গত বছর অবধি বলে এসেছেন, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ব্যারেটোই ভরসা। তেমন এই ইন্ডোর হল, শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সিএবি-র সমস্যা।
ইন্ডোরের এখন যা অবস্থা। ছবি: উৎপল সরকার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিকাঠামোর তুলনায় এই হল আপাতত ডায়নোসরের যুগে। একটা সময় বলা হচ্ছিল, ফিল্ম স্টারদের ক্রিকেটেও প্র্যাক্টিসের যোগ্য জায়গা নয় এটা। নেট ছিঁড়ে রয়েছে, টার্ফের শোচনীয় অবস্থা, এত এবড়োখেবড়ো যে পায়ে চাপ পড়ে। এখানে প্র্যাক্টিস করলেই মাসল পুল হয়, এসি চলে না। ওপরের ছাদ ফেটে জল পড়ে। এখানে এলে ক্রিকেটারদের দুর্ভোগই দুর্ভোগ।
২০১৩-র সেপ্টেম্বর থেকে স্থানীয় ক্রিকেটারদের এই গজগজানি থেমে যাওয়া উচিত। লজ্জার আস্তরণ সরিয়ে পঙ্কজ গুপ্ত কোচিং সেন্টারকে নিয়ে রূপান্তরিত করার চেষ্টা হচ্ছে ভারতের শ্রেষ্ঠ ইন্ডোর প্র্যাক্টিস হলে। সিএবি যা তৈরি করছে প্রায় ৮ কোটি টাকা খরচ করে। আপাতত ইন্ডোরে যে কাঠামো আছে তাকে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হবে ইডেনে পাক-ভারত ওয়ান ডে ম্যাচের ঠিক পরের দিন, অর্থাৎ নতুন বছর ৬ জানুয়ারির সকালে। প্র্যাক্টিস হল হয়ে যাবে দোতলা এবং সম্পূর্ণ এয়ার কন্ডিশনড। যে প্রাগৈতিহাসিক ব্যাপারগুলোর জন্য এই হল ধিক্কৃত ছিল, সে সব পাল্টে লাগানো হবে আধুনিকতার রং। দোতলা করে দেওয়ায় মোট জায়গা দাঁড়াবে প্রায় ১৯,৫০০ স্কোয়ার ফিট। মনোজ তিওয়ারি, অশোক দিন্দারা এখন যে এলাকায় প্র্যাক্টিস করেন, তা দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। প্র্যাক্টিস উইকেটের সংখ্যা চার থাকলেও সারফেস, তলার টার্ফ, বোলিং মেশিন সব কিছুই নতুন করে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
চিত্রক মিত্রের নেতৃত্বে সিএবি-র স্টেডিয়াম কমিটি অরুণ লাম্বা গোষ্ঠীর কাছ থেকে যে প্রস্তাবিত ডিজাইন পেয়েছে, তাতে ওপরের তলায় রয়েছে প্র্যাক্টিসের ব্যবস্থা, নতুন বোলিং মেশিন, অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রস্তাবিত নতুন ঘাস, যা সিডনি-অ্যাডিলেড প্র্যাক্টিস হলের মতোই মোড়া থাকবে। বোলারের মাসলের ওপর চাপ পড়বে কম। নীচের তলায় থাকবে জিম। সুইমিং পুল। আর সিএবি-র নতুন জাদুঘর। আই এস বিন্দ্রার মোহালি ক্রিকেট সংস্থায় যিনি ইন্ডোর প্র্যাক্টিস হল তৈরি করেছেন, তাঁকেই কিনা জগমোহন ডালমিয়ারা নির্বাচিত করেছেন প্রস্তাবিত প্র্যাক্টিস হলের নতুন নকশা তৈরির জন্য। এর পরের কাজগুলো হল কাঠামো তৈরি, নতুন স্ট্রিপ বসানো, লাইটিং ও এয়ার কন্ডিশনিং ঠিকঠাক করা।

কী কী গণ্ডগোল
ছাদ থেকে জল পড়ে।
• প্র্যাক্টিস সারফেস এবড়ো-খেবড়ো।
• এ সি মেশিন চলে না।
• ছেঁড়া নেট।
যা যা হবে
• দোতলা এবং সম্পূর্ণ এয়ারকন্ডিশন্ড।
• দ্বিগুণ প্র্যাক্টিস এলাকা।
• দোতলায় প্র্যাক্টিসের ব্যবস্থা।
• নতুন বোলিং মেশিন।
• অস্ট্রেলিয়া থেকে ঘাস এনে সেই দেশের
মতোই মোড়া থাকবে প্র্যাক্টিস এলাকা।
• তুন স্ট্রিপ।
• নতুন আলোর ব্যবস্থা।

গত বিশ্বকাপের সময় ইডেনের নতুন স্টেডিয়াম যাঁরা করেছেন সেই সপোরজি-পালোনজিকে এই কাজে যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। সৌরভ বলছিলেন, “সবচেয়ে জোর দেওয়া উচিত সারফেসটা যাতে সমান থাকে। এতে বাউন্সটাও সমান হয়। শটগুলো ঠিকঠাক প্র্যাক্টিস করা যায়। আর একটা জরুরি জিনিস হল লাইটিং ঠিক রাখা। ইন্ডোরে বল দেখার জন্য ঠিকঠাক লাইটিং ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট।”
জাতীয় পর্যায়ের অনেক ক্রিকেটারের মতে, ভারতের শ্রেষ্ঠ ইন্ডোর প্র্যাক্টিস হল এখন ধরমশালায়। সিএবির নকশা তাকে ছাড়িয়ে এক নম্বর ইন্ডোর সেন্টার হওয়া, যা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সংস্থার গর্ব হিসেবেই বিরাজ করতে পারে, সমস্যা হিসেবে নয়।
ঝাঁ চকচকে ইন্ডোর যখন মাথা তুলে দাঁড়াবে তখন কি তার নাম পঙ্কজ গুপ্তর নামেই রাখা হবে? বছর খানেক আগেই প্রশ্ন উঠেছিল, এখানে পঙ্কজ রায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা থাকতে কেন পঙ্কজ গুপ্ত? এ বার কি সেই ভাবনাকে গুরুত্ব দেবেন সিএবি কর্তারা? কোনও উত্তর পাওয়া গেল না। চিত্রক মিত্র বললেন, “যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আট মাসে কাজটা নামাতে হবে, যাতে পরের মরসুমেও বেঙ্গলের ছেলেদের প্র্যাক্টিসের সুযোগ দেওয়া যায়। নতুন হল কার নামে হবে, ভাবার সময় এখন নয়।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.