অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট ড্রাইভ ক্যারুম ডাউনস্ স্ট্রিট থেকে জোস কোনিলে মেল করেছেন, “আমি মেলবোর্ন ভিকট্রির সমর্থক। কার্লোস ভারতে গিয়ে যে ক্লাবের জার্সি পরে খেলছে সেটা কি পাওয়া সম্ভব?”
কোস্টারিকা থেকে মেসেন জর্জ মেল পাঠিয়েছেন, “কার্লোস কি ১৬ নম্বর জার্সি পরেই প্রয়াগে খেলছে? ওর জার্সি পরা একটা ছবি চাই। কী ভাবে পেতে পারি? আমরা টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। ”
মেলবোর্ন ভিকট্রিতে খেলার সময় ধূর্ততার জন্য কার্লোস হার্নান্ডেজের ফ্যানরা তাঁকে ডাকতেন ‘মিস্টার ফক্স’ বলে। তাঁদের প্রিয় ‘শৃগাল’ ভারতে এসে যে ক্লাবে খেলছেন সেই জার্সি কিনতে চেয়ে অসংখ্য ‘ফ্যান মেল’ আসছে। উপচে পড়ছে প্রয়াগ ইউনাইটেড-এর মেল বক্স। অস্ট্রেলিয়ার যে দলে কার্লোস টানা ছ’বছর খেলেছেন, ‘এ’ লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছেন, সেই মেলবোর্ন ভিকট্রিতে ফ্যান ক্লাব আছে কোস্টারিকান বিশ্বকাপারের নামে। যার সদস্য সংখ্যা প্রচুর। অন্য দেশের ক্লাবে গিয়ে তাদের প্রিয় ফুটবলার কেমন খেলছেন, ক’টা গোল করেছেন তা জানতে চেয়েও মেল আসছে।
কার্লোসের জন্য তাঁর ভক্তদের হাহাকারও রয়েছে তাঁর পুরনো ক্লাব মেলবোর্ন ভিকট্রি ‘এ’ লিগে পরপর দুটো ম্যাচ হেরে যাওয়ায়। ফুটবল বিশ্বের প্রথম দশ-পনেরোটা লিগের মধ্যে পড়ে ‘এ’ লিগ অর্থাৎ অস্ট্রেলীয় লিগ। সেখানে এ মরসুমে আপাতত আই লিগের মতোই দু’রাউন্ড খেলা হয়েছে। দুটোই হেরেছে কার্লোসের আগের দল। প্রথম ম্যাচে মেলবোর্ন হার্ট এফসি ২-১ জিতেছে মেলবোর্ন ভিকট্রি-র বিরুদ্ধে। দু’দিন আগে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রিসবেন রো-র কাছে ০-৫ হেরেছে ভিকট্রি। সেই ম্যাচের পর মেলবোর্ন ক্লাবকর্তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান কার্লোস-ভক্তরা। তাঁদের ক্ষিপ্ত প্রশ্ন, কেন ছেড়ে দেওয়া হল কার্লোসকে?
ভারতে বহু বিদেশি ফুটবলার খেলে গিয়েছেন অথবা খেলছেন। কিন্তু কার্লোসের মতো তাঁদের কারও ফুটবল-জীবনপঞ্জি এত ঝকঝকে নয়। তাঁর মতো দেশের জার্সি গায়ে বিশ্বকাপের মূলপর্বে মাঠেও নামেননি কেউ। শুধু তাই নয়, এখন যাঁরা বিদেশি মহাতারকা হিসাবে ভারতে খেলছেন, সেই ওডাফা-ব্যারেটো-টোলগে-র্যান্টি-বেটোদের দেশ থেকে ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা এ ভাবে প্রিয় ফুটবলারের নতুন ক্লাবের জার্সি চেয়েছেন বলেও শোনা যায়নি।
কিন্তু কেন কার্লোসের মতো সুপারস্টার ভারতে খেলতে এলেন? কারণ মেলবোর্ন ভিকট্রিতে এ বার যিনি কোচ হয়ে এসেছেন সেই অ্যাঞ্জা পোস্টাগউলু-র সঙ্গে তাঁর ঝামেলা। তা ছাড়া কার্লোসের ধারণা হয়েছিল, ছ’বছর টানা খেলা সত্ত্বেও তিনি ভিকট্রিতে প্রাপ্য সম্মান পাননি। এই সুযোগগুলোই কাজে লাগান প্রয়াগ কর্তারা। পাশাপাশি বড় অর্থের টোপ তো ছিলই। কিন্তু এখন যে ভাবে কার্লোসের বিদেশি ভক্তরা কলকাতার ক্লাবটির কাছে তাঁর জার্সি কিনতে চাইছেন, নিয়মিত খবরাখবর চাইছেন তাতে বেশ সমস্যায় প্রয়াগ। প্রয়াগ ইউনাইটেড এখনও সে রকম পেশাদার নয়। ক্লাব কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বলছিলেন, “আমরা ঠিক করেছি কিছু জার্সি তৈরি করে ওর ফ্যানদের পাঠাব। তবে দাম নেব না। পাঠানোর খরচটুকু শুধু নেব। সেটা জানানোও হয়েছে কয়েকজন ফ্যানকে। তারা আমাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতে চাইছে।” কার্লোসের অবশ্য এ সবে হেলদোল নেই। তিনি ভক্তদের এই ‘অত্যাচারে’ অভ্যস্ত।
ওডাফা-টোলগের মতো যাতে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা যাতে না হয়, সে জন্য বাইপাসের পাশে একটা বাড়িতেই পাশাপাশি তাঁদের দুই মহাতারকা কার্লোস-র্যান্টিকে রেখেছেন প্রয়াগ কর্তারা। সখ্য বাড়ানোর জন্য। দুই তারকার ছেলেমেয়েরা একই সঙ্গে একই স্কুলে যাচ্ছে। খেলছে। ক্লাব কর্তাদের দাবি, এতে মাঠেও দু’জনের মধ্যে একটা সমঝোতা গড়ে উঠেছে। অসাধারণ পাসার কার্লোসের প্রধান গুণ চল্লিশ-পঞ্চাশ গজের দুর্দান্ত শট বা ফ্রিকিকে গোলও করতে পারেন। বলছিলেন, “কলকাতা লিগে নিজের প্রিয় শটে একটা গোল করেছি। আই লিগে ও রকম গোল করা আমার এখনও বাকি।” এ-ও মনে করেন, আরও একটু ফিট হয়ে গেলে ভারতের দর্শকদের আরও আনন্দ দিতে পারবেন। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তাঁর খেলা দেখার পর ইতিমধ্যেই কার্লোসের তুলনা শুরু হয়েছে মজিদ বাসকারের সঙ্গে। যা শুনে কার্লোস বললেন, “উনি নিশ্চয়ই ভাল ফুটবল খেলে এখানকার দর্শকদের আনন্দ দিতেন।”
যদিও কোস্টারিকার ‘জিদান’ কার্লোসের সবথেকে বড় সমস্যা তাঁর ফিটনেস। কারণ প্রচণ্ড খেতে ভালবাসেন। প্রি-সিজনে যা বরাবর তাঁকে সমস্যায় ফেলেছে। প্রয়াগ কর্তারা অবশ্য তাঁর পিছনে লাগিয়ে দিয়েছেন দলের ব্রাজিলিয়ান ফিজিও গার্সিয়াকে। হাশিখুশি কার্লোস বললেন, “মরসুমটা আর একটু গড়াতে দিন। আশা করি আপনাদের আরও আনন্দ দিতে পারব।” |