কেকেআরের এই নিয়ে দু’টো ম্যাচ দেখে ফেললাম। দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের পর সোমবারের অকল্যান্ড এসেস। আর দু’টো ম্যাচ দেখার পর একটা জিনিস বোধগম্য হচ্ছে না। নাইটদের সেই শরীরীভাষাটা কোথায় গেল? এটা কি সেই টিম যারা আইপিএলের বাঘা-বাঘা দলকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল? আমি তো কিছুতেই মেলাতে পারছি না।
আজকেরটা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা দু’টো ম্যাচ হারল নাইট রাইডার্স। দেবীপক্ষের সূচনাতেই যে এমন ধাক্কা কলকাতার জন্য হাজির হবে, কে জানত! কেন জানি না মনে হচ্ছে কেকেআর সমর্থকদের পুজোটাও খুব ভাল যাবে না। এই অবস্থা থেকে সেমিফাইনালে যাওয়া কঠিন নয়, খুব কঠিন। কোথাকার কোন অকল্যান্ড এসেস, তার কাছে হারতে হল ৭ উইকেটে! সাঁইত্রিশ বছরের আজহার মেহমুদ একাই হারিয়ে দিল কেকেআরকে! বোলিংয়ে তিন-তিনটে উইকেট। ব্যাটিংয়ে ৪২ বলে ৫১ ন:আ:-- এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে?
সোমবার টিভি খুলে যেন মনে হল দিল্লি ম্যাচটাই আমার সামনে আবার কেউ চালিয়ে দিয়েছে। সেই এক স্ট্র্যাটেজিক ভুল। প্ল্যানিংয়ে বিস্তর ভুলভ্রান্তির পুরনো গল্প। এক রকম নেতিয়ে থাকা শরীরী ভাষা। আমার তো মনে হচ্ছে, গম্ভীররা দেশ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরনো জোশটাও দেশে ফেলে এসেছে। যতক্ষণ না নাইটদের শরীরীভাষা বদলাচ্ছে, যতক্ষণ না টিমে আগ্রাসন ঢুকবে, ততক্ষণ জেতা সম্ভব নয়।
|
আরও আশ্চর্য হচ্ছি গৌতম গম্ভীরকে দেখে। এত দিন জানতাম, গৌতম অসম্ভব আগ্রাসী এক ব্যক্তিত্ব। কী ব্যাটিংয়ে, কী অধিনায়কত্বে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখছি, টিমের ভাইরাস গৌতমের মধ্যে ছড়াচ্ছে। নাকি উল্টোটা? জানি না এটা কেন হচ্ছে। ব্যাটে রান পাচ্ছে না। চূড়ান্ত অফ ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কেপটাউনে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ওখানে ভাল হাওয়া দেয়। বল মুভ করে। সেখানে কেন গৌতম উইকেটে আরও সময় দিচ্ছে না? সোমবারও দেখলাম দিল্লি ম্যাচের মতোই ফ্লিক মারতে গিয়ে আউট। একটা কথা পরিষ্কার বলি। কেকেআর অধিনায়কের ব্যাট না চললে কিন্তু নাইটদের পক্ষে ভাল কিছু করা মুশকিল। আইপিএলে নাইট রাইডার্স যে ধুন্ধুমার খেলেছিল, তার পিছনে কিন্তু ছিল গৌতমের অসাধারণ ব্যাটিং।
স্ট্র্যাটেজিতেও হাজার গলদ। কোন যুক্তিতে আজ ব্রেট লিকে বসিয়ে সাকিবকে খেলানো হল? লি বল মুভ করাতে পারে। আর সেটা করতে পারলে কী করা যায়, সেটা তো আজহারই বুঝিয়ে দিল। আরও বোঝাল যে, ক্ষমতা থাকলে সুনীল নারিনকেও অনায়াসে খেলা যায়। এত দিন যাদের দেখলাম, তাদের মধ্যে মেহমুদই নারিনকে সবচেয়ে ভাল সামলেছে। আর সাকিব নিয়ে বলি, ও যতই ক্রিকেটবিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হোক, শেষ পর্যন্ত ও উপমহাদেশের প্লেয়ার। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচের সুইং, বাউন্সে সমস্যায় পড়বেই। টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ভাগ্য সাধারণত ঠিক হয়ে মাঝের ওভারগুলো। অথচ সাত থেকে পনেরো ওভারের মধ্যে উঠল ৩৫ রান, গেল চারটে উইকেট। কালিস (০), মনোজ (০) পরপর আউট। মনোজকেও দেখলাম বুঝল না যে, দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে নেমেই চালানো যায় না। বোলিংয়ের কথা যত কম বলা যায়, তত ভাল। নারিনই দু’টো উইকেট পেয়েছে। আর বালাজি? প্রথম তিন ওভারে দিল ৩৫।
বললাম না, যেন দিল্লি ম্যাচের ‘রিপ্লে’! সবই তো এক। গৌতমের আউট। বালাজির (৪ ওভারে ৩৮) মার খাওয়া। দল নির্বাচনে ভুলভ্রান্তি। কিছুই যখন বদলায়নি, তখন আর ভাগ্য পাল্টাবে কী করে?
|
আজ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে |
সিডনি সিক্সার্স : ইয়র্কশায়ার (কেপটাউন)
চেন্নাই সুপার কিংস : লায়ন্স (কেপটাউন)
|
|
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কেকেআর ১৩৭-৬ (ম্যাকালাম ৪০, বিসলা ৩৮, আজহার ৩-১৬)
অকল্যান্ড ১৩৯-৩ (আজহার ৫১ ন.আ., ভিনসেন্ট ৩০, নারিন ২-২৪)। |